জামাল খাশুগজি: সৌদি আরবকে ট্রাম্পের ‘বেনিফিট অব ডাউট’

সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশুগজির নিখোঁজের ঘটনায় সৌদি আরবের দায় প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে ‘বেনিফিট অব ডাউট’ দেওয়ার কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2018, 06:09 AM
Updated : 20 Oct 2018, 12:24 PM

সৌদি রাজপরিবারের নীতির কট্টর সমালোচক খাশুগজি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসুলেটে প্রবেশ করার পর থেকেই তার আর কোনো খোঁজ নেই। তাকে কনসুলেটের ভেতরই হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলা হয়েছে বলে আঙ্কারা অভিযোগ করলেও রিয়াদ তা উড়িয়ে দিয়েছে।

সাংবাদিক অন্তর্ধানের এ ঘটনায় সৌদি নেতৃত্বের দিকে আঙ্গুল তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস অনেক সদস্য, পশ্চিমা দেশগুলোও এ বিষয়ে জবাব চেয়ে রিয়াদের ওপর চাপ বৃদ্ধি করছে; এ পরিস্থিতির মধ্যেই ট্রাম্প সৌদি আরবকে ‘বেনিফিট অব ডাউট’ দিচ্ছেন বলে খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।

“আমার মনে হয়, কী হয়েছে তা-ই প্রথমে বের করা উচিত আমাদের। আবার আমরা এভাবেও দেখতে পারি, তুমি দোষী যতক্ষণ পর্যন্ত না নির্দোষ প্রমাণিত হও। আমি এটা পছন্দ করি না,” মঙ্গলবার একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

এ ঘটনার সঙ্গে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে কাভানার নিয়োগ নিয়ে যা হয়েছে, তারও তুলনা টানেন ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে কাভানাকে মনোনয়ন দেন ট্রাম্প। কিন্তু কয়েকজন নারী কাভানার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেন। এতে তার নিয়োগ নিয়ে সংশয় দেখা দেয়।

কিন্তু এফবিআই ওই অভিযোগগুলো থেকে কাভানাকে ছাড় দেয় এবং মার্কিন সিনেট তার নিয়োগ অনুমোদন করে।

ওই সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের আগে টুইটারে ট্রাম্প বলেছেন, ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসুলেটের ভেতর কী হয়েছে সে বিষয়ে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান কিছু জানেন না বলে তাকে জানিয়েছেন।

তুর্কি বাগদত্তা হেতিস চেঙ্গিসকে বিয়ে করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড়ে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসুলেটে গিয়েছিলেন সৌদি নাগরিক খাশুগজি।

সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটনে বসবাস করা এ সাংবাদিক ওয়াশিংটন পোস্টে যেসব কলাম লিখতেন; সেখানে সৌদি সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি দেশটিতে সংস্কারেরও আহ্বান ছিল।

“মাত্রই সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে কথা হল, তিনি তাদের ইস্তাম্বুল কনসুলেটে কী হয়েছে সে সম্বন্ধে কিছু জানার কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। এর মধ্যেই তিনি এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের কাজ শুরু করেছেন, যা দ্রুতই আরও বিস্তৃত হবে। শিগগিরই জবাব আসবে,” টুইটারে লিখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

রয়টার্স বলছে, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স কীভাবে খাশুগজির নিখোঁজকাণ্ডের মোকাবিলা করছেন তার ওপরই ভবিষ্যতে পশ্চিমা শক্তি ও রিয়াদের সম্পর্ক নির্ভর করবে।

সৌদি আরব যতই অস্বীকার করুক না কেন, খাশুগজির নিখোঁজের ঘটনায় পশ্চিমারা ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকেই দায়ী ভাবছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা মোহাম্মদ নিজেকে নতুন ও আধুনিক সৌদি আরবের মুখপাত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন; চাইছেন তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সৌদি অর্থনীতিতে বৈচিত্র আনতে। দেশটিতে বেশ কিছু সামাজিক পরিবর্তনও এনেছেন তিনি।

যদিও ইয়েমেনের যুদ্ধ, নারী আন্দোলনকর্মীদের গ্রেপ্তার, কানাডার সঙ্গে কূটনৈতিক বিরোধ, লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরিকে রিয়াদে ‘আটকে রাখা’র ঘটনায় তার এ ভাবমূর্তি পশ্চিমাদের কাছে অনেকটাই ক্ষুণ্ন হয়েছে।

মানবাধিকার বিষয়ে সৌদি আরবের রেকর্ড ভালো না হলেও ট্রাম্প বলেছেন, রিয়াদের কাছে অস্ত্র বিক্রির পথ থেকে সরে আসার ব্যাপারে তার আগ্রহ নেই।

চলতি মাসের ২৩ তারিখ থেকে সৌদি আরবের রাজধানীতে শুরু হতে যাওয়া আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনেও মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মুনচিন অংশ নিতে যাচ্ছেন বলেও ধারণা দিয়েছেন তিনি। এ সবকিছুই সৌদি আরবের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের দহরম-মহরমেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ট্রাম্প অবশ্য জানিয়েছেন, খাশুগজি নিখোঁজ নিয়ে চলা তদন্তের ফল দেখে শুক্রবারের মধ্যে মুনচিন তার রিয়াদ সফর বাতিলও করতে পারেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এর মধ্যেই সৌদি আরব সফর করেছেন। তিনি দেশটির বাদশা সালমান, ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছেন। বুধবার পম্পেওর তুরস্ক সফরেরও কথা রয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসন যতই উদার হোক না কেন, রিপাবলিকান সাংসদদের অনেকেই খাশুগজির নিখোঁজকাণ্ডে সৌদি শীর্ষ নেতৃত্বেরই হাত দেখছেন।

মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম সৌদি ক্রাউন প্রিন্সকে ‘বিষাক্ত চরিত্র’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, “তিনি কখনোই বিশ্ব মঞ্চে বিশ্ব নেতা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারবেন না। মার্কিন সিনেটে আমি প্রায় সবসময়েই তাদের সমর্থন করেছি। কিন্তু এ লোক (সৌদি ক্রাউন প্রিন্স) বিধ্বংসী। তিনি তুরস্কে কনসুলেটের ভেতরে একজনকে মেরে ফেলেছেন এবং প্রত্যাশা করছেন আমি সেটা এড়িয়ে যাবো। আমার মনে হচ্ছে আমি ব্যবহৃত হয়েছি, নির্যাতিত হয়েছি।”

বিরল এক বিবৃতিতে জি-৭ এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও খাশুগজির নিখোঁজের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা রিয়াদকে এ বিষয়ে দ্রুত ‘পূর্ণাঙ্গ, বিশ্বাসযোগ্য ও স্বচ্ছ তদন্ত’ করার আহ্বানও জানিয়েছেন।