‘গোলানে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দিবে যুক্তরাষ্ট্র’

দখল করা গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দিতে তেল আবিব মার্কিন প্রশাসনকে চাপ দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার এক সদস্য।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2018, 08:09 AM
Updated : 24 May 2018, 08:11 AM

বুধবার রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশটির গোয়েন্দা বিষয়ক মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ আসছে কয়েক মাসের মধ্যে গোলান নিয়ে ওয়াশিংটনের স্বীকৃতি আসতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

৫১ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষিক কূটনৈতিক আলোচনার শীর্ষে ইসরায়েলের দখলে থাকা মালভূমিটিকে স্বীকৃতির বিষয়টিই ঘুরপাক খাচ্ছে বলে জানান কাটজ।

এ ধরনের যে কোনো পদক্ষেপকে যুক্তরাষ্ট্রের ইরান চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ট্রাম্পের স্বীকৃতি ও চলতি মাসে সেখানে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের ধারাবাহিকতা হিসেবেই দেখা হবে বলে বলছেন পর্যবেক্ষকরা।

তেল আবিবের বদলে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি ও দূতাবাস স্থানান্তরে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছে ইসরায়েল। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্ররা এর ঘোর বিরোধিতা করেছে।

গোলান মালভূমি নিয়ে কাটজের বক্তব্যের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।

“আমরা বিস্তৃত বিষয় নিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে কথা বলছি,” বলেন হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা। গোলান নিয়ে কাটজের ভাষ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।

ইসরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যে অবস্থিত এই মালভূমির আয়তন প্রায় ৪৬০ বর্গমাইল। ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের সময় ইসরায়েল সামরিক কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সিরিয়ার এই অংশটি দখল করে নেয়। অধিকৃত এলাকায় পরে ইসরায়েলি বসতিও স্থাপিত হয়।

১৯৮১ সালে তেল আবিব দখলকৃত অংশের পরিমাণ বাড়ালেও আন্তর্জাতিকভাবে তা স্বীকৃত পায়নি।

সিরিয়ার সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে এক সময় গোলানকে দামেস্কের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাইলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ এবং দেশটিতে ইসরায়েলের ঘোর শত্রু ইরানের প্রভাব ও সামরিক অবস্থান বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে মালভূমিটির নিয়ন্ত্রণ এখন নিজের কাছে রাখতেই বেশি আগ্রহী তেল আবিব।

মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য মোকাবিলার কৌশল হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসনও গোলান নিয়ে ইসরায়েলের প্রস্তাব বিবেচনা করছে বলে জানান নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার প্রভাবশালী সদস্য কাটজ।

“এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। গোলানে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতি, প্রেসিডেন্টের ঘোষণা ও আইন পাসের মাধ্যমেই ইরানিদের সবচেয়ে কষ্টকর প্রতিক্রিয়া দেখা সম্ভব,” বলেন তিনি।

এর ফলে তেহরানের বিরুদ্ধে ‘তুমি যুক্তরাষ্ট্রে মিত্র ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে চাও, হামলা চালাতে চাও, দেখো, তুমি এর ঠিক উল্টোটা পেলে’-  বার্তা দেওয়া যাবে বলেও মন্তব্য তার।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে নেতানিয়াহু এ প্রসঙ্গটি প্রথম তোলেন, আর এখন এটি মার্কিন প্রশাসন ও কংগ্রেসের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচিত হচ্ছে বলে জানান কাটজ।

“আমার বিচারে এ সিদ্ধান্ত পাকা হয়েই আছে, শিগগিরই ঘোষণা করারও সমূহ সম্ভাবনা আছে,” বলেন তিনি। 

চলতি বছরই যুক্তরাষ্ট্র এমন সিদ্ধান্ত নেবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কাটজের উত্তর, “হ্যাঁ। ধরে নেন কয়েক মাস।”

কাটজের মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসরায়েলের যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বলেন, “কূটনৈতিক যোগাযোগ নিয়ে আলোচনা না করাই আমাদের সাধারণ নীতি।”

সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই ২০১৫ সাল থেকে দেশটির গৃহযুদ্ধে আসাদের হয়ে লড়ছে রাশিয়া। একই অবস্থান অনুযায়ী গোলান মালভূমিকেও দামেস্কের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা মস্কোর অন্যতম লক্ষ্য, ধারণা রয়টার্সের।

যদিও কাটজ বলছেন, গোলানকে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে লড়াই বাধাবে না।

যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দিলেও রাশিয়া ওই পথে হাঁটবে বলে মনেও করেন না তিনি। মস্কো এ নিয়ে মাথা ঘামাবে না বলে ধারণা তার।

“সত্যিকার অর্থে তাদের দিক থেকে, সিরিয়াকে নিয়ে বিস্তৃত যুদ্ধে ইসরায়েলকে কিছু দেওয়া হলে, তারা ভাববে কেন? সিরিয়া দুর্বল হলেও আসাদকে টিকিয়ে রাখাই তাদের লক্ষ্য। তারা চায় নতুন, সামগ্রিক পুনর্বিন্যাস,” বলেন কাটজ। 

সিরিয়া থেকে ইরানকে বের করে দিতে আসাদ ও রাশিয়ার জন্য একে সুযোগ হিসেবেও দেখছেন ইসরায়েলি এ মন্ত্রী।

“আসাদের জন্য এটাই সত্যিকারের মূহুর্ত। তিনি কি ইরানিদের প্রক্সি হিসেবে থাকতে চান, নাকি না? যদি তিনি ইরানের প্রক্সি হিসেবে থাকতে চান, এখন অথবা পরে ঠিকই এজন্য নিজেকে দুষবেন তিনি। কেননা, সিরিয়ায় ইরানের উপস্থিতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে ইসরায়েল। আর যদি না চান, তাহলে আমরা সবসময়ই বলে আসছি, এখানে হস্তক্ষেপ করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আমাদের,” মন্তব্য কাটজের।

গোলানে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বে স্বীকৃতি ফিলিস্তিনিদের ক্ষিপ্ত করতে পারে বলেও শঙ্কা তার। এটি ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসাতে প্রভাব রাখবে বলেও ধারণা এ গোয়েন্দা মন্ত্রীর।  

১৯৬৭ সালে গোলান মালভূমি দখলের পর থেকে ওই এলাকায় ২০ হাজার ইসরায়েলি বসতি স্থাপন করেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। মালভূমিটির সঙ্গে জর্ডানেরও সীমান্ত আছে। গোলানে বাস করা ২০ হাজার দ্রুজ মুসলিমকে ইসরায়েল নাগরিকত্ব দেওয়া সুযোগ দেওয়া হলেও বেশিরভাগই তা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

তেল আবিবের দখল থেকে গোলান মুক্ত করতে ১৯৭৩ সালে সেখানে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েও ব্যর্থ হয় দামেস্ক। মালভূমিটি নিয়ে পরের বছর দুই দেশের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষর হয়। এরপর থেকে গোলান নিয়ে তুলনামূলকভাবে শান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে গোলান ফিরিয়ে দিতে ২০০০ সালে দামেস্কের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা শুরু করেছিল তেল আবিব। তুরস্কের মধ্যস্থতায় ওই আলোচনাও পরে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।