সিরিয়ার পূর্ব গৌতার পরিস্থিতি ‘কল্পনাতীত’

সিরিয়ার বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত গৌতার পূর্বাঞ্চলে সরকারি বাহিনীর কয়েকদিনের টানা বোমাবর্ষণের পর সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘ধারণাতীত’ হিসেবে অভিহিত করেছেন দেশটিতে জাতিসংঘের সমন্বয়ক পানোস মৌমজিস।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Feb 2018, 08:03 AM
Updated : 21 Feb 2018, 08:03 AM

বিবিসিকে তিনি বলেছেন, রাজধানী দামেস্কের কাছের এ এলাকায় আসাদবাহিনীর গোলাবর্ষণ ‘চরম যন্ত্রণাদায়ক’ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

এ দফার হামলায় বিদ্রোহীদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ওই এলাকাটিতে অন্তত আড়াইশ মানুষ নিহতের খবর পাওয়া গেছে। 

সিরীয় বাহিনীর দাবি, তারা পূর্ব গৌতাকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্ত করতে লড়ছে।

বিবিসি বলছে, রুশ সমর্থিত সিরিয়ার সরকারপন্থি বাহিনী রোববার রাত থেকে বিদ্রোহীদের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি পূর্ব গৌতা পুনরুদ্ধারে তৎপরতা বাড়ায়।

দামেস্কের কাছে পূর্ব গৌতাই বিদ্রোহীদের সর্বশেষ বড় ঘাঁটি। এখানকার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ইসলামপন্থি দল জঈশ-ই-ইসলাম। আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট সাবেক জিহাদি জোট হায়াত তাহির আল-শামও এলাকাটিতে বেশ সক্রিয়।

“নারী ও শিশুদের চিৎকার-কান্নার শব্দ তাদের বাড়ির জানালা দিয়ে শুনতে পাচ্ছি আমরা। ক্ষেপণাস্ত্র ও মর্টার পড়ছে যেন বৃষ্টির মতো। এই দুঃস্বপ্ন থেকে পালানোর জায়গা নেই, এটি শেষও হয় নি,” বলেন পূর্ব গৌতার অধিবাসী ফিরাস আব্দুল্লাহ।

আসাদবাহিনীর সমর্থক হিসেবে পরিচিত রাশিয়া ও ইরানের পাশাপাশি তুরস্কের অ্যাখ্যা দেওয়া এ ‘ডি-এস্কেলেশন জোনে’ ২০১৩-র রাসায়নিক হামলার পর এবারের বোমাবর্ষণকেই সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বলছেন এলাকাটিতে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরা।

তারা জানান, সরকারি বাহিনীর হামলায় নিহতদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৫০-রও বেশি; আহতের সংখ্যা প্রায় ১২০০। মঙ্গলবার পূর্ব গৌতার আরও ১০টি শহর ও গ্রামে সরকারি বাহিনী নতুন করে বোমাবর্ষণ করেছে বলেও দাবি তাদের।

মানবিক সাহায্য পৌঁছাতে এবং আহতদের সরিয়ে নিতে এলাকাটিতে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।

“মানুষের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই; তারা টিকে থাকার চেষ্টা করছে, কিন্তু অবরোধের কারণে সৃষ্ট ক্ষুধা তাদের আরও দুর্বল করে ফেলছে,” ইউনিয়ন অব মেডিকেল কেয়ার অ্যান্ড রিলিফ অর্গানাইজেশনকে এমনটাই বলেন স্থানীয় এক চিকিৎসক।

জাতিসংঘের এক মুখপাত্র সোম ও মঙ্গলবার পূর্ব গৌতায় সরকারি বাহিনীর হামলায় অন্তত ছয়টি হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এ ধরনের হামলা যুদ্ধাপরাধের পরিমাণ বাড়াতে পারে বলে সতর্ক করেছেন মৌমজিস।

বিবিসি বলছে, গত বছরের নভেম্বরের শেষ থেকে সিরিয়ার সরকার পূর্ব গৌতায় প্রতিদিন একটি করে কনভয়কে মানবিক সেবা দিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার পরও ভয়াবহ খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

এলাকাটিতে রুটির দাম দেশটির অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় প্রায় ২২ গুণ বেশি হয়ে গেছে, পাঁচ বছরের নিচে অন্তত ১২ শতাংশ শিশু ভুগছে ভয়াবহ অপুষ্টিতে।

বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এ সর্বাত্মক লড়াইয়ের পাশাপাশি তুর্কি বাহিনীকে ঠেকাতে উত্তরের কুর্দি এলাকা আফরিনেও প্রবেশ করেছে সরকার সমর্থিত বাহিনী।  

সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে কুর্দিদের সরিয়ে দিতে কয়েক সপ্তাহ আগে সীমানা পেরিয়ে সিরিয়ার আফরিনে প্রবেশ করে তুর্কি বাহিনী। মঙ্গলবার আফরিনে আসাদসমর্থিত বাহিনীর অগ্রবর্তী দলকে ছত্রভঙ্গ করতে তাদের লক্ষ্য করে গোলা ছোডার কথাও জানিয়েছে আঙ্কারা।

আঙ্কারা সিরিয়ার স্বায়ত্তশাসিত ওই এলাকা থেকে কুর্দি গেরিলাদের নির্মূলে কয়েক সপ্তাহ ধরে অভিযান চালিয়ে আসছে। তুর্কি অভিযান মোকাবেলায় কুর্দি ওয়াইপিজি গেরিলারা পরে সিরীয় বাহিনীর সহায়তা কামনা করে।

ওয়াইপিজির অনুরোধে সাড়া দিয়ে মঙ্গলবার সিরিয়ার সরকার সমর্থক বাহিনী তুরস্ক সীমান্তের দক্ষিণে কুর্দি অধ্যুষিত এলাকা আফরিনের প্রবেশ করে।

তুরস্কের এ অভিযানকে সার্বভৌমত্বের ওপর ‘নির্লজ্জ আক্রমণ’ অ্যাখ্যা দিয়েছে সিরিয়া; সিরীয় বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি হলেও আঙ্কারা বলছে, তারা অভিযান থেকে পিছু হটবে না।

রুশ বিমান হামলা ও ইরান সমর্থিত আধাসামরিক বাহিনীর সহায়তায় আসাদ সমর্থিত বাহিনী সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ইদলিবেও বিরোধীদের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

গত ডিসেম্বর থেকে অব্যাহত ওই হামলায় ইদলিবের তিন লাখেরও বেশি অধিবাসী বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।