‘ট্রাম্পের পরামর্শক ৫ কোটি ফেইসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়েছিল’

পশ্চিমা একটি তথ্য বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৫ কোটিরও বেশি ফেইসবুক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে তা ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 March 2018, 10:01 AM
Updated : 18 March 2018, 10:01 AM

২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা ট্রাম্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছিল।

শনিবার নিউ ইয়র্ক টাইমস ও লন্ডনস অবজারভারের প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির অভিযোগ উঠে আসে বলে খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।

ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার সাবেক কর্মী, সহযোগী ও বিভিন্ন নথির বরাতে পত্রিকা দুটি এ অভিযোগ করেছে, যাকে ফেইসবুকের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ‘তথ্য চুরির’ ঘটনা হিসেবেও দেখছে তারা।

যুক্তরাজ্যের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে।

“ম্যাসাচুসেটসের বাসিন্দারা (এ বিষয়ে) ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা ও ফেইসবুকের কাছ থেকে দ্রুত জবাব প্রত্যাশা করে,” টুইটারে বলেন ম্যাসাচুসেটসের অ্যাটর্নি জেনারেল মোরা হিয়েলে। টুইটের সঙ্গে নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টও সংযুক্ত করে দিয়েছেন তিনি।

যুক্তরাজ্যের তথ্য কমিশনও ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হবে বলে শনিবার জানিয়েছে।

“তদন্তে ফৌজদারি বা দেওয়ানি কোনো ধরনের লংঘন ধরা পড়লে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে,” বলেন তথ্য কমিশনার এলিজাবেথ ডেনহাম।

যুক্তরাজ্যেও ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার গ্রাহক আছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ তথ্যের গোপনীয়তা নীতি লংঘনের কারণে ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

এর ফলে তথ্য বিশ্লেষণকারী এ প্রতিষ্ঠান ও তাদের প্রতিষ্ঠাতা স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন ল্যাবরেটরিজ (এসসিএল) ফেইসবুকে কোনো বিজ্ঞাপন কিনতে পারবে না, পারবে না গ্রাহকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পেইজগুলো পরিচালনা করতেও।

লন্ডন অবজারভার বলছে, ২০১৪ সালের প্রথম দিকেই ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য ব্যবহার করে একটি সফটওয়ার নির্মাণ করে, যা অনুমান করে পছন্দের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রভাবকের ‍ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

‘হুইসেল ব্লোয়ার’ ক্রিস্টোফার উইলির বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, ওই সফটওয়ার আলাদা আলাদা ভোটারকে তার পছন্দ অনুযায়ী রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন প্রদর্শনে সক্ষম ছিল।

তথ্য সংগ্রহে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষকের সঙ্গে কাজ করা উইলি সফটওয়ারটি নির্মাণে সহায়তা করেছিলেন বলেও জানান।

উত্তর আমেরিকার সক্রিয় ফেইসবুক ব্যবহারকারীর এক তৃতীয়াংশ তথা এই পাঁচ কোটি ব্যবহারকারীর প্রোফাইলকে সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী নির্বাচনে সম্ভাব্য ভোটারের এক চতুর্থাংশ হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছিল।

“ফেইসবুক ব্যবহার করে আমরা কোটি কোটি মানুষের প্রোফাইল হাতিয়ে নিয়েছিলাম; যা জানি তার ওপর ভিত্তি করে মডেল নির্মাণ করেছিলাম, এবং ব্যবহারকারীদের ভেতরের চাপা পড়া নেতিবাচক প্রবণতাকে লক্ষ্য বানিয়েছিলাম,” অবজারভারকে বলেন উইলি।

ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার আধডজন সাবেক কর্মী ও ঠিকাদারের সাক্ষাৎকার, তাদের ইমেইল ও বিভিন্ন নথি বিশ্লেষণ করে নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, কেবল ফেইসবুক ব্যবহারকারীর তথ্যই নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি, হয়ে উঠেছিল সব কিংবা বেশিরভাগ প্রোফাইলের নিয়ন্ত্রকও।

ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা গবেষক আলেকসান্ডার কোগানের বানানো ‘দিস ইজ ইউর ডিজিটাল লাইফ’ অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারী ও তাদের বন্ধুদের তথ্য হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ লন্ডন অবজার্ভারের।

লাখ লাখ ব্যবহারকারী অ্যাপটির ‘পার্সোনাল টেস্টে’ অংশ নিয়েছিল, এবং তাদের ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করেছিল।

গবেষণার নামে নেওয়া ওই তথ্য পরে সরিয়ে না ফেলায় ফেইসবুক ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা ও তাদের প্রতিষ্ঠাতা এসসিএলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায়।

ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার এক মুখপাত্র জানান, কোগানের কোম্পানি গ্লোবাল সায়েন্স রিসার্চ (জিএসআর) তাদেরকে সেসব তথ্য দিতে চুক্তিবদ্ধ ছিল, যা ব্যবহারকারীদের অনুমতি সাপেক্ষে নেওয়া এবং যুক্তরাজ্যের তথ্য সংরক্ষণ আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

“যখন আমরা স্পষ্ট হলাম ফেইসবুকের নিয়ম মেনে জিএসআর ওই তথ্য সংগ্রহ করেনি, সঙ্গে সঙ্গে তাদের কাছ থেকে পাওয়া সব তথ্য মুছে ফেলা হয়,” বলেন মুখপাত্র।

জেনেশুনে ফেইসবুকের কোনো শর্ত ভঙ্গ করা হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি। সব তথ্য ও তা থেকে উদ্ভূত পরিসংখ্যান মুছে ফেলা সংক্রান্ত একটি লিখিত বিবৃতি ফেইসবুককে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার এ মুখপাত্র বলেন, জিএসআর থেকে নেওয়া কোনো তথ্য দুই বছর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করা হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-র জুনে নির্বাচনী প্রচারে যুক্ত হওয়া ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার পেছনে রিপাবলিকান শিবির ৬ কোটি ডলারের বেশি খরচ করে।

ট্রাম্প শিবিরের কর্মকর্তারা জানান, ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা নয়, রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির কাছ থেকে তারা ভোটারদের বিষয়ে তথ্য পেয়েছিলেন।

“অন্য কারও কাছ থেকে ভোটার তথ্য নিয়ে ২০১৬ সালে বিজয়ী হয়েছিলাম, এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা,” বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রিপাবলিকান প্রচার শিবিরের এক কর্মকর্তা।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের রিপাবলিকান প্রার্থীর ডিজিটাল বিজ্ঞাপন অপারেশন্স দেখভালকারী কর্মকর্তা ব্র্যাড পার্সকেল এর আগে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ২০১৬-র নির্বাচনী প্রচারে ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার ভূমিকা ‘গৌন’ ছিল বলে দাবি করেছিলেন।

নিউ ইয়র্ক টাইমস ও লন্ডনস অবজারভারের প্রতিবেদন বিষয়ে শুক্রবার ২০২০ সালে ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচনী প্রচার শিবিরের এ ব্যবস্থাপক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ফেইসবুকের বিবৃতিতে ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার কার্যক্রম স্থগিত রাখার কথা বলা হলেও এর সঙ্গে ট্রাম্প বা অন্য কোনো প্রচার শিবিরের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কিছু বলা হয়নি।