চীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ২৫% শুল্ক, পাল্টা পদক্ষেপ বেইজিংয়ের

হাজারেরও বেশি চীনা পণ্যে নতুন করে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 June 2018, 06:42 AM
Updated : 16 June 2018, 08:02 AM

এর মধ্যে বার্ষিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি হয় এমন ৮০০ পণ্যের শুল্ক ৬ জুলাই থেকে কার্যকর হবে; ১৬ বিলিয়ন ডলার আমদানি পণ্যে কবে থেকে নতুন শুল্ক ধার্য হবে তা জানায়নি হোয়াইট হাউজ। 

বেইজিংয়ের ‘মেধাস্বত্ব চুরি’কে কারণ দেখিয়ে শুক্রবার ট্রাম্প চীনা পণ্যে নতুন এ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। 

যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের পরপরই সমান ৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের ৬৫৯টি মার্কিন পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে চীন।

কৃষি পণ্য, গাড়ি ও সামুদ্রিক পণ্যসহ ৩৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের মার্কিন পণ্যে ৬ জুলাই থেকেই এ অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর হবে, জানিয়েছে সিনহুয়া। যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের পর বাকি পণ্যগুলোর ওপরও শুল্ক বসবে।

চলতি বছরের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একে অপরের ওপর বিভিন্ন পণ্যে একের পর এক শুল্ক আরোপ করছে।

দুই দেশের এ সম্ভাব্য ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ সারা বিশ্বের অর্থনীতিকেই ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা পর্যবেক্ষকদের।

শুক্রবার শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েই ট্রাম্প বলেছেন, “আমেরিকান প্রযুক্তি ও মেধাস্বত্বের অবৈধভাবে চীনে স্থানান্তর ঠেকাতে এই পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছিল। এটি মার্কিন চাকরিবাজারকেও সুরক্ষিত রাখবে।”

নতুন করে আরোপ হওয়া শুল্কের কারণে চীনের এয়ারক্রাফট টায়ার থেকে টারবাইন ও বাণিজ্যিক ডিসওয়াশারের মতো পণ্যকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হবে।

চীন পাল্টা পদক্ষেপ নিলে যুক্তরাষ্ট্র আরও শুল্ক বসাবে, হোয়াইট হাউজ এমন হুঁশিয়ারি দিলেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মার্কিন পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় বেইজিং।  

“যুক্তরাষ্ট্র যদি একতরফাভাবে সংরক্ষণবাদী নীতি নেয়, যা চীনের স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তাহলে আমরাও আমাদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষায় পাল্টা জরুরি পদক্ষেপ নেবো,” শুক্রবার ট্রাম্পের ঘোষণার আগেই বলেছিলেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং।

যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ করলে তাদের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য আলোচনা বাতিল হবে বলেও সতর্ক করেছিলেন এ চীনা কর্মকর্তা। 

ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই বিশ্ব অর্থনীতির দুই বৃহৎ পরাশক্তির মধ্যে সম্ভাব্য ‘বাণিজ্য যুদ্ধের’ শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের শেয়ার বাজারের দর বেশ খানিকটা পড়ে গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

মার্কিন অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চীনের ওপর আরোপ করা শুল্ক ও তার পরবর্তী পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেবে। ফলে শেষ পর্যন্ত ক্ষতিটা ভোক্তাদেরই হবে।

ট্রাম্পের এ পদক্ষেপ চাকরির বাজারকে সুরক্ষিত রাখার বদলে অনেকেরই চাকরি হারানোর কারণ হতে পারে বলেও ধারণা তাদের।

“নতুন এ শুল্ক মার্কিন কোম্পানিগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, চাকরির বাজারকে ঝুঁকিতে ফেলবে এবং ভোক্তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে,” বিবৃতিতে বলেছে মটর ও ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশন।

এর আগে দেওয়া অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাতের শুল্ক নৌকা প্রস্তুতকারকদের খরচ বাড়িয়ে দিয়েছিল। নতুন করে দেওয়া শুল্কের ফলে এবার ওই খাতের আরও প্রায় ৩০০ যন্ত্রাংশের খরচ বাড়বে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল মেরিন ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি এই শুল্ক আরোপ ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে সতর্ক করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেও চীনা পণ্যে নতুন এ শুল্ক আরোপ নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে।

ডেমোক্রেটরা প্রেসিডেন্টের নতুন এ সিদ্ধান্তের প্রশংসা করলেও বিরোধিতা করছে মুক্তবাজার অর্থনীতির সমর্থক রিপাবলিকান সাংসদরা।

“চীনের পাশাপাশি নতুন এ শুল্ক মার্কিন পণ্যপ্রস্তুতকারক, কৃষক, শ্রমিক ও ভোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করে কিনা, তা নিয়েই আমি উদ্বিগ্ন,” বলেন রিপাবলিকান সাংসদ কেভিন ব্র্যাডি।