যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘পিঠে ছুরি মারার’ অভিযোগ তুরস্কের

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ান অভিযোগ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ‘পিঠে ছুরি মারার’ চেষ্টা নিয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2018, 02:46 PM
Updated : 16 August 2018, 04:19 PM

তুরস্কে আটক একজন মার্কিন যাজককে মুক্তি দিতে আঙ্কারার অস্বীকৃতির জেরে যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বিপরীতে তুরস্কের মুদ্রা লিরার মূল্যমান এবং শেয়ার বাজারে তীব্র ধস নামার পর এরদোয়ান ওই অভিযোগ করলেন।

যাজকের মুক্তি নিয়ে কূটনৈতিক বিরোধের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তুরস্কের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর দ্বিগুণ শুল্ক আরোপ করলে গত শুক্রবার লিরার মান আরো পড়ে যায়।

তুরস্কের কেন্দীয় ব্যাংক বাজারের অস্থিতিশীল অবস্থা সামাল দিতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েও কার্যত ব্যর্থ হয়েছে।

তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় এক সংবাদ সম্মেলনে এরদোয়ান বলেছেন, “একদিকে আপনারা কৌশলগত অংশীদার হিসাবে কাজ করছেন। কিন্তু অন্যদিকে আপনারা সেই মিত্রর পায়েই বুলেট ছুড়ে মারছেন।”

“আমরা একসঙ্গে নেটো জোটে কাজ করছি। আর তারপর আপনারাই আপনাদের কৌশলগত অংশীদারের পিঠে ছুরি মারার চেষ্টা করছেন।”

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের তিক্ততা বাড়তে থাকায় তুরস্কের মুদ্রাবাজারে যে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে তা দুর্দশায় থাকা দেশটির অর্থনীতিকে আরও অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে শঙ্কিত বিশেষজ্ঞরা।

ক্রমশ বাড়তে থাকা মুদ্রাস্ফ্রীতি এবং ঋণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে হিমশিম খাচ্ছে তুরস্ক সরকার। লিরার সর্বশেষ দরপতনের কারণ হিসেবে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থাকে নয় বরং বিদেশি ‘চক্রান্তকে’ দায়ী করেছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।

লিরার দরপতন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানিমূলক মন্তব্য করার অভিযোগে ৩৪৬টি আইডি’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও ঘোষণা দিয়েছে তুর্কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের বিরোধ কেন?

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের মূল বিরোধটা বেধেছে আমেরিকান ধর্মযাজক এন্ড্রু ব্রানসনকে নিয়ে। দুই বছর ধরে আটক রাখা ব্রানসনকে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি মেনে মুক্তি দিতে চাইছে না তুরস্ক।

ব্রানসনের সঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষিত কুর্দিস্থান ওয়ার্কাস পার্টি (পিকেকে) এবং ফেতুল্লাহ গুলেন পন্থি সংগঠনের যোগাযোগ থাকার অভিযোগ করেছে তুরস্ক। কারণ, এ সংগঠনটি ২০১৬ সালে তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টার হোতা বলে আঙ্কারা মনে করে।

ব্রানসনকে তুরস্ক দীর্ঘ ২১ মাস কারান্তরীণ রাখার পর জুলাই থেকে গৃহবন্দি করে রেখেছে। তার মুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্র তুরস্ককে চাপ দিলেও দেশটি তা মানেনি।

পেনসিলভানিয়ায় বাস করা ফেতুল্লাহ গুলেনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পদক্ষেপ নেয়নি অভিযোগে তুরস্ক ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৬ সালের অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার নিন্দা জানাতেও ব্যর্থ হয়েছে বলে তুরস্ক অভিযোগ করেছে।

এ বিষয়টি ছাড়াও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইরত কুর্দি বিদ্রোহী গ্রুপের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও দু’দেশের মধ্যে বিরোধের আরেকটি কারণ।  কুর্দিদের প্রতি মার্কিন সমর্থন তুরস্কের পছন্দ নয়- কারণ, দেশটি নিজেই তাদের ভুখন্ডে কুর্দি বিদ্রোহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।

তাছাড়া, আরো একটি কারণ হচ্ছে রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। নেটো জোটের সদস্য হয়েও তুরস্ক ঘনিষ্ঠ হচ্ছে রাশিয়ার সঙ্গে, যেখানে রাশিয়া নেটোর এক নম্বর হুমকি হিসাবে বিববেচিত। নেটোর যে কোনো সদস্য আক্রান্ত হলে জোট তাকে সুরক্ষা দিতে বাধ্য।