অভিবাসী পরিবারগুলোকে বিচ্ছিন্ন করার নীতি থেকে সরলেন ট্রাম্প

জনমতের চাপে সিদ্ধান্ত পাল্টে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যেখানে অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগে আটক পরিবারের সদস্যদের একসঙ্গে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2018, 03:40 AM
Updated : 21 June 2018, 04:59 AM

বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলেছে, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা বাবা-মায়ের কাছ থেকে সন্তানদের আলাদা রাখার নীতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ার পর ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশ এল।    

বুধবার হোয়াইট হাউজে ওই নির্বাহী আদেশে সই করার পর ট্রাম্প বলেন, গ্রেপ্তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে সন্তানদের বিচ্ছিন্ন করার দৃশ্য তিনি আর দেখতে চান না।

তবে ইতোমধ্যে যে পরিবারগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদাভাবে রাখা হয়েছে, তাদের বিষয়ে নির্বাহী আদেশে কিছু বলা হয়নি।   

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্মকর্তাদের বরাতে বিবিসি লিখেছে, গত ৫ মে থেকে ৯ জুনের মধ্যে মোট ২২০৬ জন কারাবন্দি বাবা-মায়ের কাছ থেকে ২৩৪২ জন শিশুকে আলাদা করে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।

চাপের মুখে অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন আনলেও ট্রাম্প বলেছেন তার সরকার অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রাখবে এবং সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিচার চালিয়ে যাবে।  

নির্বাহী আদেশে যা আছে

>> যতদিন মামলা চলবে, ততদিন অভিবাসী পরিবারের সদস্যদের একসঙ্গেই বন্দি রাখা হবে।

>> পরিবারগুলোর ক্ষেত্রে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে।

>> অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগে আটক শিশুদের ২০ দিনের বেশি আটক না রাখার বিষয়ে আদালতের যে নির্দেশনা রয়েছে, তা সংশোধনের অনুরোধ জানানো হবে।  

ট্রাম্প বলেছেন, তার স্ত্রী মেলানিয়া ও মেয়ে ইভাঙ্কা অভিবাসী পরিবারগুলোকে বিচ্ছিন্ন করার নীতি পরিবর্তনের পক্ষে জোরালো অবস্থানে ছিলেন।

“আমার মনে হয়, হৃদয়বান যে কেউ বিষয়টা অনুধাবন করতে পারবে। পরিবারগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, এটা আমরা আর দেখতে চাই না।”

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর আগে বলেছিলেন, নির্বাহী আদেশ দিয়ে তিনি ওই নীতিতে পরিবর্তন আনতে পারবেন না। তিনি ইংগিত দিয়েছিলেন, এর জন্য কংগ্রেসের সম্মতি প্রয়োজন হবে।  

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে রিপাবলিকান পার্টির নেতা পল রায়ান বলেছেন, অভিবাসী পরিবারগুলোর সদস্যদের একসঙ্গে রাখার আইন করার বিষয়ে বৃহস্পতিবার প্রতিনিধি পরিষদে ভোটাভুটি হবে।  

ওই বিলের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না করলেও পল রায়ান বলেছেন, তারা সুন্দরভাবেই বিষয়টির সমাধান করতে চান।  

যে কারণে সমালোচনা

যুক্তরাষ্ট্রে আগে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক হলে প্রথমবার তাদের আদালতের মুখোমুখি করে ছেড়ে দেওয়া হত।

অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় গত এপ্রিলে নতুন ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি প্রকাশ করে, যেখানে সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রেবেশকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার এবং কারাগারে পাঠানোর কথা বলা হয়।

কিন্তু শিশুদের যেহেতু কারাগারে রাখার নিয়ম নেই, তাদের আলাদাভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখার কথা বলা হয় সেখানে।

এরপর আশ্রয়কেন্দ্রে বেড়ার পাশে শিশুদের ঘুমিয়ে থাকার ছবি এবং তাদের কান্নার অডিও প্রকাশ হলে বিশ্বজুড়ে শুরু হয় সমালোচনা।

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ও সাবেক ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ও লরা বুশ ওই নীতির সমালোচনায় সরব হন।

মার্কিন ক্যাথলিক বিশপরা এক বিবৃতিতে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের ওই নীতি ‘ক্যাথলিক মূল্যবোধের বিপরীত’ এবং ‘অনৈতিক’। পোপ ফ্রান্সিস জানান, তিনিও বিশপদের সঙ্গে একমত। 

বিবিসি লিখেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন আদেশের ফলে অবৈধ অভিবাসী শিশুদের আলাদা না করে তাদের পরিবারের সঙ্গেই রাখা হবে। আর শিশুদের ২০ দিনের বেশি আটক না রাখার আদেশ সংশোধন করতে আদালতের কাছে আবেদন করা হবে।

তবে আদালত ওই রায় পরিবর্তন না করলে কী ঘটবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। নতুন এই নির্বাহী আদেশ কবে থেকে কার্যকর হবে, ইতোমধ্যে পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া দুই হাজারের বেশি শিশুর ক্ষেত্রে কী হবে- সেসব বিষয়েও কিছু বলা হয়নি ট্রাম্পের আদেশে।