মেধাস্বত্ব: চীনের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার পথে যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মেধাস্বত্ব হস্তান্তর ও চুরিতে চীন উৎসাহিত করছে, এমনটা নিশ্চিত হওয়ার পর দেশটির ওপর বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2018, 05:40 AM
Updated : 22 March 2018, 06:33 AM

বছরের পর বছর আলোচনার পরও বেইজিং অবস্থান না বদলানোয় এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। এতে চীনের বিভিন্ন পণ্যের ওপর বেশি হারে শুল্ক আরোপের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বিবেচনা করা হচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার এ নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে বলে খবর বিবিসির।

যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা করতে পারে বলে আশঙ্কা পর্যবেক্ষকদের।

হোয়াইট হাউস চীনা পণ্যের ওপর তিন হাজার থেকে ছয় হাজার কোটি ডলার শুল্ক আরোপের চিন্তা করছে বলে মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর ভাষ্য; পাশাপাশি চীনা বিনিয়োগে লাগাম টানার বিষয়েও ভাবা হচ্ছে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার কথাও বিবেচনা করা হচ্ছে বলে মার্কিন বাণিজ্য বিষয়ক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটিজার বুধবার কংগ্রেস সদস্যদের বলেন, এমন উপায় খোঁজা হচ্ছে যেন ‘চীনের ওপর সর্বোচ্চ চাপ আর মার্কিন ভোক্তাদের ওপর সর্বনিম্ন চাপ পড়ে’।

মেধাস্বত্ত সংরক্ষণকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

“বাণিজ্যে পুনঃভারসাম্যের ক্ষেত্রে এটাই সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়,” কংগ্রেসের শুনানিতে বলেন লাইটিজার।

চীনের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্থানীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্ব চুক্তিতে আসতে হয়; এর মাধ্যমে বেইজিং প্রযুক্তি হস্তান্তরে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাপ দেয় বলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রমাণ আছে, সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ব্রিফিংয়ে এমনটাই বলেন মার্কিন এক বাণিজ্য কর্মকর্তা।

চীন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেশ আগ্রহী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলা পরিচালনা করছে ও এতে সমর্থন দিচ্ছে বলেও অভিযোগ ওয়াশিংটনের।

গত বছরের অগাস্টে ট্রাম্প বাণিজ্য আইনের ৩০১ ধারায় চীনের কার্যক্রম খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়ার পর অনুসন্ধানে এসব বেরিয়ে আসে বলে দাবি মার্কিন কর্মকর্তাদের।

যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ন্যায্য বাণিজ্য করছে না বলে প্রতীয়মান হবে ৩০১ ধারা অনুযায়ী সেসব দেশের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারকে একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে থেকেই ট্রাম্প চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে ধারাবাহিক অসন্তোষের কথা বলে আসছেন।

সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায়, চীন এমন প্রযুক্তি খুঁজছে বলেও উদ্বেগ আছে যুক্তরাষ্ট্রের। চীনের বিভিন্ন রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হুমকি সৃষ্টি করছে মনে হওয়ায় বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে করা বাণিজ্য চুক্তি পর্যালোচনায় সরকারের ক্ষমতা বাড়াতে নতুন আইনেরও চিন্তা করছে মার্কিন কংগ্রেস।

মার্কিনের অনেক রাজনীতিবিদ এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার পাল্টায় চীনের পদক্ষেপ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন।

“সবার মতো আমিও মেধাস্বত্তের লংঘন নিয়ে চীনকে লক্ষ্যস্থল বানাতে চাই, চাই তাদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে। আমাদের উচিত হবে, চীনের যে পরিবর্তন আমরা চাই, সেটিকে লক্ষ্য বানানো। নিজের পায়ে গুলি চালানো উচিত হবে না আমাদের,” বুধবারের শুনানিতে লাইটিজারের উদ্দেশ্যে বলেন মিনেসোটার রিপাবলিকান সাংসদ এরিক পলসন।

নিষেধাজ্ঞায় শঙ্কার কথা স্বীকার করেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বাণিজ্য বিশ্লেষক লাইটিজারও। চীনের পাল্টা পদক্ষেপ মার্কিন কৃষিকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে বলেও মনে করছেন তিনি।

“যদি পাল্টা পদক্ষেপ আসে, যুক্তরাষ্ট্রকে তখন কৃষকদের সুরক্ষায় কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে,” বলেন এ রিপাবলিক।

বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হলে তাতে কোনো পক্ষই বিজয়ী হবে না বলে সতর্ক করেছে চীন।

বৃহস্পতিবার ন্যাশনাল পিপলস কাউন্সিলের শেষ দিনে দেশটির স্টেট কাউন্সিলের প্রধান লি কেকিয়াং উভয় পক্ষকেই ‘শান্ত’ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। চীনে উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিধিনিষেধ শিথিল হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।