সিরিয়ার হোয়াইট হেলমেটস স্বেচ্ছাসেবকদের সরিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েল

দক্ষিণ-পশ্চিম সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রগুলো থেকে বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী হোয়াইট হেলমেটস এর স্বেচ্ছাসেবকদের সরিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েল। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2018, 10:00 AM
Updated : 22 July 2018, 10:01 AM

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর অনুরোধে তারা এ কাজ করছে বলে রোববার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলো (আইডিএফ) জানিয়েছে, খবর বিবিসির।

ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো বলছে, তেল আবিব তাদের দখলে থাকা গোলান মালভূমি দিয়ে এক রাতের মধ্যেই হোয়াইট হেলমেটসের সদস্য ও তাদের পরিবার পরিজন মিলিয়ে প্রায় ৮০০ জনকে সরিয়ে নিয়েছে।

সিরিয়ার যুদ্ধ ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে আটকে পড়া সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে ২০১৩ সাল থেকে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল হোয়াইট হেলমেটস। বেসামরিক রক্ষা বাহিনী হিসেবে কাজ করা গোষ্ঠীটি নিজেদেরকে স্বেচ্ছাসেবী ও নির্দলীয় হিসেবে পরিচয় দিলেও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ও তার মিত্র রাশিয়া সংগঠনটির বিরুদ্ধে জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা এবং বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করার অভিযোগ করে আসছিল।

সরিয়ে নেওয়া হোয়াইট হেলমেটসের সদস্যরা সিরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে কাজ করছিল এবং সরকারি বাহিনীর আক্রমণের ফাঁদে আটকা পড়েছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি। 

বেসরকারি সংগঠনটির সদস্য ও তাদের পরিবার পরিজনের জীবন ‘ঝুঁকির মুখে থাকায় মানবিক এ উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে’ বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী।

বেসামরিক নাগরিকদের ‘ইসরায়েলের ভেতর দিয়ে পার্শ্ববর্তী এক দেশে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে’ বলে দাবি করেছে তারা। 

সিরিয়ায় সাত বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে ইসরায়েল সরাসরি জড়িত না হলেও সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে কার্যত কয়েক দশক ধরেই যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে।

হোয়াইট হেলমেটসের সদস্যদের সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টতা থাকলেও ‘সিরীয় সংঘাতে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে ইসরায়েল অবিচল আছে’ বলেও জানিয়েছে আইডিএফ।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এমানুয়েল নাশোন পরে হোয়াইট হেলমেটসের সদস্য ও তাদের পরিবারগুলোকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও স্বেচ্ছাসেবীদের কোন দেশ গ্রহণ করেছে সে বিষয়ে মুখ খোলেননি। আইডিএফও এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।

জর্ডানের সরকার পরে ৮০০ সিরীয় নাগরিককে তাদের ভূখণ্ডের ভেতর দিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোতে সরিয়ে নেওয়ার একটি কার্যক্রমে জাতিসংঘের অনুমতি দেওয়ার খবর নিশ্চিত করে।

“(হোয়াইট হেলমেটসের সদস্য ও পরিবারবর্গের) ‘জীবনের ঝুঁকি থাকায়’ ব্রিটেন, জার্মানি ও কানাডা স্বল্প সময়ের মধ্যে তাদের পুনর্বাসনে উদ্যোগ গ্রহণ করতে আইনত বাধ্য,” বলেছে জর্ডান।

সরিয়ে নেওয়া হোয়েইট হেলমেটদের জর্ডানের একটি ‘সংরক্ষিত এলাকায়’ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

২০১৬ সালে নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনীত হোয়াইট হেলমেটসের হাজার তিনেক স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে প্রায় ২০০ জন যুদ্ধে নিহত হয়েছেন।

আটকে পড়া সাধারণ নাগরিকদের বাঁচানোর চেষ্টার পাশাপাশি যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন মেরামতেও সংগঠনটি কাজ করে বলে তাদের ওয়েসবাইটে জানানো হয়েছে।

চলতি বছরের জুন থেকে দেরা ও কুনেইত্রার বিদ্রোহী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সিরীয় বাহিনীর জোর অভিযানের মধ্যেই দক্ষিণ-পশ্চিমের যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পশ্চিমা অর্থায়নপুষ্ট বেসরকারি এ সংগঠনের সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হল।

যুদ্ধের পাশাপাশি সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ও তাদের রুশ মিত্ররা বিভিন্ন অঞ্চলের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আপোষরফামূলক অনেকগুলো চুক্তিও করেছে। এসব চুক্তি অনুযায়ী সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সরকারবিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলে বিদ্রোহীদের নিরাপদে স্থানান্তরের শর্তে তাদের দখলে থাকা এলাকাগুলোর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বুঝে নেয় সরকার সমর্থকরা।   

বৃহস্পতিবার হওয়া সর্বশেষ চুক্তির পরও গোলান মালভূমির সীমান্ত লাগোয়া কুনেইত্রা প্রদেশ থেকে বিদ্রোহী যোদ্ধা ও বেসামরিক নাগরিকদের সরে যেতে দেখা গেছে।