সাক্ষীদের হুমকি দিয়েছিল কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত অক্সফাম কর্মীরা

হাইতিতে যৌন অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত তিন অক্সফামকর্মী ২০১১ সালের ঘটনা তদন্তের সময় সাক্ষীদের মারধরের হুমকি দিয়েছিলেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Feb 2018, 04:33 PM
Updated : 19 Feb 2018, 04:33 PM

যুক্তরাজ্যের দাতব্য সংস্থা অক্সফামের অভ্যন্তরীন তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে চাপের মুখে সোমবার এ গোপন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অক্সফাম।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে বিবিসি’কে বলেছেন, “অক্সফামের অভ্যন্তরীন তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের সাক্ষীকে  হুমকি দেওয়ার যে তথ্য পাওয়া গেছে; তা ভয়ঙ্কর।”

“আমরা ঠিক এ সমস্যাটাই দেখতে পাই। এর মানে হচ্ছে, মানুষে এ কারণে প্রায়ই তাদের সঙ্গে কি হয়েছে তা প্রকাশ করতে সামনে এগিয়ে আসার সাহস পায় না।”

অক্সফামের প্রায় ১০ হাজার কর্মী বিশ্বের ৯০টির বেশি দেশে কাজ করছে।

২০১১ সালে হাইতিতে ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতিতে  সেখানে ত্রাণ কাজ করতে যাওয়া অক্সফামের কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নসহ অন্যান্য অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগ তদন্তে উঠে এসেছে।

চলতি মাসে ব্রিটেনের ‘টাইমস’ পত্রিকা হাইতিতে নিযুক্ত অক্সফামের কান্ট্রি ডিরেক্টর ও কর্মীদের যৌন কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশের পর সংস্থাটিতে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। চাপের মুখে এবার নতুন সম্পাদিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে অক্সফাম জানিয়েছে, তারা তাদের নেওয়া সিদ্ধান্ত সম্পর্কে যতটা সম্ভব পরিষ্কার থাকতে চায়।

বিবিসি জানায়, সাক্ষীদের হুমকি দেওয়া অভিযুক্ত কর্মীদের পরিচয় গোপন রাখতে ১১ পৃষ্ঠার েএ প্রতিবেদনের কিছু অংশ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে সোমবার অক্সফাম হাইতি সরকারের কাছে অসম্পাদিত প্রকৃত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করবে এবং ভুলের জন্য ক্ষমাও চাইবে।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনার বিষয়টি নিয়ে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপে পড়েছে অক্সফাম। সংস্থাটির নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে হাইতিতে সাত অক্সফামকর্মী তাদের আচরণের জন্য সংস্থা ত্যাগ করেছে।

অক্সফামের ভাড়া করা ভবনে যৌনকর্মী নিয়ে আসার কারণে এক কর্মীকে বরখাস্ত করা হয় এবং  ৩ জন পদত্যাগ করে। এসব ঘটনায় অল্পবয়সী যৌনকর্মী ব্যবহারের বিষয়টিও উড়িয়ে দেওয়া হয়নি।

এছাড়া, হুমকি-ধামকি ও ভীতি প্রদর্শনের জন্য আরও দুজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের একজন পর্নোগ্রাফিও ডাউনলোড করেছিল। কর্মীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য আরেকজনকে বরখাস্ত করা হয়।

প্রতিবেদনে অক্সফাম জানায়, ২০১১ সালে অক্সফামের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে রোনাল্ড ভন হওয়ারমেরিন হাইতিতে দায়িত্ব পালনকালে প্রতিষ্ঠানের দেওয়া বাসভবনে যৌনকর্মী ভাড়া করে নিয়ে আসার কথা স্বীকার করেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে। কিন্তু গত সপ্তাহে তিনি যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য যৌনকর্মীকে অর্থ দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাকি তদন্ত শেষ করতে পূর্ণ সহায়তা করার শর্তে ভ্যান হওয়ারমেরিনকে ধাপে ধাপে মর্যাদার সঙ্গে সরে যাওয়া এবং পদত্যাগের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তবে সাক্ষীদের যারা হুমকি দিয়েছে তাদের মধ্যে তিনিও ছিলেন কিনা তা জানা যায়নি।

প্রতিবেদনে অক্সফাম আরো বলেছে, “সমস্যা সৃষ্টিকারী কর্মীদের অন্যান্য দাতব্য সংস্থায় কাজ করা ঠেকাতে আরো বেশি ‍কিছু করা প্রয়োজন।”

যৌন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত অক্সফাম কর্মীরা সতর্কবার্তার পরও অন্যান্য দাতব্য সংস্থায় উচ্চপদে কাজ করেছেন। যাদের একজন রোনাল্ড ভন হওয়ারমেরিন (৬৮)। 

তদন্ত চলাকালে নিজের অপরাধ স্বীকার করে চাকরি ছাড়ার পরও হওয়ারমেরিন ২০১২-১৪ মেয়াদে ফরাসি দাতব্য সংস্থা অ্যাকশন এগেইনস্ট হাঙ্গারের বাংলাদেশ মিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তবে অ্যাকশন এগেইনস্ট হাঙ্গারের দাবি, তারা হওয়ারমেরিনের ব্যাপারে কয়েকবার যাচাই-বাছাই করতে চাইলেও কোনো নেতিবাচক বার্তা পায়নি।