পেন্সের মন্তব্য ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’: উত্তর কোরিয়া

পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সাম্প্রতিক মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে একে ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তা চোয়ে সন-হুই।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2018, 08:51 AM
Updated : 24 May 2018, 08:56 AM

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার জন্য পিয়ংইয়ং ‘হাত পেতে বসে নেই’ জানিয়ে কূটনীতি ব্যর্থ হলে ‘পারমাণবিক প্রদর্শনীর’ সূচনা হতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি। 

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় চোয়ের এ বক্তব্য জুনে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য বৈঠককে আরও অনিশ্চয়তায় ঢেকে দিল বলে জানিয়েছে বিবিসি। 

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ওয়াশিংটন ও পিয়ংইয়ং দুই পক্ষই ১২ জুনের প্রস্তাবিত বৈঠক দেরিতে কিংবা একেবারেই বাতিল হয়ে যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।

এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের পর কোরীয় উপদ্বীপকে ‘অ-পারমাণবিকীকরণে’ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন উত্তরের কিম জং উন।

ওই বৈঠকের ধারাবাহিকতায় কিম ও ট্রাম্পের সম্ভাব্য বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করছিলেন পর্যবেক্ষকরা। পিয়ংইয়ং অবশ্য একতরফা কেবল নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্র বিসর্জন দেওয়া হবে না বলে জোর দিয়ে আসছিল।

কী প্রক্রিয়ায় উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের পথে হাঁটবে, এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ‘লিবিয়া মডেল’ অনুসরণের কথা বলার পরপরই ট্রাম্প-কিম প্রস্তাবিত বৈঠক নিয়ে অনিশ্চয়তা শুরু হয়।

২০০৩ সালে লিবিয়া পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচী ত্যাগ করার অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র লিবিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কও পুনঃস্থাপিত হয়। এর আট বছর পর নেটো সমর্থিত বিদ্রোহী ও আধাসামরিক গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হন গাদ্দাফি।

বিদ্রোহীদের হাতে ধরা পড়ার পর গাদ্দাফিকে হত্যা করা হয়। 

বোল্টনের দেওয়া লিবিয়া মডেলের উদাহরণ উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উনকে আতঙ্কিত করতে পারে তখনই ধারণা করেছিলেন পর্যবেক্ষকরা।

পিয়ংইয়ং বোল্টনের মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানালে পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রে ‘লিবিয়া মডেল’ অনুসরণের কথা ভাবছেন না তারা।

সম্প্রতি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ফের একই প্রসঙ্গের অবতারণা করে বলেন, “উত্তর কোরিয়ার সম্ভবত লিবিয়ার মতই সমাপ্তি ঘটবে।”

মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আলোচনা এগিয়ে নিতে উত্তর কোরিয়াকেই শর্ত পূরণ করতে হবে।

এর পরপরই রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নিবন্ধ লেখেন চোয়ে সন-হুই। উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ উপমন্ত্রী আগের দশকগুলোতেও বেশ কয়েকবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগে অংশ নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স। 

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কেসিএনএ-তে প্রকাশিত নিবন্ধে পেন্সকে ‘পুতুল রাজনীতিবিদ’ অ্যাখ্যা দিয়ে চোয়ে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কিত বিষয়ের সঙ্গে সংযুক্ত থাকায়, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের মুখ থেকে বেরিয়ে আসা অজ্ঞানতাপূর্ণ ও দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য দেখে বিস্ময় চেপে রাখতে পারছি না আমি।”

পিয়ংইয়ং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার জন্য ‘বসে নেই’ জানিয়ে উত্তর কোরিয়ার এ উপমন্ত্রী বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে বৈঠককক্ষে দেখা করবে না পারমাণবিক প্রদর্শনীর মোকাবেলা করবে তা পুরোপুরি নির্ভর করছে তাদের আচরণ ও সিদ্ধান্তের উপরে।”

গত সপ্তাহে জন বোল্টনের মন্তব্যের পর উত্তর কোরিয়ার উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী কিম ক্যায়া-গোয়ান জুনের ট্রাম্প-কিম বৈঠক থেকে উত্তর কোরিয়া বেরিয়ে আসতে পারে বলে হুমকি দিয়েছিলেন।