সাবেক সিআইএ প্রধানের নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিল করলেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র সাবেক প্রধান জন ব্রেনানের নিরাপত্তা ছাড়পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2018, 06:06 AM
Updated : 16 August 2018, 06:15 AM

এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ট্রাম্প সংবেদনশীল তথ্যে তার সমালোচক হিসেবে খ্যাত ব্রেনানের প্রবেশাধিকার রহিত করলেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

বুধবার হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স ট্রাম্পের এক বিবৃতি পাঠের মাধ্যমে সিদ্ধান্তটি ঘোষণা করেন। বিবৃতিতে নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিলের জন্য ব্রেনানের ‘খেয়ালি চরিত্র ও আচরণকে’ দায়ী করেছেন ট্রাম্প। 

ওই বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় ব্রেনান বলেছেন, ‘বাকস্বাধীনতা দমন ও সমালোচকদের শাস্তি’ দিতে ট্রাম্পের বিস্তৃত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই তার নিরাপত্তা ছাড়পত্র প্রত্যাহার করা হয়েছে। 

“খোলাখুলি কথা বলার মূল্য সম্পর্কে পেশাদার গোয়েন্দাসহ সকল মার্কিনিরই প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। আমার নীতি ছাড়পত্রের চেয়েও অনেক বেশি মূল্যবান। আমি হাল ছাড়ছি না,” টুইটারে বলেছেন সিআইএ-র এ সাবেক পরিচালক।

গত মাসে ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প যা করেছেন, তাকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহীতার চেয়ে কম কিছু নয়’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন ব্রেনান।

২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের সঙ্গে রাশিয়ার সম্ভাব্য আঁতাত নিয়ে চলা তদন্ত ‘দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত’ বলেও গত বছর মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

ট্রাম্প অবশ্য শুরু থেকেই রিপাবলিকান শিবিরের সঙ্গে মস্কোর আঁতাতের অভিযোগ অস্বীকার করে এ সংক্রান্ত তদন্তগুলোকে ‘উইচ হান্ট’ হিসেবেও অ্যাখ্যা দিয়ে আসছেন।

“নির্বাহী বিভাগের প্রধান ও কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে রাষ্ট্রের সংবেদনশীল তথ্যের সুরক্ষায় অনন্য সাংবিধানিক দায়িত্ব রয়েছে আমার, যার মধ্যে সেখানে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও আছে। আমি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক পরিচালক জন ব্রেনানের নিরাপত্তা ছাড়পত্র প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি,” সারাহ স্যান্ডার্স ট্রাম্পের যে বিবৃতিটি পড়ে শুনিয়েছেন তাতে এমনটাই বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

“কোনো বিশেষ বিষয়ে মনোযোগসহ উত্তরসূরীদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া ও পেশাদারি সৌজন্যের অংশ হিসেবে ঐতিহাসিকভাবেই গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাবেক প্রধানরা সরকারি চাকরি শেষেও নিরাপত্তা তথ্যে প্রবেশাধিকার পেয়ে আসছিলেন। এর একটিও সংবেদনশীল তথ্যে ব্রেনানের প্রবেশাধিকার অক্ষুণ্ন রাখার ক্ষেত্রকে সমর্থন করে না,” বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ।

কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের সাবেক প্রধান জেমস কোমি, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক পরিচালক জেমস ক্ল্যাপার, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার সাবেক পরিচালক মাইকেল হেইডেন ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল স্যালি ইয়েটসের নিরাপত্তা ছাড়পত্রের বিষয়টিও পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

গত বছর এফবিআই প্রধানের পদ থেকে বরখাস্ত হওয়া কোমি তার স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘এ হায়ার লয়ালিটিতে’-তে ট্রাম্পকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ‘নৈতিকভাবে অযোগ্য’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন। ট্রাম্পকে ‘গুণ্ডাসর্দার’ হিসেবেও চিত্রায়িত করেছিলেন তিনি।

ব্রেনানের নিরাপত্তা ছাড়পত্র প্রত্যাহারের প্রতিক্রিয়ায় কোমি বলেছেন, “আরও একবার এই প্রেসিডেন্ট সমালোচকদের শাস্তি ও তোষণকারীদের পুরস্কারের বার্তাই দিলেন। আরও বড় সমস্যার থেকে ভোটারদের নজর সরাতে নিরাপত্তা ছাড়পত্রের বিষয়টিকে সস্তা রাজনৈতিক খেলায় দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।”

বিবৃতিতে ‘নারীবিদ্বেষী ও সবসময়ই আগে নিজের স্বার্থ দেখা’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ‘প্রতিদিনই দেশের নাগরিকদের সঙ্গে মিথ্যাচার করছেন ও বর্ণবাদ উসকে দিচ্ছেন’ বলেও অভিযোগ কোমির।

জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক পরিচালক জেমস ক্ল্যাপার ও জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার সাবেক পরিচালক মাইকেল হেইডেনও ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে তাদের সমালোচনার তীর অব্যাহত রেখেছেন।

ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ সংযোগ বিষয়ক তদন্তকে যেভাবে পাশ কাটাচ্ছে, তা ‘ওয়াটারগেইট কেলেঙ্কারিকেও ম্লান’ করে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছিলেন ক্ল্যাপার।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের কাছ থেকে তাদের সন্তানকে আলাদা করতে মার্কিন প্রশাসনের কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় জুনে টুইটারে নাৎসী ‘ডেথ ক্যাম্পের’ ছবি পোস্ট করেছিলেন হেইডেন।

ক্যাপশনে লিখেছিলেন- “অন্য যে সরকারগুলো মায়েদের তাদের সন্তানদের কাছ থেকে আলাদা করেছিল।”