গুহা থেকে ফিরে নিজেদের বাড়িতে প্রথম রাত কাটালো থাই কিশোররা

প্রায় ১৭ দিন জলমগ্ন গুহায় থাকার আরও এক সপ্তাহ পর প্রথমবারের মতো নিজেদের বাড়িতে ঘুম থেকে জেগে উঠার সুযোগ পেল থাই কিশোররা। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 July 2018, 09:50 AM
Updated : 19 July 2018, 09:50 AM

বৃহস্পতিবার ভোরে ওঠার পর এদের অনেকেই স্থানীয় মন্দিরে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

জলমগ্ন থাম লুয়াং গুহা থেকে উদ্ধার পাওয়া ১২ কিশোর ও তাদের ২৫ বছর বয়সী ফুটবল কোচ বুধবার উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ চিয়াং রাইয়ের হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে আসে।

দেশজুড়ে সরাসরি সম্প্রচারিত ওই সংবাদ সম্মেলনে ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সী কিশোরদের হাসতে ও রসিকতা করতে দেখা গেছে। জলমগ্ন থাম লুয়াং গুহার বিভীষিকাময় মুহুর্তগুলোর বর্ণনা দেওয়ার সময় একে অপরের সঙ্গে সংহতি বিনিময় করতেও দেখা গেছে তাদের।

উদ্ধার কিশোর দলটির বেশিরভাগ সদস্যের বাড়িই মিয়ানমার সীমান্তবর্তী মায়ে সাই জেলায়।

বুধবার বাড়ি ফেরার পর অধিকাংশ কিশোরকেই চোখে জল ও মুখে হাসি নিয়ে জড়িয়ে ধরে স্বাগত জানান অপেক্ষারত স্বজনরা। ঘরে প্রবেশের সময় তাদের দেওয়া হয়েছে জলের আশীর্বাদ।

বৃহস্পতিবার ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর কয়েকজন কিশোর ও তাদের স্বজনরা মায়ে সাইর প্রাচীন ওয়াত ফা থাট দোই ওয়াও মন্দিরের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেন। গোপনীয়তা রক্ষায় সাংবাদিকদের মন্দিরের ভেতরে কিশোর ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি।

১৮ দিনের লড়াইয়ের পর সপ্তাহখানেক আগে গত মঙ্গলবার ১৩ জনের দলের সর্বশেষ সদস্যকে গুহার বাইরে নিয়ে আসেন উদ্ধারকর্মীরা। এরপরই তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।  এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে চলতি সপ্তাহের বুধবার তারা হাসপাতাল ছাড়ার ছাড়পত্র পান।

থাই এ কিশোর ফুটবল দলের ১২ সদস্য ও তাদের কোচের জলমগ্ন গুহায় আটকা পড়ার ঘটনাটি বিশ্ব গণমাধ্যমের নজর কাড়ার পর তাদের উদ্ধারে হাজারো স্বেচ্ছাসেবক এগিয়ে আসেন।

ওই উদ্ধার অভিযানেই প্রাণ হারান থাই নৌবাহিনীর সাবেক ডুবুরি সামার্ন কুনান। আটকে পড়াদের জন্য অক্সিজেন ট্যাঙ্ক বসানোর কাজে থাকা এ স্বেচ্ছাসেবক ৬ জুলাই গুহার গভীরে অচেতন হয়ে পড়েন, পরে আর তার জ্ঞান ফেরানো যায়নি।

কুনানের মৃত্যুর দুইদিন পরই থাই গুহা থেকে প্রথম কিশোরকে বাইরে বের করে আনা সম্ভব হয়।

বুধবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত সংবাদ সম্মেলনে কিশোররা জানায়, ফুটবল প্রশিক্ষণের পর গুহার ভেতর ঘণ্টাখানেক কাটানোর পরিকল্পনাতেই ২৩ জুন থাম লুয়াং গুহায় কোচকে নিয়ে প্রবেশ করেছিল তারা। যদিও বর্ষার পাহাড়ি ঢলে হঠাৎ পানি ঢুকে গেলে সেখানেই আটকে পড়তে হয় তাদের।

কোনো খাবার না থাকায় কেবল পানি খেয়েই নয়দিন কাটাতে হয়, এরপরই উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে দেখা হয় তাদের। গুহা থেকে বের হওয়ার পথ বের করতে পালাক্রমে গুহার দেয়াল খোঁড়াও চালিয়ে গিয়েছিল ওই কিশোররা।

“আমরা স্টেলেকলাইট থেকে চুইয়ে পড়া পানি খেয়েছি। প্রথম দিন আমরা সুস্থই ছিলাম। কিন্তু দুই দিন পর থেকে আমরা ক্লান্ত হতে শুরু করি,” শক্তি ধরে রাখতে কোচ একাপল চান্থাওং তাদের শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলেও জানায় ১৬ বছর বয়সী কিশোর পর্নচাই কামলুয়াং।

সংবাদ সম্মেলনে দলটির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য তিতান বলে, “এই অভিজ্ঞতা আমাকে দৃঢ় করেছে, শিখিয়েছে কখনোই হাল ছাড়া যাবে না।”

উদ্ধার অভিযানে প্রাণ হারানো ডুবুরি কুনানের স্মরণে কিশোররা শিক্ষানবীস বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের সঙ্গে সময় কাটানোর পরিকল্পনা করছে বলেও বুধবার তাদের কোচ একাপল সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন।