ট্রাম্পের ঘোষণার পরও নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতিতে অটল পেন্টাগন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোরিয়ায় সামরিক মহড়া বাতিলের ঘোষণা দিলেও ‘লৌহবর্ম’ নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতিতে অবিচল থাকার ব্যাপারে মিত্রদের আশ্বস্ত করেছে পেন্টাগন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2018, 05:59 AM
Updated : 13 June 2018, 08:42 AM

সিঙ্গাপুরে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উনের সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠকের পর মঙ্গলবার ট্রাম্প কোরীয় অঞ্চলে ‘যুদ্ধ মহড়া’ বাতিলের ঘোষণা দেন। তার এ পদক্ষেপকে পিয়ংইয়ংয়ের জন্য ‘বড় ধরনের ছাড়’ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ ঘোষণা এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেরও তাক লাগিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

দক্ষিণ কোরিয়া বলেছে, তারা ট্রাম্পের ঘোষণার ‘সত্যিকারের অর্থ ও উদ্দেশ্য’ খতিয়ে দেখছে।

মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে টেলিফোনে মিনিট বিশেকের মতো কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স। আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে কোরিয়ায় সামরিক মহড়ার বিষয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না, তার উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ঐতিহাসিক বৈঠকে দুই নেতা পরস্পরকে তাদের দেশ সফরে আমন্ত্রণ জানালে দুজনই তা গ্রহণ করেন।

কিম ‘সুবিধাজনক সময়ে’ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে পিয়ংইয়ং আসার কথা বললে ট্রাম্পও উত্তরের নেতাকে যুক্তরাষ্ট্র সফরের আমন্ত্রণ জানান।

“দুই নেতা আন্তরিকতার সঙ্গে পরষ্পরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন,” জানিয়েছে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কেসিএনএ।

বৈঠকের পর প্রথম মন্তব্যে কিম ‘একে অপরের বিরুদ্ধে উত্তেজক ও  বিরক্তিকর সামরিক পদক্ষেপ’ বন্ধ করাকে ‘জরুরি’ হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেছেন বলেও জানিয়েছে তারা।

“দুই দেশেরই উচিত একে অপরের বিরোধিতা থেকে নিজেদের বিরত থাকার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া এবং এ বিষয়ে আইনী ও প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ গ্রহণের নিশ্চয়তা দেওয়া,” কিম এমনটাই বলেছেন বলে খবর কেসিএনএ-র।

মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের সানতোসা দ্বীপে অনুষ্ঠিত ট্রাম্প-কিম বৈঠকে কোরীয় অঞ্চলের উত্তেজনা হ্রাস ও পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টিই আলোচনার কেন্দ্রে ছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি। যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বরত কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে উত্তরের কোনো শীর্ষ নেতার প্রথম এ আনুষ্ঠানিক বৈঠকটি এক পৃষ্ঠার একটি সমঝোতা ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হয়।

পরে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সংবাদ সম্মেলনে আসে কোরিয়ায় সামরিক মহড়া বাতিলের ঘোষণা।

দক্ষিণ কোরিয়ায় স্থানীয় বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য ও দেশটিতে থাকা মার্কিন ঘাঁটির সদস্যরা ‘যুদ্ধ মহড়া’ নামে পরিচিত এই সামরিক প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে থাকেন। এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শক্তিশালী এ সামরিক ঘাঁটিতে সার্বক্ষণিকভাবে প্রায় ৩০ হাজার সৈন্য থাকে বলে ধারণা করা হয়।

পিয়ংইয়ং শুরু থেকেই এ ধরনের সামরিক আয়োজনকে ‘আগ্রাসনের প্রস্তুতি’ অভিহিত করে বার্ষিক এ মহড়া বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল।

অন্যদিকে এতদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া এ সামরিক মহড়াকে ‘প্রতিরক্ষামূলক’ অ্যাখ্যা দিলেও মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প সেখান থেকে সরে আসেন। তিনি যুদ্ধ মহড়াটিকে উত্তর কোরিয়ার জন্য ‘উস্কানিমূলক’ হিসেবে অভিহিত করেন।

“এটি বাতিলের ফলে আমাদের বিশাল পরিমাণ অর্থ বাঁচবে,” বলেন তিনি।

দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক ঘাঁটি থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের কথাও বললেও এক্ষেত্রে কোনো সময়সীমা বেধে দেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

উত্তর কোরিয়া সহযোগিতা না করলে যুদ্ধ মহড়াটি পুনরায় বহাল করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প।

মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই যে তিনি এ ঘোষণা দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াতেই সে বিষয়ে ইঙ্গিত মেলে।

“ট্রাম্পের ঘোষণার সত্যিকারের অর্থ কিংবা কী উদ্দেশ্যে এটি বলেছেন, তা খুঁজে দেখা প্রয়োজন,” এক বিবৃতিতে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের দপ্তর ব্লু হাউজ।

সোমবার মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেমস ম্যাটিসও ট্রাম্প-কিম বৈঠকে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি আলোচ্যসূচিতে নেই বলে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছিলেন।

কী কী বিষয়ে আলোচনা হবে সে বিষয়ে তিনি জানবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ম্যাটিস বলেছিলেন, “হ্যাঁ, অবশ্যই আমি জানবো।”

মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের ঘোষণা ম্যাটিসকে বিস্মিত করেছে, এমনটা স্বীকার করতে রাজি হয়নি মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে আগেই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান পেন্টাগনের মুখপাত্র ডানা হোয়াইট।

“শান্তি নিশ্চিত ও ওই অঞ্চলের স্থিতিশীলতায় মিত্রদের সঙ্গে আমাদের জোট আগের মতোই লৌহবর্ম নিরাপত্তায় ঘেরা থাকবে,” বিবিসিকে পাঠানো ইমেইলে এমনটাই বলেছেন হোয়াইট।

মঙ্গলবার পরের দিকে বেশ কয়েকটি টুইটে ট্রাম্প বলেছেন, উত্তর কোরিয়া যদি পারমাণবিক অস্ত্র ছেড়ে দেয় তাহলে তাদের অর্জনের ‘সীমা-পরিসীমা থাকবে না’।

উত্তর কোরিয়ার জনগণের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য ‘প্রথম সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ায়’ কিমকে ধন্যবাদও জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

“বিশ্বকে সম্ভাব্য পারমাণবিক ধ্বংসযজ্ঞ থেকে অনেকটা সরিয়ে আনা গেছে,” বলেছেন ট্রাম্প।