ইরানকে ‘গুরুতর পরিণতির’ হুঁশিয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাষ্ট্র, এর নাগরিক কিংবা মিত্রদের ক্ষতি করলে ইরানি শাসকদের ‘গুরুতর পরিণতি’ ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2018, 07:50 AM
Updated : 26 Sept 2018, 07:50 AM

তেহরান মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ‘বিশৃঙ্খলা, মৃত্যু ও ধ্বংসের’ বীজ বপন করছে, জাতিসংঘে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন অভিযোগের কয়েক ঘণ্টা পর এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বোল্টন, জানিয়েছে বিবিসি।

ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিও তেহরানের সঙ্গে শত্রুতার জন্য মার্কিন প্রশাসনের কড়া সমালোচনা করেছেন।

২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি, এই ছয় বিশ্ব শক্তির সঙ্গে ইরানের করা পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসে দেশটির ওপর সম্প্রতি নতুন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

ট্রাম্পের ধারণা, ইরানের ওপর নতুন অর্থনৈতিক চাপ দেশটিকে নতুন একটি চুক্তির পথে হাঁটতে বাধ্য করবে।

মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে ইরানবিরোধী এক সম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতায় ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘মিথ্যা, প্রতারণা ও শঠতা’ অব্যাহত রাখলে ‘তেহরানের মোল্লাদের খুনি শাসনব্যবস্থাকে’গুরুতর পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।

“যদি তোমরা আমাদের, মিত্রদের কিংবা অংশীদারদের বেলায়ও সীমা লংঘন কর, তাহলে অবশ্যই গুরুতর পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে। আজ আমি বার্তা স্পষ্ট করতে চাই। আমরা নজর রাখছি, আমরা তোমাদের ধরবো,” বলেন বোল্টন। 

তেহরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রাসী হবে বলেও মন্তব্য করেন অতীতে ইরানে সামরিক হস্তক্ষেপের পক্ষে থাকা বোল্টন।

এর আগে জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প ইরান চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে আনার সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান নেন।

“ইরানের নেতারা বিশৃঙ্খলা, মৃত্যু ও ধ্বংসের বীজ বপন করছে। তারা তাদের প্রতিবেশী, সীমানা কিংবা অন্য দেশগুলোর সার্বভৌমত্বের প্রতিও শ্রদ্ধা দেখাচ্ছে না। এর পরিবর্তে তারা দেশগুলোর সম্পদ লুন্ঠন করে নিজেদের সমৃদ্ধ করছে এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ও অন্যান্য এলাকায় দাঙ্গাহাঙ্গামার বিস্তার ঘটাচ্ছে,” বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

একইদিন পরের দিকে সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, হুমকি ও ‘অন্যায্য নিষেধাজ্ঞা’ বন্ধ হলেই কেবল আলোচনা শুরু হতে পারে।

কোনো দেশকেই জোর করে আলোচনার টেবিলে বসানো যায় না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই ‘মানসিক যুদ্ধ’ চাপিয়ে রেখেছেন বলেও অভিযোগ ইরানের; কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে তেহরানের যোগসাজশ নেই, নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ বলেও দাবি তাদের।

ইরান ও পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বুধবারের বৈঠকে ট্রাম্পের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরের অগাস্টে ইরান সরকারের ডলার ক্রয়, স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান পদার্থ কেনাবেচা এবং তেহরানের স্বয়ংক্রিয় মোটরখাত লক্ষ্য করে নতুন নিষেধাজ্ঞা দেয়। মার্কিন প্রশাসনের নতুন নীতির কারণে ইরানি মুদ্রা রিয়ালের দামও কমে গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

নভেম্বরে ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় দফা নিষেধাজ্ঞায় ইরানের তেল ও জাহাজ খাত এবং এর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও ধারণা করছেন পর্যবেক্ষকরা।

যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলেও যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি ও রাশিয়া ২০১৫ সালে তেহরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ  প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামের চুক্তিকে বাঁচাতে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য করতে নতুন একটি বিনিময় পদ্ধতি চালুরও ঘোষণা দিয়েছে তারা।

বিস্তারিত না জানালেও নতুন এ পদ্ধতিতে তেল কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বিশ্ব বাজার ও ডলারের ওপর নির্ভরতা ছাড়াই ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য চালাতে পারবে, আশ্বাস পাঁচ বিশ্বশক্তির।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি ও রাশিয়ার এ পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন।

ইরানের সঙ্গে বৈধভাবে ব্যবসা করা প্রতিষ্ঠানগুলোর সুরক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি আগেই দিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও ইরান নিয়ে ‘আলোচনা ও বহুত্ববাদের’ আহ্বান জানান। তার এ আহ্বান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ্যে করে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।