খাশুগজি: সৌদি কনসুলেটে ৯ ঘণ্টা তল্লাশি তুরস্ক পুলিশের

তুরস্কের পুলিশ নিখোঁজ সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশুগজির সন্ধানে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসুলেট ভবনের ভেতর তল্লাশি চালিয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Oct 2018, 05:18 AM
Updated : 20 Oct 2018, 12:27 PM

দুই সপ্তাহ আগে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ওই কনসুলেটে প্রবেশের পর থেকেই নিখোঁজ সৌদি রাজপরিবারের নীতির কঠোর সমালোচক খাশুগজি। তাকে কনসুলেটের ভেতরেই হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলা হয়েছে বলে দাবি আঙ্কারার। রিয়াদ অবশ্য শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

তাদের ইস্তাম্বুল কনসুলেটে তল্লাশি চালাতে চেয়ে তুরস্কের করা অনুরোধে সৌদি আরব রাজি হওয়ার পর সেখানে তল্লাশি চালায় তুরস্কের পুলিশ।

সেখানে ৯ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তল্লাশি চালানোর পর অপরাধস্থল তদন্তকারীদের প্রায় ১০ জনের একটি দলকে মঙ্গলবার শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর সৌদি কনসুলেট ত্যাগ করতে দেখেছেন এক প্রত্যক্ষদর্শী, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তদন্তকারীদের চারটি ফরেনসিক গাড়ি কনসুলেট ভবনের বাইরে থেকে মাটির নমুনা ও বাগান থেকে একটি ধাতব দরজা তুলে নেয়; তল্লাশি কাজে পুলিশের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরও অংশ নেয়।

অক্টোবরের ২ তারিখ থেকে নিখোঁজের আগে খাশুগজিকে সর্বশেষ যেখানে দেখা গিয়েছিল, সেই কনসুলেট ভবনের ভেতরে তুরস্ক ও সৌদি আরবের একটি যৌথ তদন্ত দল তল্লাশি চালাবে বলে এর আগে এক তুর্কি কূটনৈতিক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছিল।

আঙ্কারার অভিযোগে, ১৫ সদস্যের একটি সৌদি গুপ্তচর দল ওইদিনই ইস্তাম্বুলে এসে কনসুলেট ভবনের ভেতরে খাশুগজিকে হত্যা ও লাশ গুম শেষে তুরস্ক ছাড়ে। এ সংক্রান্ত প্রমাণ আছে বলেও জানিয়েছে তারা।

কনসুলেটের ভেতর সাংবাদিকের অন্তর্ধান নিয়ে সৌদি আরবের মিত্র পশ্চিমা দেশগুলোও বেশ সোচ্চার।

খাশুগজিকে হত্যা করা হয়েছে, এমনটা নিশ্চিত হলে সৌদি আরবকে ‘কড়া শাস্তি’ দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

চলতি মাসে রিয়াদে হতে যাওয়া একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন থেকে অনেক স্পন্সর প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমও নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে।

‘মরুভূমির দাভোস’ খ্যাত ওই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা অংশগ্রহণ করবেন কি না, তা নিয়েও সন্দেহ আছে বলে জানিয়েছে বেশ কয়েকটি কূটনৈতিক সূত্র।

খাশুগজির বিষয়ে কথা বলতে ট্রাম্প পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে সৌদি আরব পাঠাচ্ছেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। সেখান থেকে তার তুরস্কে যাওয়ারও কথা রয়েছে।

পশ্চিমা মিত্রদের হুঁশিয়ারির জবাবে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রিয়াদ। বলেছে, খাশুগজির অন্তর্ধানকাণ্ডে তাদেরকে দায়ী করে অর্থনৈতিক বা যে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিলে, তারাও পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।

সোমবার সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাশুগজিকে কনসুলেট ভবনের ভেতরে হত্যা করার কথা স্বীকার করার কথা বিবেচনা করছে সৌদি আরব, আর সেক্ষেত্রে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ওপর হত্যার দায় চাপানো হবে।

রাজপরিবারের সমালোচক খাশুগজিকে সৌদি আরবে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশনা ছিল দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তা অমান্য করে কনসুলেটের ভেতরই খাশুগজিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন চালায়, যা শেষ পর্যন্ত ‘ভুলপথে পরিচালিত হয়’ বলে ওই প্রতিবেদনে সৌদি সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে।

ক্রাউন প্রিন্সকে দায় থেকে বাঁচাতেই সৌদি আরব এখন এ পথে হাঁটার কথা ভাবছে বলে ধারণা নিউ ইয়র্ক টাইমসের।

সিএনএনের প্রতিবেদন বিষয়ে সৌদি সরকারের তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও প্রতিবেদনটি শোনার কথা জানিয়েছে। তবে এটি সৌদি আরবের দাপ্তরিক প্রতিবেদন কি না ‘তা কেউ জানে না’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।