এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও শীর্ষ নেতারা বুধবার বসে অস্ত্রবিরতির বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন বলে জানিয়েছেন আফগান তালেবানের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা, খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।
তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশ ও গোষ্ঠী অস্ত্রবিরতিতে রাজি হতে চাপ দিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তালেবান নেতারা।
তালেবানরা রাজি হলে গজনি প্রদেশেও অস্ত্রবিরতির ঘোষণা আসতে পারে। আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এ প্রদেশটির রাজধানীর আশপাশের বেশিরভাগ জেলার নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে বলে দাবি করছে তালেবান।
গজনির সাম্প্রতিক লড়াইয়ে হাজার হাজার হতাহতের মধ্যেই তালেবানদের এ চিন্তা ফের আরেকটি ঈদকে ঘিরে অস্ত্রবিরতির সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করে তুলেছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষরা।
এর আগে জুনে ঈদুল ফিতরে তিন দিনের অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছিল আফগান সরকার ও তালেবান, যাকে ২০১৫ সালে দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর প্রথম কোনো কার্যকর অগ্রগতি হিসেবে দেখা হয়েছিল।
কোরবানির ঈদে অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলে গত মাসে আফগান সরকারও জানিয়েছিল। আগামী সপ্তাহে ঈদের ছুটি শুরু হলেও এখন পর্যন্ত আশরাফ ঘানির সরকার এ বিষয়ে কোনো প্রস্তাব দেয়নি, তালেবানদের পক্ষ থেকেও কিছু জানানো হয়নি।
“দুই মাস আগে আফগানিস্তানের মানুষ শান্তিপূর্ণ উপায়ে ঈদ উদযাপন করতে পেরেছিল, একইভাবে ঈদুল আজহা উদযাপনেও আসছে ঈদে চারদিনের অস্ত্রবিরতি ঘোষণার পরামর্শ দিচ্ছে আমাদের বন্ধুরা,” রয়টার্সকে বলেছেন এক তালেবান কর্মকর্তারা।
‘বন্ধু’ বলতে কাদেরকে বোঝানো হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ঊর্ধ্বতন এ তালেবান নেতা জানিয়েছেন, বিশ্বের বিভিন্ন অংশে তাদের বন্ধু ও মিত্র আছে।
অস্ত্রবিরতির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আফগান তালেবানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হায়বাতুল্লাহ আখুনজাদাই নেবেন বলেও জানিয়েছেন তালেবানের সর্বোচ্চ পরিষদ শুরা কাউন্সিলের এ সদস্য।
“ঈদুল ফিতরের মতো এবারও এ নিয়ে নেতাদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি আছে, তবে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা শেখ হায়বাতুল্লাহ আখুনজাদাই সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি অস্ত্রবিরতির ঘোষণাও দিতে পারেন, যোদ্ধাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশও দিতে পারেন ” বলেছেন তিনি।
আফগান জনগণের মন ও হৃদয় জিততে গত ঈদের মতো এবারও তালেবান নেতৃত্ব অস্ত্রবিরতির সিদ্ধান্ত নেবেন বলে প্রত্যাশা অন্য এক নেতারও। সেবারের অস্ত্রবিরতির সময় সরকারি সৈন্য ও তালেবান যোদ্ধারা নিরস্ত্র অবস্থায় একে অপরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছিল, যা উচ্ছ্বসিত করেছিল সাধারণ আফগান নাগরিকদেরও ।
“এক সপ্তাহ অস্ত্রবিরতির দাবি আছে, যদিও আমাদের নেতারা সম্ভবত চারদিনের বিরতি অনুমোদন করতে যাচ্ছেন, যেন আফগান জনগণ নিরাপদে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কোরবানির পশু ক্রয় ও ঈদুল আজহা উদযাপন করতে পারে,” বলেছেন ওই তালেবান নেতা।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি কোনো শর্ত ছাড়াই তালেবানদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরুর প্রস্তাব দেন। বিদ্রোহী এ গোষ্ঠীটির সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা হবে না, এ অবস্থান থেকে সরে এসে যুক্তরাষ্ট্রও আফগান সরকারের নেতৃত্বে শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে আগ্রহের কথা জানান তিনি।
কাতারে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে দায়িত্বে থাকা শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করার কথা জানিয়েছেন তালেবান কর্মকর্তারাও। মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে আফগান তালেবানদের একটি রাজনৈতিক কার্যালয় আছে।
শান্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে চলতি মাসে আফগান তালেবানদের একটি প্রতিনিধিদল উজবেকিস্তানও সফর করেছে।