ন্যাম হত্যাকাণ্ড: প্রমাণ থাকায় দুই নারীর বিচার চলবে

উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং-উনের সৎভাই কিম জং-ন্যাম হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত দুই নারীর বিরুদ্ধে ‘পর্যাপ্ত প্রমাণ’ পাওয়ায় তাদের বিচার চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মালয়েশীয় আদালতের এক বিচারক।

>>রয়টার্স
Published : 16 August 2018, 02:11 PM
Updated : 16 August 2018, 02:38 PM

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কুয়ালালামপুরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষমান ন্যামকে বিষাক্ত ভিএক্স নার্ভ এজেন্ট দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।

সিতি আইশাহ ও ডোয়ান থি হুয়ংয়ের বিরুদ্ধে ন্যামের মুখে গ্যাস মেখে দেওয়ার অভিযোগ আনা হলেও শুনানিতে দুই নারী নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছিলেন।

সিসিটিভি ফুটেজে দুই নারীকে সন্দেহ করার ‘যথেষ্ট প্রমাণ’ আছে জানিয়ে বৃহস্পতিবার বিচারক মামলাটি এগিয়ে নেওয়ার আদেশ দেন।

দোষ প্রমাণিত হলে ইন্দোনেশীয় ও ভিয়েতনামী এ দুই নারীর মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।

দুইজন এর আগে বলেছিলেন, টেলিভিশনের কৌতুক অনুষ্ঠানের দৃশ্যায়ন হচ্ছে মনে করে ন্যামের মুখে ওই পদার্থ মাখিয়ে দিয়েছিলেন তারা; এটি যে বিষাক্ত গ্যাস তা জানতেন না বলেও দাবি তাদের।

ন্যামকে হত্যার উদ্দেশ্যে ‘এ কাজ করা হয়নি তা সুস্পষ্টভাবে বোঝা যাওয়ায়’ সিতি ও ডোয়ানের বিরুদ্ধে মামলাটি তুলে নেওয়া হবে বলে তাদের আইনজীবীরা আশাও প্রকাশ করেছিলেন।

কিন্তু বৃহস্পতিবারের শুনানিতে বিচারক সে যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা দুই নারীর কর্মকাণ্ডে তারা যে ন্যামকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এসব করেছিলেন সে ধারণা করার যথেষ্ট কারণ আছে। তারা যে জেনেশুনেই একাজ করেছিলেন তার যথেষ্ট প্রমাণও আছে।

ফুটেজে  দুই নারীকে গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরের বহির্গমন এলাকায় ম্যাকাওগামী ফ্লাইটের উদ্দেশ্যে অপেক্ষায় থাকা ন্যামের দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়। এরপর তাদের একজন উনের সৎ ভাইয়ের মুখে কিছু একটা মাখিয়ে দেওয়ার পরপরই মাটিতে লুটিয়ে পড়া ন্যাম চিকিৎসার জন্য সাহায্য চেয়ে চিৎকার করতে থাকেন।

তাৎক্ষণিকভাবে দুই নারী ঘটনাস্থল থেকে সরে যান। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় ন্যামের। তার মুখে মাখিয়ে দেওয়া পদার্থটি যে নিষিদ্ধ নার্ভ এজেন্ট গ্যাস, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তা বেরিয়ে আসে।

পুলিশ পরে ইন্দোনেশীয় নাগরিক সিতি আইশাহ ও ভিয়েতনামী ডোয়ান থি হুয়ংকে আটক করলেও নিজেদের নির্দোষ দাবি করে দুইজনই বলেছিলেন, উত্তর কোরীয়দের চক্রান্তের ফাঁদে পড়েই ন্যামের মুখে ওই পদার্থ মাখান তারা।

টেলিভিশনের একটি কৌতুক অনুষ্ঠানের অংশ মনে করেই দুই নারী ন্যামের মুখে তরল পদার্থটি ঘষে দিয়েছিলেন বলে বিশ্বাস করার কথা জানিয়েছিলেন তাদের আইনজীবীরাও।

উনের সৎ ভাইয়ের মৃত্যুর আগের দিনও বিমানবন্দর, বিভিন্ন হোটেল ও শপিং মলে মানুষজনের মুখে তরল পদার্থ লেপ্টে দেওয়ার কৌতুক শো করতে দুই নারীকে টাকা দেওয়া হয় বলেও দাবি আইনজীবীদের। 

ন্যাম খুনের এ মামলায় সিতি ও ডোয়ান ছাড়াও উত্তর কোরিয়ার চার নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন মালয়েশিয়ার সরকারি কৌঁসুলিরা। হত্যাকাণ্ডের দিনই এ চারজন মালয়েশিয়া ছাড়েন বলে ধারণা তদন্ত কর্মকর্তাদের, এ উত্তর কোরীয়দের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

কিম জং উন উত্তর কোরিয়ার শাসনভার নেওয়ার পর থেকেই পরিবার বিচ্ছিন্ন ন্যাম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বেশিরভাগ সময়ই দেশের বাইরে বিশেষ করে ম্যাকাও, চীন ও সিঙ্গাপুরে ছিলেন।

২০১২ সালে নিজের লেখা বইতে সৎ ভাই উনের নেত্বত্ব দেওয়ার যোগ্যতায় ঘাটতি আছে বলে দাবি করেছিলেন তিনি; বংশ পরিক্রমায় উত্তর কোরিয়ার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখায় নিজের পরিবারেরও কঠোর সমালোচক ছিলেন ন্যাম।

তার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার যোগ আছে বলে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করলেও পিয়ংইয়ং বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।