এ নিয়ে চলতি বছর দুই নেতার মধ্যে তৃতীয় শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা নাগাদ উত্তরের রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে পৌছালে কিম, তার স্ত্রী রি সোল জু ও উত্তর কোরিয়ার অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানান। এ সময় হাসিমুখে মুনকে জড়িয়ে ধরেন উত্তর কোরিয়ার নেতা।
জড়িয়ে ধরার মুহুর্তে ও একে অপরের সঙ্গে কথা বলার সময়ও দুই প্রেসিডেন্টের মুখে হাসি ছিল।
বিমানবন্দরে স্যুট ও ঐতিহ্যবাহী কোরীয় পোশাক পরা উত্তর কোরিয়ার কয়েকশ নারী-পুরুষ কোরীয় উপদ্বীপ ও উত্তর কোরিয়ার পতাকা নেড়ে, ফুল হাতে দক্ষিণের প্র্রেসিডেন্টকে অভ্যর্থনা জানান।
বিমানবন্দরে ‘পিয়ংইয়ং সফরে সুস্বাগতম প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন’ লেখা ব্যানারও শোভা পাচ্ছিল।
দুপুরের খাবারের পর দুই কোরিয়ার নেতা আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসবেন; রাতের খাবারের আগে সঙ্গীত পরিবেশনার আয়োজন থাকবে বলে দক্ষিণ কোরিয়ার এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স।
মুনের সফরসঙ্গী হিসেবে বেশ কয়েকজন কর্পোরেট কর্তাও পিয়ংইয়ং গেছেন। এদের মধ্যে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের ভাইস চেয়ারম্যান জে ওয়াই লি এবং এসকে ও এলজি গ্রুপের প্রধানরা রয়েছেন।
উত্তরের উপ প্রধানমন্ত্রী রি রিয়ং ন্যামের সঙ্গে তাদের বৈঠকেরও কথা রয়েছে। ন্যাম উত্তর কোরিয়ার অর্থনৈতিক বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত।
উত্তেজনা কমানো ও সশস্ত্র সংঘাত এড়াতে সামরিক চুক্তির পাশাপাশি বুধবার কিম ও মুন একটি যৌথ বিবৃতি দেবেন বলেও আশা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার মুনের উত্তর কোরিয়া ছাড়ার কথা রয়েছে।
দুই কোরিয়ার এবারের শীর্ষ সম্মেলনকে কিম ও ট্রাম্পের মধ্যে সম্ভাব্য নতুন বৈঠকের ‘লিটমাস টেস্ট’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
জুনে সিঙ্গাপুরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠকে কিম পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সে বিষয়ে তিনি আন্তরিক কি না, মুনের সঙ্গে বৈঠকে তার আঁচ পাওয়া যাবে বলেও ধারণা পর্যবেক্ষকদের।
ট্রাম্প উত্তর কোরীয় নেতার সঙ্গে তার আলোচনায় ‘প্রধান মধ্যস্থতাকারী’ হতে মুনকে অনুরোধ করেছেন বলে সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ পর্যন্ত চলা কোরীয় যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণার আগে ওয়াশিংটন পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে পিয়ংইয়ংয়ের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ দেখতে চায়।
“এই সফরের পর যদি উত্তর কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা ফের শুরু হয়, তাহলে এখনকার তুলনায় সফরের তাৎপর্য বাড়বে,” উত্তর কোরিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে বলেছেন মুন।
উত্তর কোরিয়া বলছে, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক আলোচনা থমকে যাওয়ার ব্যর্থতা ‘যুক্তরাষ্ট্রের ওপরও সমানভাবেই বর্তায়’।
“যাচাইযোগ্য ও পুনরায় শুরু করা যাবে না এমন উপায়ে আমাদের পারমাণবিক সক্ষমতা চূর্ণ করার পরই অন্যান্য বিষয়ে আলোচনার ধারণার পেছনে অর্থহীন ও অযৌক্তিত গণ্ডমূর্খতাই কারণ হতে পারে। এমনকী যুদ্ধ শেষের ঘোষণা দিয়ে আস্থা বৃদ্ধির উদ্দেশ্য দেখাতেও তারা অপারগ,” মঙ্গলবার এক সম্পাদকীয়তে বলেছে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম রোডং সিনমুন।
কোরীয় যুদ্ধে বিচ্ছিন্ন পরিবারগুলোর মধ্যে মুনের পরিবারও রয়েছে।