মার্কিন নির্বাচনকে ‘প্রভাবিত করেছিল কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা’

যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পেছনে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার অনলাইন প্রচারণা ‘নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেছিল’ বলে দাবি করেছে একটি পক্ষ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2018, 06:45 AM
Updated : 21 March 2018, 07:55 AM

গোপনে ধারণ করা এক ভিডিওতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার সদ্য বরখাস্ত প্রধান নির্বাহী আলেক্সান্ডার নিক্সকে এ কথা বলতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

মঙ্গলবার ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল ফোর ওই ভিডিওটি সম্প্রচার করে।  

ওই ভিডিওটি সম্প্রচারিত হওয়ার কিছুক্ষণ আগে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার পরিচালনা পর্ষদ নিক্সকে ‘প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড উন্মুক্ত করে দেওয়ার’ অভিযোগে বরখাস্ত করে।

তবে ভিডিওতে বলা কথাগুলো নিক্সেরই কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

চ্যানেল ফোরের সম্প্রচারিত ভিডিওতে নিক্সকে বিদেশি বিভিন্ন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে তার প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করতে দেখা গেছে।

২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ট্রাম্পের ডিজিটাল ও টেলিভিশন প্রচারণার যাবতীয় গবেষণা, বিশ্লেষণ ও ভোটারদের লক্ষ্যবস্তু বানানোর সব কাজ কেমব্রিজ অ্যানালিটিকাই করেছে বলে ভিডিওটিতে বলেছেন তিনি। নির্বাচনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ট্রাম্পের সঙ্গে তার ‘অসংখ্য বার’ দেখা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন নিক্স।

পরে এক বিবৃতিতে ‘নিক্সের মন্তব্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড বা মূল্যবোধকে উপস্থাপন করে না’ বলে দাবি করেছে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা।  

সেন্ট্রাল লন্ডনে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার দপ্তরে প্রবেশ করছেন আলেক্সান্ডার নিক্স। ছবি: রয়টার্স

“তাকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তে এটাই প্রতিফলিত হয় যে, এ ধরনের লংঘনকে আমরা কতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখি,” বিবৃতিতে বলেছে পশ্চিমা তথ্য বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠানটি।

নিক্সের মন্তব্য সত্য হলে তা ইতোমধ্যে চাপে পড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকের জন্য আরও সমস্যা ডেকে আনবে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের।

কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা অবৈধভাবে ব্যবহারের জন্য পাঁচ কোটি ফেইসবুক ব্যবহারকারীর প্রোফাইল থেকে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের আইন প্রণেতারা এ অভিযোগে ফেইসবুকের তথ্য ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখছে।

এসব কারণে ফেইসবুকের শেয়ারের ক্রমাগত দরপতন হচ্ছে। মঙ্গলবারও ফেইসবুকের শেয়ারের দর দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার সঙ্গে চুক্তি ফেইসবুকের সুনাম ক্ষুণ্নের পাশাপাশি কর্তৃপক্ষ এর ওপর বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে বলে আশঙ্কা বিনিয়োগকারীদের। এতে ফেইসবুকের বিজ্ঞাপন ব্যবসায়ও ধস নামতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

এসব কারণে গত কয়েকদিনেই জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকের বাজারমূল্য ৬০ বিলিয়ন ডলার হ্রাস পেয়েছে।

ফেইসবুক থেকে অবৈধভাবে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে তা ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে কাজে লাগানোর সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব অভিযোগের জবাবে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে নেওয়া এসব তথ্য ফেইসবুকের নীতি মেনে নেওয়া হয়নি জানার পরপরই তারা সেগুলো ‘মুছে ফেলেছে’।

ট্রাম্প শিবিরের কর্মকর্তারা এর আগে বলেছিলেন, নির্বাচনী প্রচারে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ভূমিকা ছিল সামান্যই। যুক্তরাজ্যভিত্তিক এ ডিজিটাল প্রতিষ্ঠান থেকে নয়, ভোটারদের তথ্য রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন তারা।

মঙ্গলবার প্রচারিত নিক্সের বক্তব্য নিয়ে ২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় ট্রাম্প শিবিরের প্রধান ডিজিটাল উপদেষ্টা ও কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগের দায়িত্বে থাকা ব্র্যাড পার্সকেলের তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

ট্রাম্পজামাতা ও রিপাবলিকান শিবিরের ডিজিটাল কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বে থাকা জারেড কুশনারই ২০১৬-র নির্বাচনী প্রচারে ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকাকে নিয়ে আসেন বলে ট্রাম্পের সাবেক এক উপদেষ্টা জানিয়েছেন।

তবে তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা কুশনার বা তার আইনজীবীর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

যে ‘হুইসেলব্লোয়ারের’ বরাত দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস ও লন্ডন অবজারভার মার্কিন নির্বাচনে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ভূমিকার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করে, সেই ক্রিস্টোফার উইলি মঙ্গলবার ওয়াশিংটন পোস্টকে জানিয়েছেন, মার্কিন রক্ষণশীল কৌশলবিদ স্টিভ ব্যানন ২০১৪ সাল থেকেই কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ফেইসবুকের তথ্য সংগ্রহ এবং কোটি কোটি আমেরিকান ভোটারের বিস্তৃত প্রোফাইল নির্মাণের বিষয়টি দেখভাল করতেন।

এ কাজের জন্য ২০১৪ সালেই ১০ লাখ ডলার খরচের অনুমোদন দিয়েছিলেন ব্যানন, দাবি উইলির। গত বছর হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা পদ থেকে ব্যাননকে বরখাস্ত করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। 

কেমব্রিজ  অ্যানালিটিকা কীভাবে ফেইসবুকের তথ্য সংগ্রহ করেছিল, ব্যানন তা জানতেন কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি ওয়াশিংটন পোস্ট। এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের অনুরোধেও সাড়া দেননি এক সময় কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার পরিচালনা পর্ষদে থাকা ব্যানন।