ক্যারিবিয়ান সাগরের এই দ্বীপ দেশে গত তিন দশকের মধ্যে এটাই সবচেয়ে প্রাণঘাতী বিমান দুর্ঘটনা। এ দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে শনি ও রবিবার জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রেখে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে কিউবা।
রাষ্ট্রায়াত্ত বিমান পরিবহন সংস্থা কিউবানার ওই উড়োজাহাজ রাজধানী হাভানা থেকে ১০৫ জন যাত্রী ও সাতজন ক্রু নিয়ে দ্বীপ দেশটির পূর্ব অংশের ওলগিনে যাওয়ার জন্য উড়াল দিয়েছিল। স্থানীয় সময় শুক্রবার বেলা ১২টা ৮ মিনিটে রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের পরপরই উড়োজাহাজটি বিমানবন্দর এবং সান্তিয়াগো দে লাস ভেগাস শহরের মাঝামাঝি এলাকায় বিধ্বস্ত হয়।
দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকর্মীরা গিয়ে আগুন নিভিয়ে উড়োজাহাজের ধ্বংসস্তূপ থেকে দগ্ধ জারজনকে উদ্ধার করে হাসাপাতালে পাঠান। তাদের মধ্যে তিন নারী এখনও বেঁচে থাকলেও সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক।
কিউবা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, নিহত ১১০ জনের মধ্যে ৯৯ জন কিউবার নাগরিক। এছাড়া আর্জেন্টিনার দুইজন এবং মেক্সিকোর একজন পর্যটক, পশ্চিম সাহারা অঞ্চলের দুইজন এবং মেক্সিকোর ছয়জন ক্রু রয়েছেন নিহতদের মধ্যে।
প্রায় ৪০ বছরের পুরনো বোয়িং ৭৩৭-৪০০ উড়োজাহাজটি মেক্সিকোর দামোজের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছিল কিউবানা। কেন এ দুর্ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
বিবিসি লিখেছে, কীভাবে এ দুর্ঘটনা ঘটল- তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, বিমানন্দরের কাছে জঙলা এলাকায় বিধ্বস্ত হওয়ার আগে উড়োজাহাজটি বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের গোলায় পরিণত হয়।
হোসে লুই নামের এক সুপারমার্কেট কর্মী জানান, তিনি বিমানবন্দর থেকে উড়োজাহাজটিকে উড়তে দেখেন। তারপর হঠাৎ করেই বিমানটি ঘুরে যায় এবং নিচের দিকে নামতে শুরু করে।
দুর্ঘটনাস্থালের কাছে একটি রেস্তোরাঁর মালিক গিলবার্তো মেনেনদেস রয়টার্সকে বলেন, “আমরা বিস্ফোরণের শব্দ পেলাম। তারপর দেখলাম ধোঁয়ার মেঘ উঠছে।”
বোয়িং জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের আইন এবং ইউএস ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডের নিয়ম মেনে তারা হাভানায় টেকনিক্যাল টিম পাঠাতে প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্র বহু বছর ধরে কিউবার ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে।
বিবিসি জানিয়েছ, বাণিজ্যিক বিমান চলাচলের ইতিহাসে ২০১৭ ছিল সবচেয়ে নিরাপদ বছর। ওই বছর কোনো যাত্রীবাহী বিমান দুর্ঘটনায় পড়েনি।
তবে এবছর এরই মধ্যে তিনটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা দেখে ফেলেছে বিশ্ব। এর মধ্যে এপ্রিলে আলজেরিয়ায় একটি মিলিটারি প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে আড়াইশর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ফেব্রুয়ারিতে মস্কোতে সারাতভ এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মারা যায় ৭১ জন। আর মার্চে নেপালে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৫১ জনের মৃত্যু হয়।
কিউবার ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতি বিমান দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৮৯ সালে; সেবার হাভানার কাছে সোভিয়েত নির্মিত একটি বিমান বিধ্বস্ত হলে ১২৬ আরোহীর সবাই নিহত হন।
আর সাম্প্রতিক সময়ে ২০১০ সালে কিউবায় এরো ক্যারিবিয়ানের একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ৬৮ আরোহীর সবাই নিহত হন। গত বছরও একটি সামরিক বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৮ আরোহীর সবার প্রাণ যায়।