জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বদলালেন ট্রাম্প

বুশ আমলের আগ্রাসী প্রতিরক্ষা নীতির সমর্থক ও জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত জন বোল্টনকে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2018, 04:01 AM
Updated : 23 March 2018, 05:37 AM

বোল্টন এ পদে জেনারেল ম্যাকমাস্টারের স্থলাভিষিক্ত হলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী রেক্স টিলারসনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার সপ্তাহখানেকের মধ্যে ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে এ পরিবর্তন আনলেন।

সিনেটের অনুমোদন পেলে এপ্রিল থেকে সিআইএ-র পরিচালক মাইক পম্পেওকে নতুন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্বে দেখা যাবে।

ম্যাকমাস্টারকে হোয়াইট হাউসের পাট চুকানো সর্বশেষ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলছে বিবিসি; যদিও বিদায়ী নিরাপত্তা উপদেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট।

“সে অসাধারণ কাজ করেছে; সবসময়ই সে বন্ধু হিসেবে থাকবে,” টুইটারে ম্যাকমাস্টারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন ট্রাম্প।

উত্তর কোরিয়া ও ইরান আক্রমণের সমর্থক হিসেবে পরিচিত বোল্টন ফক্স নিউজকে বলেছেন, তার কাজ হচ্ছে প্রেসিডেন্টের জন্য সব ধরনের বিকল্পের মাত্রা প্রস্তুত রাখা।

প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সিনেটের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না।

ট্রাম্পের ১৪ মাসের মেয়াদে এ নিয়ে তিনজন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হলেন। বোল্টন আগামী ৯ এপ্রিল থেকে দায়িত্ব নেবেন বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

৬৯ বছর বয়সী বোল্টন কয়েক দশক ধরেই রিপাবলিকান ঘরানার বেশ প্রিয়। তিনি রোনাল্ড রিগান, সিনিয়র ও জুনিয়র বুশ প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।

জর্জ ডব্লিউ বুশ তাকে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মনোনীত করেন। সাদ্দাম হোসেনের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে, এ ধারণা তৈরি করে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের পট প্রস্তুতেও বোল্টনের ভূমিকা ছিল বলে ভাষ্য পর্যবেক্ষকদের।

সাদ্দামের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার ওই ধারণা পরে মিথ্যা প্রমাণিত হলেও বোল্টন সবসময়ই ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী ভূমিকার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।

ইরান এবং উত্তর কোরিয়া বিষয়ে মার্কিনের আগ্রাসী নীতি থাকা উচিত বলেও মনে করেন তিনি। পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনের আলোচনার সম্ভাবনার মধ্যে ম্যাকমাস্টারকে সরিয়ে বোল্টনের নিয়োগকে তাই সতর্ক দৃষ্টিতেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।

ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে পরিবর্তন নিয়ে চলতি মাসের শুরু থেকেই কানাঘুঁষা চলছিল; ম্যাকমাস্টার নিজেই পদ ছেড়ে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন বলে এক সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে।

রাশিয়ার নির্বাচনে পুতিনের জয়ে অভিনন্দন নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে ম্যাকমাস্টারের মতানৈক্য ছিল বলেও ভাষ্য ওই সূত্রের।

নতুন উপদেষ্টা বোল্টন তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে; চীনের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মধ্যে তার এ নিয়োগ বেইজিংয়েরও মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে।

ইরাক যুদ্ধের ঘোরবিরোধী ট্রাম্প যুদ্ধবাজ বোল্টনকে নিয়োগ দেওয়ায় বিস্মিত হয়েছেন রিপাবলিক ও ডেমোক্রেট সিনেটররাও।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে ট্রাম্প ও বোল্টনের অবস্থান একই, দুজনই চুক্তিটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে আনতে চান; যা ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব আরও বাড়াতে পারে।

উত্তর কোরিয়া, চীন এবং রাশিয়া বিষয়ে কূটনীতিক সম্পর্কের পাশাপাশি ট্রাম্প যে সামরিক বিকল্পকেও বিবেচনা করছেন নতুন এ নিয়োগ তারও ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে ধারণা অনেকের।

“উত্তর কোরিয়ার শাসনব্যবস্থা বদলের কথা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন বোল্টন, তিনি তাইওয়ানের সঙ্গেও জোর সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান; সিটবেল্টটা শক্ত করে বাঁধুন,” বোল্টনের নিয়োগ নিয়ে এমনটাই বলছেন ওয়াশিংটনভিত্তিক স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের বিশ্লেষক বনি গ্লেসার।