সোভিয়েত আমলের পর সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়ায় রাশিয়া

সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শনে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে রাশিয়া।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2018, 10:28 AM
Updated : 12 Sept 2018, 10:28 AM

মঙ্গলবার চীন সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় শুরু হওয়া এ মহড়ায় দেশটির তিন লাখ সৈন্য অংশ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। 

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্প্রচারিত চিত্রে মহড়ায় অংশ নেওয়া সারি সারি ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান ও যুদ্ধসরঞ্জামের চলাচল দেখা গেছে। দেখা গেছে হেলিকপ্টার ও জঙ্গিবিমানের উড্ডয়নের ছবিও।

এক ভিডিওতে বেরিং প্রণালীর রাশিয়া উপকূলে নোঙর করা বড় একটি যুদ্ধজাহাজ থেকে মটরাইজড আর্কটিক ব্রিগেড ও রুশ নর্দার্ন ফ্লিটের সৈন্যদের নামতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

এসব কর্মকাণ্ডকে মহড়ার প্রথম পর্বের অংশ হিসেবে অভিহিত করেছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এ পর্ব ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে তারা।

মহড়ার প্রথম পর্বে দূরবর্তী অঞ্চলে সৈন্য পাঠানোর ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর প্রস্তুতি, পদাতিক ও নৌ-সেনারা কত দ্রুত একে অপরকে সহায়তা করতে পারে তার পাশাপাশি কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ঝালিয়ে নেওয়া হবে। পরের অংশে থাকবে আক্রমণ ও প্রতিরক্ষার মহড়া।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সার্গেই শোইগু ১৯৮১ সালে সোভিয়েত আমলে আয়োজিত জাপাদ-৮১ মহড়ার পর এবারের মহড়াকেই সবচেয়ে বড় বলে অভিহিত করেছেন।

ভস্তক-২০১৮ নামের এ মহড়াটিতে চীনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে রুশ সৈন্যদের যৌথ মহড়া হওয়ারও কথা রয়েছে।

দেশ দুটি এর আগেও বেশ কয়েকবার যৌথ মহড়ায় অংশ নিলেও সেগুলো এবারের মত এত বিশাল ছিল না বলে খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের।

ভস্তক-২০১৮’র মাধ্যমে দুই দেশ তাদের ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্কের বিষয়ে জানান দিচ্ছে বলেই ধারণা পর্যবেক্ষকদের। রাশিয়া যে তাদের জনবিরল দূরপ্রাচ্যের ভূখণ্ড রক্ষায় প্রস্তুত, মহড়ায় সে বিষয়ে বেইজিংয়ের জন্য অঘোষিত সতর্কবাণী থাকছে বলেও মনে করছেন পশ্চিমা বিশ্লেষকরা।

চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে চীন ও মঙ্গোলিয়ার সৈন্যরা মহড়াটিতে যোগ দিবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সীমান্তের কাছে এ ধরনের বিশাল মহড়াকে যেন হুমকি হিসেবে দেখা না হয় সেজন্যই মস্কো দেশদুটির সেনাবাহিনীকে ভস্তক মহড়ায় যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

হাজারেরও বেশি সামরিক এয়ারক্রাফট, দুটি রুশ নৌবহর, ৩৬ হাজার ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া যান এবং রাশিয়ার বিমানবাহিনীর সব ইউনিট এবারের মহড়ায় অংশ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। মহড়ার শুরুতেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বন্দরনগরী ভ্লাদিভস্তক থেকে ফোনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলেন।

মহড়ায় অংশ নিতে আসা চীনা বিমানবাহিনীর ২৪টি হেলিকপ্টার ও ৬টি জঙ্গিবিমানের রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে অবতরণের ভিডিও প্রকাশ করেছে মস্কো। পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) ৩ হাজার দুইশ সদস্য মহড়ায় যোগ দিচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেছে বেইজিংও।

মস্কোর সঙ্গে পশ্চিমাদের উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে থাকা অবস্থায়ই এ বিশাল মহড়ার আয়োজন করেছে রাশিয়া। এ মহড়া গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে জানিয়েছে পশ্চিমা সামরিক জোট নেটো। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি রাখা যুক্তরাষ্ট্রও মহড়াটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

চলতি মাসেই ভূমধ্যসাগরের পূর্বাঞ্চলে বড় ধরনের নৌ মহড়া করার কথা রয়েছে মস্কোর। ক্রেমলিন একইসঙ্গে সিরিয়ার ইদলিবে আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদের শেষ শক্ত ঘাঁটিতেও ধারাবাহিক বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

যে স্থানে এবারের ভস্টক-২০১৮ মহড়াটি হচ্ছে, সেখান থেকে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর দূরত্ব ৫ হাজার কিলোমিটার। চীন সীমান্তের কাছে অনুষ্ঠিত এ মহড়ার ওপর জাপান, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ারও নজর রাখছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

অনেক পর্যবেক্ষকই এবারের এ মহড়াকে ওয়াশিংটনের প্রতি মস্কোর হুঁশিয়ারি হিসেবে দেখছেন।