হলিউডে যৌন নিপীড়নের স্বরূপ উন্মোচন করে পুলিৎসার

হলিউডের ভেতরে যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে দুর্দান্ত প্রতিবেদনের জন্য যৌথভাবে মর্যাদাপূর্ণ পুলিৎসার পুরস্কার জিতেছে মার্কিন গণমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস ও নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2018, 05:56 AM
Updated : 17 April 2018, 08:45 AM

তাদের প্রতিবেদনেই ধরাশায়ী হন চলচ্চিত্র জগতের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হার্ভি ওয়াইনস্টিন, যার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিনেত্রী যৌন অসাদাচরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন। ওয়াইনস্টিন যদিও বলছেন, অভিনেত্রীদের সম্মতিতেই সেসব সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। 

অত্যন্ত প্রভাবশালী এ প্রযোজকের বিরুদ্ধে তদন্তই পরে বিশ্বজুড়ে ‘#মি টু’ আন্দোলনের সূচনা করে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

সোমবার পুলিৎসার প্রশাসক ডানা কেনেডি জানান, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন, শোবিজ, প্রযুক্তি ও গণমাধ্যমে কাজ করা নারীরা যে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অন্যায় আচরণের শিকার হচ্ছে এ বিষয়টি সামনে নিয়ে আসার জন্যই নিউ ইয়র্ক টাইমস ও নিউ ইয়র্কারকে চলতি বছর মর্যাদাপূর্ণ এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনগুলোর জন্য জোডি ক্যান্টর ও মেগান টুহির নেতৃত্বাধীন নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিনিধি দল এবং নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনের কন্ট্রিবিউটর রোনান ফ্যারোকে কৃতিত্ব দেন তিনি।

“তাদের বিস্ফোরক ও দুর্দান্ত সাংবাদিকতা ধনী ও প্রভাবশালী যৌন নিপীড়কদের চরিত্র উন্মোচন করেছে,” বলেছেন ডানা।

হলিউড মুঘল ওয়াইনস্টিনের যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে গত বছরের অক্টোবরে পৃথকভাবে নিউ ইয়র্ক টাইমস ও নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর পথ ধরেই হলিউডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শতাধিক নারী প্রভাবশালী এ প্রযোজকের অন্যায় আচরণ সম্পর্কে মুখ খোলেন।

হার্ভি ওয়াইনস্টিন। ছবি: রয়টার্স

অভিযোগের জেরে নিজের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি থেকেও বহিস্কৃত হন ৬৬ বছর বয়সী ওয়াইনস্টিন। এ প্রযোজক পরে তার আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেও ‘অপরপক্ষের সম্মতি ছাড়া কোনো ধরনের যৌন সম্পর্কে জড়াননি’ বলে দাবি করেছেন।

যৌন হয়রানির বেশ কয়েকটি অভিযোগে লন্ডন, নিউ ইয়র্ক ও লস এঞ্জেলসে ওয়াইনস্টিনের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে।

তার আচরণ নিয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের অভিযোগের মধ্য দিয়েই সূচনা হয় ‘#মি টু’ আন্দোলনের; জীবদ্দশায় মুখোমুখি হওয়া যৌন হয়রানি বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেন বিশ্বের হাজারো নারী।

অনলাইনজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ওই আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন, বিনোদন জগত ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পখাতসমূহে প্রবল ঝাঁকুনি দেয়।

মার্কিন সাংবাদিকতার সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার হিসেবে খ্যাত পুলিৎসার সাহিত্য ও শিল্পের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতেও দেওয়া হয়। সঙ্গীতে এ বছর প্রথমবারের মতো কোনো নন-ক্লাসিকাল/জ্যাজ শিল্পী পুরস্কার জিতলেন; র‌্যাপার ক্যান্ড্রিক লামার এ গৌরবে ভূষিত হলেন।

১৯১৭ সাল থেকে চলে আসা পুলিৎসার পুরস্কারের জন্য এ বছর দুই হাজার চারশ প্রতিবেদন জমা পড়েছিল বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

সিনেট প্রার্থী রয় মুরের বিরুদ্ধে দশককালের পুরনো যৌন অসদাচারণের ঘটনা সামনে এনে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ক্যাটাগরিতে পুলিৎসার পেয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

শুরুর দিকের জনমত জরিপগুলোতে এগিয়ে থাকলেও সাবেক বিচারক মুর ওই প্রতিবেদনের কারণেই  রিপাবলিকানদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত অ্যালাবামায় ডেমোক্রেট প্রার্থী ডগ জোনসের কাছে হেরে যান বলে ধারণা করা হয়।

২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগ বিষয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন ছেপে নিউ ইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় আরেকটি পুরস্কারও ঝুলিতে পুরেছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

মাদকের বিরুদ্ধে ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতের্তের ‘যুদ্ধে’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের জন্য একটি ক্যাটাগরিতে পুলিৎসার জিতেছে রয়টার্স।

রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে ফিচার ফটোগ্রাফ ক্যাটাগরিতেও এবারের পুলিৎসার গেছে বার্তা সংস্থাটির ঘরে।

গত বছরের অগাস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর দমন অভিযান থেকে বাঁচতে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।