নিজেদের ভূমির অধিকার ইসরায়েলিদের আছে: সৌদি যুবরাজ

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, নিজেদের ভূমিতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের অধিকার ইসরায়েলের আছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 April 2018, 05:02 AM
Updated : 3 April 2018, 10:48 AM

মার্কিন ম্যাগাজিন আটলান্টিকে সোমবার প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে সৌদি যুবরাজের এমন মন্তব্য আসে।  

রয়টার্স লিখেছে, রিয়াদ ও তেল আবিবের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা যে বাড়ছে, এটা তারই একটি নমুনা। 

যুবরাজ মোহাম্মদকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল নিজেদের পিতৃপুরুষের ভূমিতে একটি জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বসবাসের সুযোগ ইহুদিদের আছে বলে তিনি মনে করেন কি না।

জবাবে তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, নিজেদের ভূমির ওপর ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলিদের পূর্ণ অধিকার আছে। আমাদের এখন একটি শান্তিচুক্তি দরকার যাতে সব পক্ষই স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক একটি সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে।”   

ইসলাম ধর্মের উৎপত্তিস্থল ও প্রধান তীর্থভূমি সৌদি আরব ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করে না।

ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের সময় আরব ভূখণ্ড দখল করে নেয়। ওই ভূমি ফেরত দেওয়ার ওপর ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক নির্ভর করবে- এমন নীতিই রিয়াদ এতদিন বজায় রেখে এসেছে। ফিলিস্তিনিরা ওই ভূমির দাবিদার। 

গত মাসের শেষ দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকা সৌদি যুবরাজ আটলান্টিককে বলেন, “ফিলিস্তিনের জনগণের অধিকার এবং জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদ ধর্মীয় কারণে আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা শুধু এটুকুই বলতে চাই; অন্য কারও বিষয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই।”

রয়টার্স লিখেছে, সৌদি যুবরাজের এই সফরের উদ্দেশ্য মার্কিন বিনিয়োগ আকর্ষণ করা। আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ ইরানের প্রভাব বলয় ভেঙে সৌদির পক্ষে সমর্থন বাড়ানোও তার একটি উদ্দেশ্য।

মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব ও শক্তি মোকাবেলায় সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে এক ধরনের গোপন সখ্যতা গড়ে তুলেছে বলে গুঞ্জন চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। গতবছর নভেম্বরে ইসরায়েলের জ্বালানিমন্ত্রী জুভাল স্টেইনিতজ রিয়াদ-তেল আবিব গোপন যোগাযোগের কথা স্বীকার করলে সেই ধারণা ভিত্তি পায়।

ইসরায়েলের চিফ অফ স্টাফ জেনারেল গাদি আইজেনকট সে সময় বলেছিলেন, ইরানকে মোকাবেলায় তার দেশ সৌদি আরবের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়েও প্রস্তুত।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নে সৌদি যুবরাজ আটলান্টিককে বলেন, “ইসরায়েলের সঙ্গে অনেক বিষয়েই আমাদের আগ্রহের মিল আছে। আর শান্তি যদি থাকে, উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিলের অন্য সদস্য দেশগুলোও ইসরায়েলের সঙ্গে অনেক বিষয়েই আগ্রহী হবে।”

সৌদি আরব গতমাসে প্রথমবারের মত তাদের আকাশ পথ ইসরায়েলগামী কমার্শিয়াল ফ্লাইটের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। দুই দেশের সম্পর্কের পরিবর্তনের ধারায় ওই ঘটনাকে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেছেন ইসরায়েলের একজন কর্মকর্তা। 

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের বিষয়ে সৌদি মনোভাবের এই পরিবর্তনের কারণটি তৈরি হয় এক যুগেরও বেশি সময় আগে।

২০০৩ সালে ইরাকে সাদ্দাম হোসেনের শাসনের অবসান হওয়ার পর দেশটির রাজনীতিতে সুন্নিদের বদলে শিয়ারা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে শিয়া প্রতিবেশী ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে শুরু করে।

ইরাকি শিয়া মিলিশিয়ারা পরে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পক্ষে লড়াইয়ে যোগ দেয়। রাশিয়া আগে থেকেই আসাদের পক্ষে ছিল, আঞ্চলিক প্রতিবেশী ইরানের সমর্থন পাওয়ার পর আসাদ টিকে যান।

এর ফলে তেহরান থেকে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা পর্যন্ত একটি করিডোর খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় ইরানের সামনে, যা সুন্নিপ্রধান সৌদি আরবকে আরও বেশি ইসরায়েলের দিকে ঠেলে দেয়।

ইরানের পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হওয়া ঠেকাতে সৌদি ইসরায়েল দুই দেশই তৎপর।