কারচুপির অভিযোগ অস্বীকার করে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন বলেছে, যান্ত্রিক জটিলতার কারণে ফল প্রকাশ বিলম্বিত হচ্ছে।
বুধবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোট গণনা শুরু হয়ে রাতভর গণনা চললেও বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত মাত্র ৪৭ শতাংশ ভোট গণনা হয়। এতে পিএমএল-এন এবং পিপিপি কে পেছনে ফেলে এগিয়ে ছিল ইমরান খানের পিটিআই।
আর এখন পর্যন্ত গণনা হওয়া ৪৯ শতাংশ ভোটেও দেখা যাচ্ছে, পার্লামেন্টের ২৭২টি আসনের মধ্যে ইমরান খানের পিটিআই ১১৯ আসনে এগিয়ে আছে। নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন এগিয়ে আছে ৬১ আসনে। আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়ালের নেতৃত্বাধীন পিপিপি এগিয়ে ৪০ আসনে।
সরকার গঠন করতে হলে যে কোনো দলকে ১৩৭টি আসনে জিততে হবে। কোনো দল সেই আসন না পেলে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের দিকে যেতে পারে পাকিস্তান।
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে সরাসরি নির্বাচনের মোট আসন সংখ্যা ২৭৪টি হলেও দুটি আসনে ভোট স্থগিত হওয়ায় ভোট দেন ২৭২ আসনের ভোটাররা। নারী ও সংখ্যালঘুদের জন্য নির্ধারিত বাকি ৭০টি আসন বিজয়ী দলগুলোর মধ্যে সংখ্যানুপাতে বণ্টন হবে।
ব্যাপক আলোচনার পাশাপাশি উদ্বেগের মধ্যেই বুধবার পাকিস্তানজুড়ে ভোটগ্রহণ হয়। ৮ হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্রে ১০ কোটি ৬০ লাখ ভোটারের ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা হলেও ভোটের হার বেশ কম ছিল বলেই পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমের খবর।
পাকিস্তানের ৭১ বছরের ইতিহাসে এবার দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার আরেকটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে যাচ্ছে। অবশ্য দেশটিতে বারবার রাষ্ট্র পরিচালনায় সেনা হস্তক্ষেপের ইতিহাস থাকায় ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন যেমন স্বস্তিতে দেশ পরিচালনা করতে পারেনি; তেমন পিপিপির হয়ে বেনজির ভুট্টোর সরকার পরিচালনাও নিষ্কণ্টক ছিল না।
অভিযোগ উঠেছে, এবার ইমরানকে পেছন থেকে মদদ দিচ্ছে সেনাবাহিনী; আর তাই পরিকল্পিতভাবে হয়রানি করা হয়েছে নওয়াজের পরিবারকে।
এই অভিযোগের সমর্থন পাওয়া গেছে পাকিস্তান হাই কোর্টের এক বিচারকের কথায়; তিনি গত রোববার বলেছিলেন, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বিচার বিভাগের কাজেও হস্তক্ষেপ করছে।
বুধবার ভোটগ্রহণ শেষে ফল ঘোষণা শুরুর আগেই কারচুপির অভিযোগ তোলেন নওয়াজ শরিফের দলের মুখপাত্র মরিয়ম আওরঙ্গজেব।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র থেকে তাদের পোলিং এজেন্টকে বের করে দিয়ে ভোট গণনা চলছে। অর্থাৎ সাজানো ফল ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে।
একই অভিযোগ তোলেন পিপিপি নেতা মওলা বক্স চান্দিও এবং আরও কয়েকটি দলের নেতা। বুধবার রাত ২টার মধ্যে ফল প্রকাশ হতে পারে বলে ধারণা করা হলেও বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত অর্ধেক আসনেরও ফল না আসায় তাদের সন্দেহ আরও জোরালো হয়েছে।
“এখানে কোনো ষড়যন্ত্র নেই। ভোটের ফল দেরি করে প্রকাশের জন্য কোনো চাপও নেই। কেবল ভোটের ফল প্রচার সিস্টেম বিকল হয়েছে।”
ফল কখন প্রকাশ করা হবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত কিছু তিনি বলতে পারেননি। কেবল বলেছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফল প্রকাশ করা হবে।
অবশ্য পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে পিটিআইর অফিসগুলোতে সমর্থকদের উৎসব শুরু হয়ে গেছে বুধবার মধ্যরাত থেকেই। ওই সময় পিটিআইর অফিসিয়াল ফেইসবুক পাতায় ইমরান খানকে ‘উজিরে আজম’ হিসেবে অভিনন্দন জানিয়ে পোস্টও দিয়ে দেওয়া হয়।
দুই যুগ আগে খাদের কিনারা থেকে পাকিস্তানকে তুলে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে শিরোপা জিতিয়েছিলেন ইমরান খান। এবার ভোটের লড়াইয়ে জিতে তিনি দেশের মসনদে বসার অপেক্ষায়।
ভোটের প্রাথমিক ফল প্রত্যাখ্যান করে পাকিস্তান মুসলিম লীগ নওয়াজ (পিএমএল-এন) একে বর্ণনা করেছে ‘গণতন্ত্রের ওপর আঘাত’ হিসেবে।
পিএমএল-এন ভোট প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। একই অভিযোগ তুলেছেন পাকিস্তান পিপলস পার্টি প্রার্থী বিলাওয়াল ভুট্টোও।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার সরদার মোহাম্মদ রাজা এসব অভিযোগের জবাবে সাফাই দিয়ে বলেছেন “নির্বাচন শতভাগই স্বচ্ছ এবং সুষ্ঠু হয়েছে।”