ইরানে ‘অবাধ’ নির্বাচনের আহ্বান আহমেদিনেজাদের

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে লেখা এক খোলা চিঠিতে পার্লামেন্ট ও প্রেসিডেন্ট পদে ‘অবাধ নির্বাচন’ চেয়েছেন দুই দফা দেশটির প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করা মাহমুদ আহমেদিনেজাদ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2018, 07:48 AM
Updated : 22 Feb 2018, 07:49 AM

বুধবার নিজের ওয়েবসাইটে সাবেক এ প্রেসিডেন্ট চিঠিটি প্রকাশ করেছেন বলে খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।

২০০৯ সালে আহমেদিনেজাদ দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তার বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে বিরোধীরা তুমুল বিক্ষোভ করেছিল। সেবারের সহিংসতায় ডজনের ওপর লোক নিহত ও আটক হয়েছিল শতাধিক।

পরে নিরাপত্তা বাহিনী দেশটির প্রভাবশালী বিপ্লবী রক্ষীদলের নেতৃত্ব ক্ষমতা কাঠামোর ভিত কাঁপিয়ে দেয়া বিক্ষোভ-সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে আনে। 

নয় বছর আগের ওই ঝঞ্ঝামুখর সময়ে সর্বোচ্চ নেতা খামেনির সমর্থন পেয়েছিলেন আহমেদিনেজাদ। কিন্তু ২০১১ সালে গোয়েন্দা বিষয়ক মন্ত্রীকে বরখাস্তের ঘটনায় দুজনের সম্পর্কে ফাটল ধরে।

আহমেদিনেজাদ মন্ত্রীকে বরখাস্ত করলেও ইসলামিক প্রজাতন্ত্রটির সকল নীতির ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতাধারী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনি প্রেসিডেন্টের আদেশ উল্টে দেন। আহমেদিনেজাদ কর্তৃত্বের সীমা অতিক্রমের চেষ্টা করছে বলেও ওই সময় ইঙ্গিত করেছিলেন তিনি।

ক্ষমতায় থাকার সময় বেপরোয়া ও কট্টরপন্থি হিসেবে পরিচিত আহমেদিনেজাদ ২০১৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। দেশটির আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি পরপর দুইবারের বেশি প্রেসিডেন্ট হতে পারে না।

সেবারের নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসা হাসান রুহানি গত বছরের নির্বাচনেও বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সমাজ ও অর্থনীতিতে উদারনৈতিক সংস্কার এবং নির্বাচনে বিপ্লবী রক্ষীদলকে হস্তক্ষেপ না করতে আহ্বান জানালেও সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার ক্ষমতা হ্রাসের ব্যাপারে কিছু বলেননি।

আহমেদিনেজাদের চিঠিতে এ ব্যাপারে স্পষ্ট ইঙ্গিত আছে।

“প্রেসিডেন্ট পদে ও পার্লামেন্টে দ্রুত ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান এখন জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজন, অবশ্যই সেটি হতে হবে গার্ডিয়ান কাউন্সিলের তৎপরতা এবং সামরিক বাহিনী ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর হস্তক্ষেপমুক্ত। পছন্দের প্রার্থী নির্বাচনের অধিকার আছে জনগণের,” বলেছেন আহমেদিনেজাদ।

প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্টে মনোনয়ন চাওয়া প্রার্থীদের বাছাই করে গার্ডিয়ান কাউন্সিল, যেখানে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার ইচ্ছার প্রতিফলনও থাকে। আহমেদিনেজাদের সমালোচকরাও ২০০৫ ও ২০০৯ এর নির্বাচনে গার্ডিয়ান কাউন্সিলের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেছিল।

আহমেদিনেজাদকে জেতাতে কাউন্সিল নানা ধরনের তৎপরতা চালিয়েছিল বলেও অভিযোগ করেছিলেন তারা। সর্বশেষ নির্বাচনে এ গার্ডিয়ান কাউন্সিলই আহমেদিনেজাদের প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়নের সম্ভাবনা বাতিল করে দিয়েছিল।

সাবেক এ প্রেসিডেন্ট তার খোলা চিঠিতে সরকারের তিন শাখা- নির্বাহী, সংসদ ও বিচার বিভাগের পাশাপাশি সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার দপ্তরেরও ‘মৌলিক সংস্কারের’ কথা বলেছেন; যদিও সংস্কারের বিষয়ে বিস্তারিত বলেননি তিনি।

ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানে কোনো কর্মকর্তার মুখে জনসম্মুখে খামেনি কিংবা তার ক্ষমতার সমালোচনা শোনা যাবে না; সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাকে অপমান করা দেশটিতে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়।

২০০৯ সালে আহমেদিনেজাদের দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্সির শুরুতে হওয়া বিক্ষোভের প্রায় এক দশক পর গত বছরের শেষদিকে ইরানজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ দেখা দেয়।

প্রথমদিকে মূলত অর্থনৈতিক দুর্দশার প্রতিবাদ জানালেও আন্দোলনকারীদের ক্ষোভ পরে ক্ষমতাসীন মোল্লাতন্ত্রের বিরোধিতায় রূপান্তরিত হয়। বিক্ষোভকারীরা খামেনিসহ দেশের শীর্ষ নেতাদের পদত্যাগ ও বিস্তৃত গণতন্ত্রের দাবি করতে থাকে।

এ দফা বিক্ষোভ সহিংসতায় অন্তত ২৫ জন নিহত ও কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী আটক হন বলে খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর। নিরাপত্তা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানের পর জানুয়ারির শুরুর দিকে বিক্ষোভ স্তিমিত হয়ে পড়ে।

আহমেদিনেজাদ তার চিঠিতে বিক্ষোভে আটক রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দাবি করেছেন। তিনি দেশটির বিচার বিভাগের প্রধান আয়াতুল্লাহ সাদিক আমোলি লারিজানির পদত্যাগও চেয়েছেন।

লারিজানি তার মিত্র ও সমর্থকদের অন্যায় লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে বলেও অভিযোগ সাবেক এ প্রেসিডেন্টের।

রক্ষণশীল, ছোট শহরের শ্রমজীবী ও গ্রামের দরিদ্রদের সমর্থনের ওপর ভিত্তি করে দুই দফা প্রেসিডেন্ট হওয়া আহমেদিনেজাদের ধর্মীয় নেতা ও নিরাপত্তা কাঠামোর বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সমালোচনাকে তার নতুন করে রাজনৈতিক অঙ্গনে আবির্ভূত হওয়ার পটভূমি হিসেবেই দেখছেন সমালোচকরা।

নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বদলে পারমাণবিক কর্মসূচি কমিয়ে আনতে ২০১৫ সালে ছয় বিশ্ব শক্তির সঙ্গে চুক্তির পরও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি এবং জনগণের দুর্দশা না কাটায় দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট রুহানির জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে বলে ভাষ্য পর্যবেক্ষকদের।