পাকিস্তানে নির্বাচন: কে আসছেন ক্ষমতায়?

আগামী ২৫ জুলাই পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন। নতুন কোনো মুখ ক্ষমতায় আসার মধ্য দিয়ে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশটির রাজনীতিতে চলা নানা নাটকীয়তার অবসান কী হতে যাচ্ছে?

নিউজডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2018, 10:57 AM
Updated : 21 July 2018, 03:41 PM

নাকি দেশটির প্রভাবশালী সেনাবাহিনীই আড়ালে থেকে কলকাঠি নাড়া অব্যাহত রাখবে? প্রশ্নের মুখে পড়বে নির্বাচনের স্বচ্ছতা।

দুর্নীতির অভিযোগে রাজনীতিতে আজীবনের জন্য অযোগ্য ঘোষিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। তারপরও দল ও সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে কারাদণ্ড মাথায় নিয়েই দেশে ফিরেছেন। বর্তমানে ইসলামাবাদের আদিয়ালা কারাগারে আছেন তিনি।

২০১৫ সালে ফাঁস হওয়া পানামা পেপার্সে যুক্তরাজ্যে নওয়াজ শরিফের পরিবারের বিপুল সম্পদের বিষয়টি সামনে আসে।

সম্পদের বিবরণীতে ওই তথ্য গোপন করায় গতবছর জুলাই মাসে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ওই পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করলে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন।

এ বছর এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্ট নওয়াজকে আজীবন রাষ্ট্রীয় পদে অযোগ্য ঘোষণা করলে তার ক্ষমতায় ফেরার পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

লন্ডনে চারটি বিলাসবহুল বাড়ির মালিকানা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে গত ৬ জুলাই আদালত নওয়াজকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়।

নওয়াজ রাজনীতিতে নিষিদ্ধ হওয়ায় তার দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রেসিডেন্ট হন তার ভাই শাহবাজ নওয়াজ।

শাহবাজের নেতৃত্বেই নির্বাচনে জোর প্রচার চালাচ্ছে পিএমএল-এন। যদিও শাহবাজসহ দলটির প্রভাবশালী অধিকাংশ নেতার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির তদন্ত করছে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টাবিলিটি ব্যুর (এনএবি)।

শাহবাজের সঙ্গে নির্বাচনী দৌড়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে আছেন সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান।

পিএমএল-এন এর সঙ্গে সেনাবাহিনীর চলমান বৈরিতা ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) পক্ষে যেতে পারে বলে ধারণা অনেক রাজনীতি বিশ্লেষকের।

যদিও ইমরানের দ্বিতীয় স্ত্রী রেহাম খানের সম্প্রতি প্রকাশিত আত্মজীবনীমূলক বইতে তার চারিত্রিক বিভিন্ন ত্রুটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পিটিআই নেতাদের দাবি, ইমরানের সম্মানহানি করতে পিএমএল-এন অর্থের বিনিময়ে রেহামকে দিয়ে ওই বই লিখিয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলওয়াল ভুট্টো জারদারিও (২৯) নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। পারিবারিক ইতিহাস এবং বেনজিরের হত্যাকাণ্ডের কারণে জনগণের সহমর্মিতা ও সমর্থন তার পক্ষে আছে।

সবগুলো জনমত জরিপই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিয়েছে। এমন কী জোট সরকার গঠন করতেও হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিলওয়ালের ছোট্ট দলই হিসাব পাল্টে দিতে পারে।

পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)  সেনাবাহিনীকে ভোটকেন্দ্রের আশেপাশে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ায় নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সাবেক সিনেট প্রধান ও পিপিপি রেজা রব্বানি ইসিপির এ সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

তিনি বলেন, “শুরুতে ইসিপি বলেছিল তারা ভোটকেন্দ্রের বাইরে সেনা মোতায়েন করবে। এখন তারা ভোটকেন্দ্রের ভেতরেও সেনা মোতায়েনের কথা বলছে। কেন্দ্রের ভেতর তাদের আনার কারণ কি? এর জবাব ইসিপিকে দিতেই হবে। কেন্দ্রের ভেতরে সেনাদের কাজ কি হবে সেটাও তাদের পরিষ্কার করে বলতে হবে।”

নির্বাচনের আগে সংবাদমাধ্যমের উপর আরোপ করা বিধিনিষেধ নিয়েও তিনি সিনেটের মনযোগ আকর্ষণ করেছেন।

নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে দুর্নীতি ও আদালতের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগে পিএমএল-এন নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও হয়রানির সমালোচনাও করেছেন তিনি।

বলেন, “ইসিপি কী এগুলো দেখতে পাচ্ছে না? তারা কি তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এ নিয়ে প্রশ্ন করেছে?”

নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের ডেকে পাঠানো এবং তাদের নির্বাচনী প্রচার কাছে বিঘ্ন সৃষ্টি করায় এনএবির সমালোচনাও করেছেন তিনি।

“প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার ছেড়ে এনএবি কার্যালয়ে এসে অপেক্ষা করতে বলা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন এটা চুপচাপ দেখছে..যা রীতিমত অপরাধ। যে অবস্থা চলছে তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে পক্ষপাতদুষ্ট তা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। তত্ত্ববধায়ক সরকার এরকম কথা বলছে, ইসিপি অন্যরকম। যা আসন্ন নির্বাচনের স্বচ্ছতাকে বড় প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।”