তুরস্কে নির্বাচন: অগ্নিপরীক্ষায় এরদোয়ান

ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ানের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেওয়া প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোট দেওয়া শুরু করেছে তুরস্কের ভোটাররা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2018, 09:50 AM
Updated : 24 June 2018, 09:50 AM

রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে এবং বিকেল ৫টায় ভোট গ্রহণ শেষ হবে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। 

তুরস্কজুড়ে এক লাখ ৮০ হাজার ব্যালট বাক্সে ভোট দিচ্ছেন দেশটির পাঁচ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি ভোটার।

এবারের নির্বাচনে দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা ইসলামপন্থি একে পার্টির পাশাপাশি  এরদোয়ানও সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে যাচ্ছেন বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের।

গত বছর হওয়া গণভোটের ধারাবাহিকতায় এবারের নির্বাচনে জিতলে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা আরও বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এরদোয়ান; যা নেটো সদস্যভুক্ত এ দেশটির গণতন্ত্রকে খর্ব করবে এবং একে একনায়কতন্ত্রের দিকে নিয়ে যাবে বলে শঙ্কা সমালোচকদের।

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা এবং দেশের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের পাশাপাশি সিরিয়া ও ইরাকে কুর্দি বিদ্রোহীদের দমনে জনগণের নিরঙ্কুশ সমর্থন লাভের প্রত্যাশায় নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১৬ মাস এগিয়ে আনেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। 

শহুরে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকলেও এরদোয়ান এবারের নির্বাচনে ধর্মনিরপেক্ষ রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) প্রার্থী মুহাররেম ইনসের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে যাচ্ছেন বলেই মনে করা হচ্ছে।

নির্বাচনী প্রচার শোভাযাত্রায়ও ইনসের পক্ষে বিপুল জনসমর্থন দেখা গেছে।

ভোটের আগে শনিবার ইস্তাম্বুলে লাখো মানুষের এক জনসভায় এ সিএইচপি নেতা এরদোয়ানের নেতৃত্বে চলা তুরস্কের ‘স্বৈরতান্ত্রিক গতিমুখ’ বদলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

“যদি এরদোয়ান জেতে, তাহলে আপনার ফোনে নজরদারি চলতেই থাকবে, অব্যাহত থাকবে ভয়ের রাজত্ব, আর যদি ইনসে জেতে, তাহলে আদালত হবে স্বাধীন,”বলেছেন তিনি। 

২০১৬-র জুলাইয়ে এরদোয়ানকে উৎখাতে এক সামরিক অভ্যুত্থানচেষ্টার পর থেকে দুই বছর ধরে যে জরুরি অবস্থা চাপিয়ে রাখা হয়েছে, জয়ী হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা তুলে নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন ইনসে।

জরুরি অবস্থায় তুরস্কের নাগরিকদের কিছু অধিকার স্থগিত রাখার পাশাপাশি সরকারি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টকে পাশ কাটানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

দুই বছর আগের ওই অভ্যুত্থানচেষ্টার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনকে দায় দিয়ে তুরস্কে তার অনুসারীদের ওপর এরদোয়ান ব্যাপক দমনপীড়ন চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ আন্তর্জাতিক মহলের।

জাতিসংঘ বলছে, ২০১৬-র জুলাইয়ের ওই ঘটনার পর তুরস্কে দেড় লাখেরও বেশি লোককে আটক করা হয়েছে; শিক্ষক, বিচারক, পুলিশ, সেনাসদস্যসহ চাকরিচ্যুত ও বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তির সংখ্যাও সমপরিমাণ।

অভ্যুত্থানবিরোধী অভিযানকে ব্যবহার করে এরদোয়ান ভিন্নমত দমনের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ।

সমালোচকরা বলছেন, তুরস্কে এখন অল্প কিছু গণমাধ্যম খোলাখুলিভাবে সরকারের সমালোচনার সুযোগ পায়; এবারের নির্বাচনেও অন্যান্য প্রার্থীদের তুলনায় এরদোয়ান বেশি কভারেজ পেয়েছেন বলেও ভাষ্য তাদের। 

“এটা মোটেই সেই তুরস্ক নয়, যা আমাদের প্রত্যাশা। এখানে নাগরিকদের অধিকার লংঘিত হচ্ছে, গণতন্ত্রের অবস্থাও সঙ্গীন,” ইস্তাম্বুলের একটি কেন্দ্রে ভোট দেওয়া শেষে প্রতিক্রিয়ায় জানান ৫০ বছর বয়সী স্বাস্থ্য কর্মী সেমা।

শনিবারের এক সমাবেশে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে এরদোয়ান বলেছেন, পুননির্বাচিত হলে তিনি বড় বড় নির্মাণ প্রকল্পে হাত দেবেন, যা তুরস্ককে তার মেয়াদেই বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত করতে সাহায্য করবে।

জনমত জরিপে এরদোয়ানকে অন্যান্য প্রার্থীদের তুলনায় খানিকটা এগিয়ে থাকতে দেখা গেলেও রোববারের প্রথম দফা নির্বাচনে তিনি প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট পাবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ৮ জুলাই দ্বিতীয় দফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এরদোয়ানের মতো তার দল একে পার্টির জনসমর্থনও আগের তুলনায় কমতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

এরদোয়ান এবং ইনসে ছাড়াও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আরও কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে জেল থেকে লড়ছেন কুর্দিপন্থি পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (এইচডিপি) প্রার্থী সেলাহাত্তিন দেমিরতাস।

সন্ত্রাসবাদসংক্রান্ত অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর তাকে কারাগারে রাখা হয়েছে; যদিও সরকারের এই অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছেন এইচডিপির এই নেতা। 

ভোটের আগে কারাগার থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় জনগণের সমর্থন চেয়েছেন দেমিরতাস।