ইউএস-বাংলা দুর্ঘটনা: আহতদের বর্ণনায় ভয়ঙ্কর সেই মুহূর্ত

কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলা উড়োজাহাজে বেঁচে যাওয়া আরোহীরা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ভয়ঙ্কর সে অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2018, 04:36 PM
Updated : 14 March 2018, 06:20 AM

তাদের একজন নেপালের আশিষ রনজিত বলেন, “আমি সৌভাগ্যবান।”

একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নেপালের যে ১৩ জন ট্রাভেল এজেন্ট পরিচালক বাংলাদেশে এসেছিলেন তাদের একজন আশিষ।

ডান হাত, মাথা ও দুই পায়ে আঘাত নিয়ে তিনি এখন নরভিক ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালের জেনারেল ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।

আশিষ কাঠমান্ডু পোস্টকে বলেন, “দুর্ঘটনার আগেই আমি বিপদ বুঝতে পেরেছিলাম। উড়োজাহাজটি ভয়ঙ্করভাবে দুলছিল। ভয় পেয়ে আমি একজন এয়ার হোস্টেজকে ডাকি। তিনি নিজের আসন থেকে আমাকে ইশারায় চিন্তা না করতে বলেন। হঠাৎ করেই উড়োজাহাজের গতি দ্রুত বাড়তে থাকে এবং আমি বিকট শব্দ শুনতে পাই।

“সঙ্গে সঙ্গে চেতনা ফিরে পাওয়ায় পুড়ে মরতে হয়নি।”

চোখ খুলেই আগুন দেখা আর মানুষের চিৎকার শোনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যখন আমি চোখ খুললাম তখন উড়োজাহাজে আগুন ধরে গেছে। লোকজন কাঁদছিল, কেউ কেউ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলছিল। আমি সিটবেল্ট খুলে ফেলি। আমার কয়েকজন বন্ধুরও চেতনা ছিল। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে উড়োজাহাজ থেকে লাফ দিয়ে নিজেদের প্রাণ রক্ষা করি।”

উড়োজাহাজের ডান দিকের তৃতীয় সারিতে তার আসন ছিল জানিয়ে আশিষ আরও বলেন, “আমার মনে হয় উড়োজাহাজের বাম দিকের যাত্রীরা বেশি আঘাত পেয়েছে। কারণ, উড়োজাহাজটি বাম দিকে কাত হয়ে পড়েছে।”

দুর্ঘটনার পরপর উড়োজাহাজের ভাঙা জানালা দিয়ে বেরিয়ে আসেন বলে জানান রাশিতা ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের কর্মকর্তা বসন্ত বোহোরা। যদিও ওই সময়ে স্মৃতি পুরোপুরি স্পষ্ট নয় তার কাছে। মাথায় ও পায়ে আঘাত পেযেছেন তিনি।

বসন্ত বোহোরা বলেন, “কীভাবে উড়োজাহাজ থেকে বেরিয়ে এলাম সেটা পুরোপুরি মনে করতে পারছি না। সবই ধোঁয়াশা। কেএমসি হাসপাতালে আনার পর আমি সম্পূর্ণ চেতনা ফিরে পাই। আমি ভাগ্যবান, আমি বেঁচে গেছি।”

ট্রাভেল এজেন্ট দলের মধ্যে ছয় জন কেএমসি হাসপাতালে, তিনজন গ্রান্ডে ইন্টারন্যাশনাল হসপিটালে এবং দুইজন নরভিকে চিকিৎসাধীন আছেন।

বেঁচে যাওয়া আরেকজন নেপালি কেশব পান্ডে বিবিসিকে বলেন, “উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়ে আগুন ধরে যায়। আমি সেখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু আমার হাত ও পা আটকে গিয়েছিল। জরুরি ফটকের কাছে আমার আসন ছিল। খুব সম্ভবত উদ্ধারকর্মীরা সেটি খোলার পর আমি নিচে পড়ি। তারপর আর কিছু মনে নেই।”

বাংলাদেশি শিক্ষক শাহরিন আহমেদ বলেন, “আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল এবং কেবিন ভরে গিয়েছিল ধোঁয়ায়।

“তার পরপরই প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ পাই। আমাকে বাইরে থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।”

ওই সময় বিমানবন্দরে থাকা কয়েকজনও খুব কাছ থেকে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন।

ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে কাছের আরেকটি উড়োজাহাজে বসে থাকা শ্রদ্ধা গিরি তাদেরিই একজন।

তিনি বিবিসিকে বলেন, “চোখের সামনে ভয়ঙ্কর এ ঘটনা ঘটতে দেখে আমি কেঁপে উঠেছিলাম।”

দুর্ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী নেপাল অয়েল কর্পোরেশনের কর্মকর্তা রাম চন্দ্র অধিকারী বলেন, “উড়োজাহাজটি যেভাবে রানওয়েতে নেমে আসছিল তা আমার অস্বাভাবিক মনে হয়েছিল। সেটাকে তখনই নিয়ন্ত্রণহীন মনে হয়েছিল। উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে অবতরণের চেষ্টা করছিল সেটা, যদিও্ এই বিমানবন্দরে অবতরণ সাধারণত দক্ষিণ দিক দিয়ে হয়ে থাকে।”

তিনি জানান, দুর্ঘটনার পরপরই বিমানবন্দরে থাকা ১৫ থেকে ২০ জন সেনাসদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। অগ্নিনির্বাপক বাহিনী সেখানে পৌঁছাতে আধাঘণ্টার মত সময় লাগে। আরোহীদের কেউ কেউ বিধ্বস্ত উড়োজাহাজ থেকে লাফিয়ে নামেন। কয়েকজনকে উদ্ধার করা হয়।

ফায়ার সার্ভিস আসার পর আগুনে নেভাতে আরো আধা ঘণ্টার মত সময় লাগে বলে জানান রাম চন্দ্র।

সোমবার দুপুরে ত্রিভুবনে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিএস২১১ এর ৭১ আরোহীর মধ্যে মোট ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে ২২ জন হাসপাতালে আছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি অসিত বরণ সরকার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১০ জনই গুরুতরভাবে আহত।”