শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নয়ের্ত মে মাসেই জেরুজালেমে অস্থায়ী দূতাবাসের কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনার কথা জানান বলে খবর রয়টার্সের।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছরের একেবারে শেষ দিকে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি এবং সেখানেই মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশ দেন। তার এ ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন অশান্তির জন্ম দেয়। গাজা. বেথেলহেম, জেরুজালেম পশ্চিম তীরসহ বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সংঘর্ষ শুরু হয়।
ইসরায়েল জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী হিসেবে দীর্ঘকাল দাবি করে আসলেও এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ছিল না; ফিলিস্তিনিরা শহরটির পূর্বাংশকে তাদের ভবিষ্যত রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে চেয়ে আসছে।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং প্রভাবশালী দেশগুলোও এতদিন ধরে পুরো জেরুজালেমে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা করে আসছিল; পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলের অবস্থানকে ‘দখলদার’ হিসেবেই দেখছিল তারা। ট্রাম্প এর ছেদ ঘটালেন।
ডিসেম্বরে ট্রাম্পের ওই ঘোষণার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় আরব ও ইউরোপীয় মিত্ররা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে বলেও মন্তব্য করে তারা।
তাৎক্ষণিক এক জরুরি সভায় মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি জেরুজালেমকে পাল্টা ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দিতে সারাবিশ্বের প্রতি আহ্বানও জানায়।
“আমরা এ ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিতে পেরে উচ্ছ্বসিত, মে মাসের মধ্যে দূতাবাস খোলার প্রত্যাশায় আছি,” বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপত্র নয়ের্ত।
মে মাসেই ইসরায়েলের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস খোলার সময় নির্ধারণের সঙ্গে সেটিরও যোগ আছে বলে জানান নয়ের্ত।
জেরুজালেমের আরননা এলাকায় থাকা কনস্যুলেট ভবনেই অস্থায়ী দূতাবাসের কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ মুখপাত্র। স্থায়ী দূতাবাস ভবনের জন্য জায়গা খোঁজা শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি, যা শেষ হতে ‘দীর্ঘ সময়ও লাগতে পারে’।
অস্থায়ী এ দূতাবাসে আপাতত রাষ্ট্রদূতের দপ্তর ও স্বল্প সংখ্যক কর্মচারী থাকবেন। ২০১৯ এর মধ্যে কনস্যুলেটের আশপাশে অস্থায়ী দূতাবাসের বিস্তৃতি বাড়ানোরও চিন্তা চলছে, বলেন তিনি।
পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের জন্য করা অপর কনস্যুলেটটি আগের মতোই কাজ চালিয়ে যাবে; নিরাপত্তার কারণে রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রেইডম্যানের বাসভবনও তেল আবিবের উত্তরে হার্জলিয়াতেই থাকছে। প্রতিদিন তিনি এখান থেকে নতুন দূতাবাসে গিয়ে অফিস করবেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ইসরায়েলি পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে তেল আবিব থেকে দূতাবাস সরানোর কার্যক্রম শুরু হতে হতে ২০১৯ লাগতে পারে বলে জানিয়েছিলেন। যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শুক্রবারের ঘোষণায় তার চেয়েও অনেক দ্রুততম সময়ে দূতাবাস সরানোর কাজ শুরুর কথা জানানো হয়।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর নতুন ঘোষণায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন; ফিলিস্তিনিরা জানিয়েছে ক্ষোভ।
“এটা অগ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ। একতরফা যে কোনো পদক্ষেপ কাউকে বৈধতা দেবে না এবং এটি ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যে কোনো প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করবে,” বলেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র নাবিল আবু রদাইনি।
শুক্রবার কনজারভেটিভ পলিটিকাল কনফারেন্সে দেওয়া বক্তৃতাতেও ট্রাম্প জেরুজালেম নিয়ে নিজের সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।
বিভিন্ন দেশের বাধার মুখেও মুসলিম, ইহুদি ও খিস্টান ধর্মাবলম্বীদের কাছে অতি পবিত্র এ শহরটিকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ‘ঠিক কাজটিই’ করেছেন বলেও মন্তব্য তার।
“আমি বলেছি এটি আমাদের করতে হবে। করার জন্য এটিই ছিল সঠিক কাজ। এটিই ছিল সঠিক কাজ। আমাদের এটি করতে হতো, এবং আমি এটি করেছি,” রক্ষণশীলদের সম্মেলনে বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্পের জেরুজালেম ঘোষণার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনিদের সাপ্তাহিক বিক্ষোভের মধ্যে শুক্রবারও গাজা ও পশ্চিম তীরে সংঘর্ষ হয়েছে।
ডিসেম্বরে ট্রাম্পের ওই ঘোষণার পর থেকে হওয়া প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও সহিংসতায় অন্তত ২০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।