মোবাইল টাওয়ারের রেকর্ড নিতে পরোয়ানা লাগবে যুক্তরাষ্ট্রে

যুক্তরাষ্ট্রে মোবাইল ফোনের টাওয়ার রেকর্ড থেকে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য নেওয়ার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ওপর নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2018, 04:16 PM
Updated : 23 June 2018, 04:50 PM

ওয়াশিংটন পোস্ট শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানায়, আদালতের এই নির্দেশনার ফলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো পরোয়ানা ছাড়া মোবাইল ফোনের টাওয়ার রেকর্ড থেকে কারও তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে না।

ডাকাতির এক মামলায় ১১৬ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি টিমোথি কারপেনটারের এক আবেদনের শুনানি করে শুক্রবার সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত এই সিদ্ধান্ত দেয়।

সুপ্রিম কোর্টের নয় বিচারকের মধ্যে প্রধান বিচারপতি জন জি রবার্টস জুনিয়রসহ পাঁচজন ওয়ারেন্ট নেওয়া বাধ্যতামূলক করার পক্ষে মত দেন। আর বিপরীত মত পোষণ করেন বাকি চার বিচারক।

একজন মোবাইল ব্যবহারকারী কখন কোথায় অবস্থান করছেন, কখন কার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন- তার একটি ভার্চুয়াল ম্যাপ টাওয়ার রেকর্ড থেকে পাওয়া সম্ভব।

আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়ন অফ ম্যাসাচুসেটসের নির্বাহী পরিচালক ক্যারল রোজ ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, “ডিজিটাল যুগে গোপনীয়তার অধিকার রক্ষায় এই রায় এক ঐতিহাসিক বিজয়।”

প্রধান বিচারপতি বলেছেন, তাদের এই রায় কেবল মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ে রেকর্ডের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য হবে, বাণিজ্যিক রেকর্ডের ক্ষেত্রে নয়। এমনকি জরুরি কোনো ঘটনায় দ্রুত সাড়া দেওয়ার স্বার্থেও পুলিশ বিনা পরোয়ানায় টাওয়ার রেকর্ড থেকে ব্যক্তির অবস্থানের তথ্য নিতে পারবে।

টিমোথি কারপেনটার নামের ওই আসমিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল ২০১০ ও ২০১১ সালে ডেট্রোয়েটের আশেপাশে বিভিন্ন দোকানে ধারাবাহিক ডাকাতির মামলায়। অভিযোগ প্রমাণের জন্য পুলিশ কারপেনটারের ফোনের ১২৭ দিনের তথ্য সংগ্রহ করে পুলিশ। পরে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ২০১৬ সালে সাজাও দেওয়া হয়।

কারপেনটারের আইনজীবীর অভিযোগ ছিল, মোবাইল ফোন কোম্পানির কাছ থেকে ওয়ারেন্ট ছাড়া তথ্য নিয়ে চতুর্থ সংশোধনীর লঙ্ঘন করা হয়েছে। পুলিশের উচিৎ ছিল ‘তদন্তের স্বার্থে এই তথ্য নেওয়া জরুরি- এই আর্জি জানিয়ে বিচারকের সম্মতি নেওয়া। 

রায়ে প্রধান বিচারপতি রবার্টস বলেছেন, পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির এই যুগে বেআইনি অনুসন্ধানের বিপরীতে সাংবিধানিক সুরক্ষায় চতুর্থ সংশোধনীর প্রয়োগ আবশ্যক বলেই তিনি মনে করেন।

জিপিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যক্তির অবস্থান অনুসরণ করা প্রসঙ্গে বিচারপতি রবার্টস বরেন, “এটা একজন ব্যক্তির জীবনে একটি ঘনিষ্ট জানালার মত, যার মাধ্যমে শুধু তার নির্দিষ্ট গতিবিধিই নয়, বরং তার পারিবারিক, রাজনৈতিক, পেশাগত, ধর্মীয় এবং যৌন সংসর্গও প্রকাশ পেয়ে যায়।”

২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত নির্দেশনা দিয়েছিল, তদন্তের জন্য ব্যক্তির মোবাইল ফোন সংগ্রহ করতে হলেও ওয়ারেন্ট নিতে হবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে।

২০১২ সালে একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তির গাড়িতে জিপিএস যন্ত্র বসিয়ে ২৮ দিন ধরে তার গতিবিধি অনুসরণ করার ঘটনা প্রকাশ হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ওয়ারেন্ট নিয়ে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।

এরই ধারাবাহিকতায় তৃতীয়বারের মত এমন রায় দেওয়া হল যুক্তরাষ্ট্রের আদালত থেকে। 

তবে বোমা হামলা, গোলাগুলি এবং শিশু অপহরণের মত বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় ওয়ারেন্ট ছাড়াই মোবাইল টাওয়ারের তথ্য সংগ্রহ করা যাবে বলে এবারের রায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।