মালয়েশিয়ার সাবেক ফার্স্ট লেডির বিলাসী জীবন

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে কয়েকশ হাতব্যাগ, ঘড়ি ও দামী গহনা উদ্ধারের পর সাবেক ফার্স্ট লেডি রোসমাহ মানসুরের বিলাসী জীবনযাপনের বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2018, 09:30 AM
Updated : 20 May 2018, 09:30 AM

শুক্রবার ভোররাতের দিকে নাজিবের তিনটি অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালিয়ে মালয়েশীয় পুলিশ ২৮৪টি বাক্স ভর্তি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দামি হ্যান্ডব্যাগ, ৭২ ব্যাগ ভর্তি গহনা ও দামি ঘড়ি এবং বিপুল পরিমাণ রিংগিত ও মার্কিন ডলার জব্দ করেছে।

নাজিব পরিবারের ওই অ্যাপার্টমেন্টগুলো থেকে ব্যয়বহুল হারমেস ওয়ানসহ কয়েকশ হাতব্যাগ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেখান থেকে উদ্ধার করা কয়েক লাখ ডলার মূল্যের বিরকিন হাতব্যাগগুলো ভিক্টোরিয়া বেকহ্যামের মত সেলিব্রেটিদের পছন্দের শীর্ষে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

পরে এক সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন পুলিশের প্রধান অমর সিং বলেন, “ঠিক কি পরিমাণ গহনা উদ্ধার করা হয়েছে তা আমি এখনই বলেতে পারছি না। কারণ আমরা বাক্সেভরা গহনা জব্দ করেছি। তবে এটা বলতে পারি, পরিমাণ অনেক বেশি।”

জব্দ করা পণ্যের মধ্যে হারমেসের মতো নামী কোম্পানির বিরকিন হাতব্যাগ ও ঘড়ি আছে জানালেও এগুলো মালিকানা কার তা নিয়ে কিছু বলেনি মালয়েশীয় পুলিশ।

নাজিবের বাড়িতে উদ্ধার অভিযানের কয়েক ঘণ্টা পর মাহাথিরের পরা ৩ ডলার মূল্যের একজোড়া বাটা জুতার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ছবিটি দিয়ে দুই নেতার জীবনযাপনের মধ্যে তুলনাও করেন অনেক ব্যবহারকারী।

স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, নাজিবের ব্যক্তিগত বাসভবন থেকে চ্যানেল, লুইজ ভুইতন ও অস্কার দে লা রেন্টের মত ৫২টি ডিজাইনার হ্যান্ডব্যাগ ও দামি ১০টি ঘড়ি উদ্ধার করা হয়েছে।

ওয়ানএমডিবি তহবিলের চুরি করা টাকা দিয়ে নাজিব তার স্ত্রীর জন্য গহনা কিনেছিলেন বলে অভিযোগ করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিচারবিভাগ। কেনা গহনার মধ্যে ছিল দুই কোটি ৭০ লাখ ডলারের একটি বিরল গোলাপী হীরা এবং ১৩ লাখ ডলার মূল্যের ২৭টি স্বর্ণের নেকলেস।

এসব পণ্য উদ্ধারের পর রোসমাহ’র বিলাসী জীবযাপনের দিকে জনসাধারণের মনোযোগ আকৃষ্ট হয়। রোসমাহ কোন প্রক্রিয়ায় এতসব দামী বিলাসবহুল পণ্য সংগ্রহ করেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ফার্স্ট লেডি থাকার সময়ও তার বিত্তবৈভব নিয়ে প্রশ্ন ছিল। গণমাধ্যমের ওপর তখনকার সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকায় সেসময় এ নিয়ে সমালোচনার তেমন সুযোগ ছিল না।

২০১৫ সালের শুরুতে সাধারণ মালয়েশিয়ানরা যখন তাদের ব্যয়ের ওপর সরকারের নতুন কর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছিলেন, রোসমাহকে তখন তার হেয়ারড্রেসারের বাড়তি বিল নিয়ে অনুযোগ করতে দেখা গিয়েছিল।

