আহভাজ হামলা: উপসাগরীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের দায়ী করছে ইরান

ইরানে সামরিক কুচকাওয়াজে হামলা চালিয়ে ২৫ জনকে হত্যার ঘটনায় ‘যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট’ পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোকে দায়ী করেছেন ইরানি নেতারা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2018, 05:27 AM
Updated : 23 Sept 2018, 05:38 AM

শনিবার দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় শহর আহভাজের ওই হামলার ঘটনায় নিহতদের মধ্যে একটি শিশুসহ ইরানের অভিজাত বিপ্লবী রক্ষী বাহিনীর ১২ সদস্য রয়েছে বলে খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পুতুলগুলো’ ইরানে ‘নিরাপত্তাহীনতা তৈরির’ চেষ্টা করছে।

বিবিসি জানিয়েছে, বিপ্লবী রক্ষী বাহিনী খামেনির কমান্ডের অধীন। হামলায় নিহতদের প্রায় অর্ধেকই এই বাহিনীটির সদস্য। হামলার পেছনে আঞ্চলিক যে দেশগুলো আছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন তাদের নাম নেননি খামেনি।      

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইসলামিক রিপাবলিক নিউজ এজেন্সি (আইআরএনএ) জানিয়েছে, ইরাক যুদ্ধের (১৯৮০-৮৮) বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে খুজেস্তান প্রদেশের আহভাজ শহরে ওই কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়েছিল।

হামলাকারীরা বেসামরিকদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে ও মঞ্চে থাকা সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে বলে ইরানি বার্তা সংস্থা ফার্স জানিয়েছে।

গুলিতে নিহত বেসামরিকদের মধ্যে কুচকাওয়াজ দেখতে আসা শিশু ও নারী রয়েছে বলে জানিয়েছে আইআরএনএ।

ইরানের সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে চার বছর বয়সী একটি মেয়েশিশু ও হুইলচেয়ারে থাকা প্রবীণ সামরিক ব্যক্তি রয়েছেন।

স্থানীয় সাংবাদিক বেহরাদ ঘাসেমি জানিয়েছেন, ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধরে গুলি চলে এবং হামলাকারীদের মধ্যে অন্তত একজন বিপ্লবী রক্ষী বাহিনীর উর্দি পরা ছিল।

“প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম এটা কুচকাওয়াজেরই অংশ, কিন্তু ১০ সেকেন্ড পর (কর্মকর্তাদের) দেহরক্ষীরা গুলি ছুড়তে শুরু করার পর আমরা বুঝতে পারি এটি একটি সন্ত্রাসী হামলা,” বলেছেন তিনি।

চার হামলাকারীর সবাই নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।     

ইরানের সরকারবিরোধী আরব গোষ্ঠী আহভাজ ন্যাশনাল রেজিসট্যান্স ও জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) উভয়েই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তবে কোনো গোষ্ঠীই তাদের দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দাখিল করেনি। 

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ হামলার জন্য ‘বিদেশি সরকারের অর্থপুষ্ট সন্ত্রাসীদের’ দায়ী করেছেন।

তিনি বলেছেন, এ হামলার জন্য ‘ইরান সন্ত্রাসের আঞ্চলিক জামিনদার ও তাদের মার্কিন প্রভুদেরকে দায়ী বলে ধরে নিয়েছে’।

ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইএএনএ জানিয়েছে, ইরান বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ এনে যুক্তরাজ্য, হল্যান্ড ও ডেনমার্ক থেকে নিজেদের কূটনীতিকদের ডেকে পাঠিয়েছে তেহরান।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাহরাম কাসেমি বলেছেন, “এই গোষ্ঠীগুলো ইউরোপে সন্ত্রাসী হামলা না চালানো পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করছে না, এটি গ্রহণযোগ্য নয়।”

আহভাজে হামলার আগে থেকেই ইরানের সংখ্যালঘু আরবদের বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতায় মদত দেওয়ার জন্য আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবকে অভিযুক্ত করে আসছিল ইরান। 

ইরানের সরকার ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা হামলার জন্য পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলো, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের দিকে আঙ্গুল তুলেছে। এই দেশগুলোর সবার সঙ্গেই দীর্ঘদিন ধরে ইরানের উত্তেজনা চলছে।

বিপ্লবী রক্ষী বাহিনীর এক মুখপাত্র দাবি করেছেন, হামলাকারীদের ‘প্রশিক্ষণ ও সংগঠিত করেছে উপসাগরীয় দুটি দেশ’ এবং এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সংযোগ আছে।