যৌনতা নিয়ে যা ভাবত অ্যানা ফ্রাঙ্ক

হলোকাস্টের শিকার কিশোরী অ্যানা ফ্রাঙ্কের ‘ডার্টি জোকস’ এবং যৌনতা নিয়ে চিন্তা-ভাবনার প্রকাশ ঘটেছে ডাইরির লুকানো দু’টি পাতায়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2018, 03:16 PM
Updated : 17 May 2018, 06:11 PM

অ্যানার ডাইরিতে বাদামী কাগজে ঢাকা এ পাতা দু’টি সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে। নতুন ইমেজিং প্রযুক্তির বদৌলতে এর পাঠোদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন গবেষকরা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির নাৎসি বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে ইহুদি কিশোরী অ্যানার পরিবার আত্মগোপনে চলে গিয়েছিল। ১৫ বছরের কিশোরী অ্যানা ওই সময়ের দৈনন্দিন ঘটনা ডাইরিতে লিখে রাখতেন।

এতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চলমান পরিস্থিতি, তার পরিবারের অবস্থা ও অ্যানার নিজের অনুভূতির কথা লেখা আছে। একটি নাৎসি ‘মৃত্যুকুপে’ অ্যানা মারা যান।

যুদ্ধের পর অ্যানার বাবা তার ডাইরি প্রকাশ করেন, যা ইহুদিদের উপর নাৎসি বাহিনীর চরম অত্যাচারের প্রমাণপত্র হিসেবে জগৎজুড়ে বিখ্যাত হয়ে ওঠে।

ডাইরির দু’টো পাতায় আঠা দিয়ে বাদামী কাগজ সেঁটে খুব সম্ভবত যৌনতা নিয়ে নিজের ভাবনা পারিবারের কাছে লুকাতে চেয়েছিলেন অ্যানা।

১৯৪২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তারিখ দেওয়া প্রথম পাতাতে লেখা, “আমি এই নষ্ট পাতা দু’টি ‘ডার্টি জোকস’ লেখার কাজে ব্যবহার করব।”

একটি পৃষ্ঠার ওপর কাটাকাটি করে বেশ কয়েকটি প্যারা এবং যে চারটি ‘ডার্টি জোকস’ জানতেন সেটি লিখেছিলেন অ্যানা। ওই সময় তার বয়স ছিল ১৩ বছর।

পাতা দু’টিতে যৌন শিক্ষা সম্পর্কিত লেখা ছাড়াও অন্য কাউকে এ সংক্রান্ত কথা বলা নিয়ে নিজের কল্পনা এবং পতিতাদের নিয়ে বাবার কাছ থেকে শোনা কথাও লিখেছিলেন অ্যানা।

একটি কৌতুক হচ্ছে, “জার্মান ভেরম্যাচ মেয়েরা কেন নেদারল্যান্ডসে এসেছে জানেন? সেনাদের গদি হতে।”

তার আরেকটি লেখনী, “কখনো কখনো আমি ভাবি, কেউ আমার কাছে আসবে এবং যৌনতা সম্পর্কে তাকে কিছু বলতে বলবে, আমি কেমন করে তা করব? উত্তরটা হচ্ছে...”

২০১৬ সালে লুকানো পাতা দু’টির ছবি তোলার পর লেখাগুলো পাঠোদ্ধারে সহায়তা করেন নিওড ইন্সটিটিউটের পরিচালক। ‘কৌতুকগুলো পড়লে কেউ হাসি চেপে রাখতে পারবে না’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আমসটারডামে অ্যানা ফ্রাঙ্ক হাউজ মিউজিয়ামের রোনাল্ড লিওপোল্ড বলেছেন, “অ্যানা ডাইরিতে বেশ খোলাখুলিভাবেই যৌনতা নিয়ে লিখেছেন। অন্যান্য কিশোরীদের মতো এ বিষয়ে তারও কৌতূহল ছিল।”

১৯৪২ সালে ত্রয়োদশ জন্মদিনে বাবার কাছ থেকে ডাইরিটি উপহার পেয়েছিলেন অ্যানা। এর মাসখানেকের কিছু বেশি সময় পরই পরিবারের সঙ্গে আত্মগোপনে চলে যান এ কিশোরী।

প্রায় দুই বছর আত্মগোপনে থাকার পর অ্যানার পরিবার ধরা পড়ে এবং ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে দিয়ে একটি নাৎসি ডেথ ক্যাম্পে রোগে ভুগে মারা যান অ্যানা।

তার পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য তার বাবা ১৯৪৭ সালে ডাইরিটি খুঁজে পেয়ে সেটি প্রকাশ করেন। যাকে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো।