রোহিঙ্গা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনায় মিয়ানমারের সমালোচনা

রোহিঙ্গা প্রশ্নে নিরাপত্তা পরিষদে এক আলোচনায় সদস্য দেশগুলোর সবাই মিয়ানমারের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2018, 05:39 AM
Updated : 14 Feb 2018, 05:39 AM

মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এই উন্মুক্ত আলোচনায় নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসাও করা হয়।

সাড়ে তিন ঘণ্টার এই আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, বলিভিয়াসহ ১২টি দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। সভাপতিত্ব করেন কুয়েতের রাষ্ট্রদূত শেখ সাবাহ খালিদ আল হামাদ।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্দি সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠকে যোগ দিয়ে আলোচনার সূত্রপাত ঘটান।

তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে সৃষ্ট এ সঙ্কটের সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে।

১০ লাখের মতো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই কথা বলে আসছেন।

বক্তব্য রাখছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি

গত ৬ মাসে ৬ লাখ ৮৮ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গার বাংলাদেশ আশ্রয় পাওয়ার তথ্য জানিয়ে গ্রান্দি বলেন, শরণার্থীদের নিরাপদে নিজ আবাস ভূমিতে প্রত্যাবর্তনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আন্তরিক অর্থে সোচ্চার হওয়া দরকার।

এই দফায় আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও প্রত্যাবাসন এখনও শুরু হয়নি। রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আগে তাদের ফেরানোর ক্ষেত্রে আপত্তি রয়েছে জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর। 

 জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব মিরোস্ল্যাভ জেনকা বলেন, রাখাইন প্রদেশে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে, সেখানে জাতিসংঘ কর্মকর্তাসহ অন্যদের প্রবেশাধিকার দিতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিতে হবে মিয়ানমার সরকারকে।

মিরোস্ল্যাভ বলেন, “ইতোমধ্যেই ঘটে যাওয়া নৃশংসতার অনেক ঘটনাই ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।  এখনও যারা পৈত্রিক ভিটেমাটি আঁকড়ে রাখার চেষ্টায় রয়েছেন, সেই রোহিঙ্গারা কী ধরনের হুমকি-ধমকি সহ্য করছেন, সেটিও খতিয়ে দেখার অবকাশ রয়েছে।”

যুক্তরাজ্যের স্থায়ী প্রতিনিধি নিকি হ্যালি মিয়ানমারে গ্রেপ্তার দুই সাংবাদিকের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

সভা শেষে বাইরে প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন-মোমেন

যুক্তরাজ্যের মার্ক ফিল্ড, রাশিয়ার সের্গেই ল্যাভরব, পোল্যান্ডের এন্ড্রেজেজ ডুডা, কাজাখস্তানের নূরসুলতান নজরবায়েভসহ অন্যরাও মিয়ানমারের ভূমিকার সমালোচনা করে রাখাইনে শান্তি ফেরাতে কফি আনান কমিশনের সুপারিশগুলোর পূর্ণ বাস্তবায়ন দাবি করেন।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও তিন বলেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, মিয়ানমার সরকার দুটি অভ্যর্থনা কেন্দ্র খুলেছে এবং শিবিরও স্থাপন করেছে। কিন্তু তাতে রোহিঙ্গারা আস্থা পাচ্ছে না।

“রোহিঙ্গারা নাগরিক অধিকারসহ নিরাপদে নিজ পৈত্রিক আবাসে ফিরে চাষাবাদ করতে চায়। অবাধে চলাফেরা ও সভা-সমিতি করার অধিকার চায়। এগুলো মৌলিক অধিকার বিধায় বিশ্বসভাকে তা বিবেচনা করতে হবে।”

রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, “নিরাপত্তা পরিষদ খুবই গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেই এ আলোচনার পর শুধু সদস্যদের জন্য আরেকটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছে। সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা করছি।”

প্রতিবেশী দেশ হিসেবে মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক রেখেই রোহিঙ্গা সঙ্কটের অবসান ঘটানোর পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থানের কথা জানান মাসুদ মোমেন।

তিনিও বলেন, “এই সঙ্কটের শেকড় মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও মিয়ানমারে নিহিত।”

তিনি আশা প্রকাশ করেন, জাতিসংঘ মহাসচিব শিগগিরই মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত নিয়োগ দেবেন এবং তার মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারিত হবে।