জাতিসংঘে ট্রাম্প-রুহানির পাল্টাপাল্টি হুমকি

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে একে অপরের প্রতি পাল্টাপাল্টি হুমকি ও উপহাস বিনিময় করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2018, 06:48 AM
Updated : 26 Sept 2018, 06:48 AM

মঙ্গলবারের ভাষণে ট্রাম্প তেহরানের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন, অপরদিকে রুহানি তার আমেরিকান প্রতিপক্ষ ‘বুদ্ধির দৈন্যতায়’ ভুগছেন বলে মত প্রকাশ করেছেন, খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।  

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘের বার্ষিক এ অধিবেশনের ভাষণকে ইরানের ‘দুর্নীতিগ্রস্ত একনায়কতন্ত্রের’ ওপর আক্রমণে, উত্তর কোরিয়ার প্রশংসা করতে এবং বিশ্বায়নের ধারণা প্রত্যাখ্যান করে আমেরিকার স্বার্থ রক্ষাই যে তার লক্ষ্য তা তুলে ধরতে ব্যবহার করেন।

তবে তার ৩৫ মিনিটের ভাষণের বেশিরভাগ অংশজুড়েই ছিল ইরান।দেশটির বিরুদ্ধে পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং সিরিয়া, লেবানন ও ইয়েমেনের ‘জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে’ নানা ধরনের সহায়তা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ‘অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির’ অভিযোগ আছে ওয়াশিংটনের।

জাতিসংঘের সবুজ মার্বেলের হলরুমটিতে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, “ইরানের নেতারা বিশৃঙ্খলা, মৃত্যু ও ধ্বংসের বীজ বপন করছেন। প্রতিবেশী, সীমানা কিংবা জাতিগুলোর সার্বভৌমত্বের অধিকার কোনো কিছুর প্রতিই শ্রদ্ধা নেই তাদের।”

মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তৃতার বেশিরভাগ সময়ই নিরব ছিলেন তার ‘একলা চলো’ নীতিতে অস্বচ্ছন্দ বিশ্ব নেতারা । এই নীতির কারণে বিশ্বজুড়ে ঐতিহ্যবাহী মিত্রদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

অনুচ্চস্বরে ভাষণটি দিলেও এতে ট্রাম্পের ‘আমেরিকা প্রথম’নীতিটিই খুব জোরালোভাবে উঠে এসেছে। এই নীতির আলোকে তিনি ইরান পরমাণু চুক্তি, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে এবং নেটোভুক্ত রাষ্ট্রগুলোকে তাদের সম্মিলিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনায় আরও বেশি ব্যয় না করলে শাস্তি দেওয়ার হুমকি দিয়ে বিশ্বের রাজনৈতিক ভারসাম্য বিপর্যস্ত করে দিয়েছেন। 

তিনি বলেন,“আমেরিকার সার্বভৌমত্বকে আমরা কখনোই অনির্বাচিত, দায়িত্ববোধহীন, বৈশ্বিক আমলাতন্ত্রের কাছে সমর্পণ করতে পারি না। যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের দ্বারাই শাসিত। আমরা বিশ্বায়নের ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছি, দেশপ্রেমের মতবাদকে আলিঙ্গন করেছি।” 

ইরানের বিরুদ্ধে তোপ দাগার পাশাপাশি ভাষণে চীনের বাণিজ্য পদ্ধতিরও কড়া সমালোচনা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট; তবে ভাষণে তিনি একবারের জন্যও সিরিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ায় হস্তক্ষেপ কিংবা মার্কিন নির্বাচনে মস্কোর সঙ্গে সম্ভাব্য আঁতাতের প্রসঙ্গ আনেননি।

বিশ্ব নেতাদের সামনে দেওয়া ভাষণে বেপরোয়া ছিলেন ইরানি প্রেসিডেন্টও।

একই দিন পরের দিকে দেওয়া ভাষণে রুহানি ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ২০১৫ সালে তেহরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার তীব্র সমালোচনা করেন। 

ট্রাম্পের সঙ্গে ‘ছবি তোলার সুযোগের দরকার নেই’ মন্তব্য করে ইরানি প্রেসিডেন্ট বৈশ্বিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও চুক্তি থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সরে যাওয়াকে ‘চরিত্রের দোষ’ হিসেবেও অভিহিত করেন।

“বহুত্ববাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা শক্তিমত্তার নিদর্শন নয়। উল্টো এটা হচ্ছে বুদ্ধির দৈন্যতা। এই বিশ্বাসঘাতকতা মূলত একটি জটিল ও একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত বিশ্বকে বোঝার ক্ষেত্রে অযোগ্যতা,” বলেন রুহানি।

 “ইরান যা বলছে, তা স্পষ্ট: যুদ্ধ নয়, নিষেধাজ্ঞা নয়, হুমকি নয়, নয় টিটকারি; কেবল আইন ও এর বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী পদক্ষেপ,” বলেন রুহানি।