ভ্যান হামলা: টরোন্টোর রাস্তায় ছড়ানো ছিটানো জুতা, লাশ

কানাডায় ভিড়ের মধ্যে গাড়ি তুলে দেওয়ার ঘটনায় ১০ জন নিহত ও ১৫ জন আহত হওয়ার পর টরোন্টোর ব্যস্ত ওই রাস্তায় দেখা গেছে ছড়ানো ছিটানো জুতা, ছিন্ন বস্ত্র ও তারপুলিনে ঢাকা মৃতদেহ; যেন শহরের ১৫ ব্লকের ওই এলাকাটি ভুতুড়ে স্থানে পরিণত হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2018, 05:35 AM
Updated : 24 April 2018, 05:35 AM

পথচারীদের ওপর ‘ইচ্ছাকৃতভাবেই’ ওই সাদা রঙের ভ্যানটি তুলে দেওয়া হয়েছিল বলে ধারণা পুলিশের।

উন্নত সাত দেশের জোট জি সেভেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে কানাডার সবচেয়ে বড় এ শহরের উত্তরাংশে সোমবার স্থানীয় সময় দুপুরে এ হামলার ঘটনা ঘটে, জানিয়েছে রয়টার্স।

ঘটনার পর কাছাকাছি এলাকা থেকে অ্যালেক মিনাসিয়ান নামে ২৫ বছরের এক সন্দেহভাজন তরুণকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

টরোন্টোর ব্যস্ত ওই রাস্তা ভ্যান হামলার কয়েক মিনিটের মধ্যে পরিণত হয় টেপ দিয়ে ঘেরা ক্রাইম সিনে; মোবাইল ফোনে আতঙ্কিত পথচারীদের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল, অনেকেই পুলিশের ঘিরে রাখা স্থানে তারপুলিনে ঢাকা মৃতদেহর ছবি তোলার জন্যও থামছিলেন।

হামলাস্থলের পাশেই তিন তলার অফিস থেকে জানালা দিয়ে বাইরের পরিস্থিতি দেখছিলেন ৫৬ বছর বয়সী আইনজীবী ইয়ং লি। প্রথম দেখায় তার মনে হয়েছিল, খাবারের ভ্যানগুলো ফের এলাকায় ফিরে আসছে। খানিক পরেই বুঝতে পারেন, কোথাও ভুল হচ্ছে তার।

লি দেখেন, একটি ভ্যানের সামনে মাটিতে পড়ে থাকা দুই ব্যক্তির শ্বাসপ্রশ্বাস সচল করার চেষ্টা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। স্থানে স্থানে রক্তের ছোপ, মানুষজন চারপাশে ইতস্তত ঘোরাফেরা করছে, নানা জায়গায় পড়ে আছে কাপড়।

“ফুটপাত দিয়ে অনেককিছুই যাচ্ছে এবং আসছে। বসন্তের প্রথম রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে এ ঘটনাকে পরাবাস্তব মনে হচ্ছিল,” বলেন তিনি।

দ্রুতই এই আইনজীবী বুঝতে পারেন, জানালা দিয়ে তিনি যা দেখছেন তা কানাডায় হওয়া বিরল হামলাগুলোর একটি; দেখছেন ইয়ঞ্জ স্ট্রিটের ফুটপাতে পথচারীদের ওপর তুলে দেওয়া সাদা ভ্যানে মৃত ১০ ও আহত ১৫ জনকে।

ধুমপানের জন্য ভবন থেকে নিচে নেমে আসা স্টিভ করটেসিও দুর্ঘটনার ওই মুহুর্তটি দেখেছেন। 

“মাথা ঘুরিয়ে দেখি একটি ভ্যান মোড়ের দিকে হাঁটতে থাকা এক ব্যক্তিকে আঘাত করল। তখনও সবুজ বাতি ছিল, তিনি (চালক) আসলে রাস্তার মধ্যে পাক খাচ্ছিলেন। আমি রাস্তার মাঝখানে দৌড়ে যাই এবং সব গাড়িকে থামানোর চেষ্টা করি। এরপরই হট্টগোল শুরু হয়ে গেল, সবাই পাগল হয়ে যাচ্ছিল,” টরোন্টোর নিউজ চ্যানেল সিপি টুয়েন্টিফোরকে এমনটাই বলছিলেন করটেসি।

তাণ্ডবলীলার শেষটুকু দেখেছিলেন আদ্রিয়ান। ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও কান্না চেপে রাখতে পারছিলেন না।

“দেখুন, আমি এখনও কাঁপছি,” বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলছিলেন এ প্রত্যক্ষদর্শী।

কাছাকাছি এলাকার বাসিন্দা আরাস রিইজি এসেছিলেন বন্ধুদের নিয়ে। প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে সাহায্য করা যাবে এ ভাবনাতেই ছুটে আসা তার।

“যখন কাউকে আঘাত পেতে দেখবেন, মানুষ হিসেবে আপনার উচিত দ্রুত আসা এবং সাহায্য করা,” বলেন তিনি।

হামলার পরও টরোন্টো ঘুরে দাঁড়াবে বলে প্রত্যাশা তার।

হামলার খবর পুলিশ প্রথম জানতে পারে স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার দিকে। আধাঘণ্টা পর কয়েক স্ট্রিট দূর থেকে সন্দেহভাজন এক তরুণকে গ্রেপ্তারও করা হয়। ২৫ বছর বয়সী অ্যালেক মিনাসেন টরোন্টোর উপকণ্ঠ রিচমন্ড হিলের বাসিন্দা।

ভ্যান হামলায় হতাহতদের বেশিরভাগেরই নাম পরিচয় জানা যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। তাদের স্মরণে সোমবার সন্ধ্যায় টরোন্টোর কেন্দ্রস্থলের বিখ্যাত সিএন টাওয়ারের বাতিগুলো নিভিয়ে রাখা হয়েছিল।