বালাইনাশক থেকে ক্যান্সার: মনসান্টোকে ২৯ কোটি ডলার জরিমানা

বহুজাতিক এগ্রো কেমিকেল কোম্পানি মনসান্টোর বালাইনাশক ব্যবহারের কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে ২৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2018, 04:51 AM
Updated : 11 August 2018, 05:39 AM

বিবিসির খবরে বলা হয়, বালাইনাশ ও আগাছানাশকে ব্যবহৃত গ্লাইফসেটের কারণে ক্যান্সার ঝুঁকির বিষয়টি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হলেও এই প্রথম কোনো জরিমানা বা ক্ষতিপূরণের রায় এল।  

ক্যালিফোর্নিয়ার আদালত বলেছে, মনসান্টোর বালাইনাশক রাউন্ডআপ ও রেঞ্জারপ্রোতে থাকা গ্লাইফসেট যে ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করে তা জানার পরও তারা এ বিষয়ে ক্রেতাদের সতর্ক না করায় ওই ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে।

মনসান্টোর বলে আসছে, ওই ব্যক্তির ক্যান্সারের জন্য বালাইনাশকের গ্লাইফসেট দায়ী নয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ইংগিতও তারা দিয়েছে। 

স্যান ফ্রান্সিসকোতে শুক্রবার ওই রায় ঘোষণার পর মনসান্টোর ভাইস প্রেসিডেন্ট স্কট পার্টরিজ সাংবাদিকদের বলেন, “জুরি ভুল বুঝেছেন।”

বিবিসি লিখেছে, এ মামলার বাদী ডোয়াইন জনসনের মত আরও অন্তত পাঁচ হাজার মানুষের করা একই ধরনের মামলা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন। ক্যালিফোর্নিয়ার রায় মনসান্টোর বিরুদ্ধে যাওয়ায় অন্য মামলাগুলোতেও একই ধরনের ফল দেখা যেতে পারে।   

ডোয়াইন জনসন ক্যালিফোর্নিয়ার একটি স্কুলে গ্রাউন্ডস্কিপার হিসেবে কাজ করতেন। ওই স্কুলের মাঠ পরিচর্যা করাই ছিল তার কাজ। আগাছা দমন করতে তিনি ব্যবহার করতেন মনসান্টোর রেঞ্জারপ্রো। ২০১৪ সালে তার ক্যান্সার ধরা পড়ে। 

গ্লাইফসেট বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত আগাছানাশক, যদিও এটা জনস্বাস্থ্যের জন কতটা নিরাপদা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

২০১৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যান্সার এজেন্সির এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্লাইফসেট মানবদেহে ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সংরক্ষণ দপ্তর (ইপিএ) বলে আসছে, ‘সাবধানে’ ব্যবহার করলে এর থেকে ক্ষতি হওয়ার কারণ নেই।

ইপিএ কী করে এত তাড়াতাড়ি এ ধরনের সিদ্ধান্তে পৌঁছাল, তা নিয়ে সন্দেহের কথাও বলছেন অনেকেই। সরকারি কর্মকর্তা ও মনসান্টোর মধ্যে কোনো ধরনের আঁতাত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে বিচারবিভাগকে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন ডেমোক্রেটদের কেউ কেউ।

ইউরোপেও গ্লাইফসেটের ব্যবহার নিয়ে তুমুল আইনী লড়াই চলছে। বেশকিছু আইনপ্রণেতার বাধা সত্ত্বেও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এটি নিষিদ্ধের চেষ্টা চালাচ্ছেন। যদিও ইউরোপীয় কমিশন সম্প্রতি এ বালাইনাশকটিকে আরও পাঁচ বছরের জন্য লাইসেন্স দিয়েছে। 

ক্যালিফোর্নিয়ায় ৮ সপ্তাহের আইনী লড়াই শেষে জুরিদের রায় জনসনের পক্ষে আসে বলে জানায় বিবিসি। রায়ে মনসান্টোর পণ্যের বিরুদ্ধে  যে প্রমাণ পাওয়া গেছে তাকে ‘অপ্রতিরোধ্য’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন জনসনের আইনজীবীও।

“যখন আপনি সঠিক, তখন জয়টা সহজ,” আদালতের এ রায়কে ভবিষ্যৎ আইনী লড়াইগুলোর ক্ষেত্রে ‘বর্শার অগ্রভাগ’ অ্যাখ্যায়িত করে বলেন ব্রেন্ট উইসনার।

পরে দেওয়া এক বিবৃতিতে বহুজাতিক এগ্রি কেমিকেল কোম্পানি মনসান্টো জানায়, তারা জনসন ও তার পরিবারের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও ‘৪০ বছর ধরে নিরাপদ ব্যবহারের জন্য খ্যাত’ বালাইনাশকের পক্ষে আইনী লড়াই অব্যাহত রাখবে।

“আজকের এ রায়ে ৮০০-রও বেশি বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও পর্যালোচনাকে বদলাবে না, বদলাবে না যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সংরক্ষণ দপ্তর, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ ও বিশ্বজুড়ে অন্যান্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তও। গ্লাইফসেট ক্যান্সারের জন্য দায়ী নয়, এটি যে জনসনের ক্যান্সারের জন্যও দায়ী নয়, সে বিষয়ে সমর্থন জানিয়ে যাবো আমরা,” বলে মনসান্টো।