নিজের বিয়ের কাগজপত্র যোগাড়ে গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসুলেটে গিয়েছিলেন সৌদি সরকারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত খাশুগজি, এরপর থেকেই তার আর কোনো খোঁজ নেই।
সাংবাদিক খাশুগজিকে সৌদি গুপ্তচররা কনসুলেট ভবনের ভেতরেই হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলেছে বলে ধারণা তুরস্কের কর্তৃপক্ষের; রিয়াদ এ অভিযোগকে ‘মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এ ঘটনায় মিত্র সৌদি আরবের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। খাশুগজির ‘নিখোঁজে’ সৌদি আরব দায়ী হলে তাদেরকে ‘শাস্তি’ দিতে পারেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
খাশুগজির ভাগ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন অসংখ্য গণমাধ্যম ও স্পন্সর প্রতিষ্ঠানও রিয়াদে চলতি মাসে হতে যাওয়া বিনিয়োগ সম্মেলন থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
‘মরুভূমির দাভোস’ খ্যাত এ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মনুচিন ও যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী লিয়াম ফক্স নাও অংশ নিতে পারেন বলে বিবিসিকে বেশ কয়েকটি কূটনীতিক সূত্র জানিয়েছে।
সম্মেলনকে ঘিরে ফক্সের সূচিই এখন পর্যন্ত ঠিক হয়নি বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের এক মুখপাত্র।
খাশুগজি সৌদি গুপ্তচরদের হাতেই মারা পড়েছেন, এমনটা নিশ্চিত হলে সৌদি আরবকে দায়ী করে একটি যৌথ বিবৃতি দেওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান কূটনীতিকদের মধ্যে আলোচনাও চলছে।
সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান তার সংস্কার কার্যক্রমকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরতেই এবারের এ সম্মেলন আয়োজন করছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
মনুচিন ও ফক্স, এদের কেউই সেখানে উপস্থিত না হলে তা সৌদি আরবের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হয়ে দেখা দেবে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের।
নিখোঁজ সাংবাদিকের ভাগ্য নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও।
খাশুগজির কী হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়ার পর এ নিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোর ‘উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া’ দেখানো উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, খাশুগজির মৃত্যুর জন্য যদি সৌদি আরব দায়ী হয় তবে তাদের ‘বড় ধরনের শাস্তি’ দেবে যুক্তরাষ্ট্র।
“খুবই বিরক্ত ও রাগান্বিত হব, যদি এমনটাই (খাশুগজি হত্যা) ঘটে,” তবে রিয়াদের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত রাখার সম্ভাবনাও নাকচ করেছেন এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভুত কাভাসোগলু বলেছেন, নিখোঁজ সাংবাদিকের কী হয়েছে তা জানতে চলমান তদন্তে সৌদি আরব এখনো কোনো ধরনের সহযোগিতা করেনি।
তুরস্কের কর্মকর্তাদের কনসুলেটের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিতেও রিয়াদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এ সংক্রান্ত ‘সম্পূর্ণ সত্য’ উন্মোচিত হোক, সৌদি আরবও এমনটা চায় বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স আবদুলআজিজ বিন সৌদ বিন নায়েফ বিন আবদুলআজিজ।
তুরস্কের দাবি, সৌদি কনসুলেটের ভেতর খাশুগজিকে নির্যাতন এবং হত্যার প্রমাণ তাদের হাতে আছে। সৌদি গুপ্তচরদের ১৫ সদস্যের শক্তিশালী একটি দল খাশুগজি হত্যায় জড়িত বলেও অভিযোগ তাদের।
কর্মকর্তারা বলছেন, তারা কনসুলেটের ভেতরকার কিছু অডিও পেয়েছেন। ওই অডিওতে খাশুগজি এবং আরও কয়েক ব্যক্তিকে আরবিতে কথা বলতে শোনা যায়।
ওয়াশিংটন পোস্টের এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে তুরস্কের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়, অডিওতে কনসুলেট ভবনে প্রবেশের পর খাশুগজিকে মারধর করতে শোনা যায় এবং পরে তাকে হত্যা করার বিষয়টিও বোঝা যায়।
তুরস্কের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে খাশুগজির হাতে থাকা ‘স্মার্ট ওয়াচ’ এ রেকর্ড হওয়া শব্দ নিয়েও তুর্কি কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন বলে জানিয়েছে।