মালয়েশিয়ায় মাসিক ন্যূনতম বেতন তখন ছিল ৯০০ রিংগিত; সেসময়ই করের কারণে কেশ-বিন্যাসের প্রতিটি সেশনের জন্য ১২০০ রিংগিত (তিনশ ডলার) করে খরচ পড়ছিল বলে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে দুঃখ করে বলেছিলেন ফার্স্ট লেডি।

দামি ঘড়ি ও হাত ব্যাগ নিয়ে স্বামী নাজিব রাজাকের সঙ্গে বিভিন্ন উপলক্ষে জনসমক্ষে আসা রোসমাহর ওই বক্তব্য দেশটির সাধারণ নাগরিকদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল।

এ মাসের শুরুতে নাজিবের ক্ষমতাচ্যুতি ও তাদের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বিলাসবহুল বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী উদ্ধারের পর গণমাধ্যমের পাশাপাশি মালয়েশীয় নাগরিকরাও সাবেক ফার্স্টলেডি কীভাবে এতো বিলাসী জীবনযাপন করতেন তা উন্মোচনের দাবি তুলেছেন।

অনেকেই তাকে ফিলিপিন্সের সাবেক ফার্স্ট লেডি ইমেলদা মার্কোসের সঙ্গে তুলনা করছেন। ১৯৮৬ সালে স্বামী ফার্দিনান্দ মার্কোস যখন প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়তে বাধ্য হন, তখন ইমেলদার ১২০০ জোড়ারও বেশি জুতার সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।

নাজিবের স্ত্রী অবশ্য সবসময়ই নিজের পছন্দের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।

“এসব জিনিসপত্র ও কাপড়চোপড় আমি নিজের টাকায় কিনেছি। এতে অন্যায় কি হল?,” বিলাসী জীবন যাপন নিয়ে সমালোচনার উত্তরে তাকে নিয়ে লেখা অনুমোদিত জীবনী গ্রন্থে জবাব দিয়েছিলেন রোসমাহ। ২০১৩ সালে তার ওই জীবনীটি প্রকাশিত হয়েছিল।

“একজন নারী হিসেবে, একজন নেতার স্ত্রী হিসেবে আমাকে প্রস্তুত হতে হয়। আমার চেহারাকে পরিচ্ছন্ন করতে হয়, যত্ন নিতে হয়।  যখন অন্যান্য দেশ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর আগোছালো স্ত্রীকে নিয়ে মজা করে তখন এটি মালয়েশিয়ানদের জন্যও বিব্রতকর,” বলেছিলেন তিনি।

নিজের আইনী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শনিবার দেওয়া এক বিবৃতিতে রোসমাহ ‘সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে তার বিরুদ্ধে ওঠা গণমাধ্যমে ঝড়’ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন।

‘বিচারের অকালমৃত্যু রোধে’ এ বিষয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া ও আইন অনুসরণে কর্তৃপক্ষের কাছেও অনুরোধ জানিয়েছেন সাবেক এই ফার্স্ট লেডি।

গণমাধ্যমে উদ্ধার অভিযান বিষয়ক তথ্য ফাঁস এবং ‘জব্দ করা পণ্যসামগ্রীর বিস্তারিত’ প্রকাশ হওয়ায় তদন্ত কার্যক্রমকে সাজানো বলেও সন্দেহ করছেন রোসমাহ।

এসব মন্তব্য সম্বন্ধে জানতে চাইলে তার আইনী প্রতিষ্ঠান ও ঘনিষ্ঠরা বিস্তারিত বলতে রাজি হননি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

রাজনৈতিক গুরু থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত হওয়া মাহাথির মোহাম্মদের কাছে গত ৯ মের নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকে মুদ্রা পাচার সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্তের মুখে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। স্ত্রী রোসমাহসহ তার দেশ ছাড়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।