নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের পক্ষে ইসরায়েলি পুলিশ

ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত বলে মন্তব্য করেছে ইসরায়েলি পুলিশ বিভাগ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2018, 05:21 AM
Updated : 14 Feb 2018, 05:21 AM

মঙ্গলবার দেওয়া বিবৃতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত এ বাহিনী জানায়, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ঘুষ, জালিয়াতি ও বিশ্বাসভঙ্গের পৃথক দুটি মামলায় অভিযোগ গঠন করার মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ তাদের হাতে আছে।

পুলিশের এসব অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ অ্যাখ্যা দিয়ে নেতানিয়াহু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বলে খবর বিবিসির।

আগের বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মতো এগুলোও ‘কোনো কিছু ছাড়াই শেষ হবে’ বলেও মন্তব্য তার।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের একটিতে বলা হচ্ছে, নেতানিয়াহু তার সম্পর্কে ইতিবাচক প্রচারের বিনিময়ে গণমাধ্যম ইয়েদিয়ত আহারনতকে অন্যদের চেয়ে বেশি সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন।

একই ঘটনায় গণমাধ্যমটির সম্পাদক আরনন মোজেসের বিরুদ্ধেও অভিযোগ গঠিত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য পুলিশের।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নেতানিয়াহু ২০০৯ সাল থেকে হলিউডের প্রভাবশালী ব্যক্তি আরনন মিলচেন ও অন্যান্য সমর্থকদের কাছ থেকে অন্তত ১০ লাখ ইসরায়েলি মুদ্রা সমপরিমাণ উপহার নিয়েছিলেন বলেও অভিযোগে পুলিশের।

এসব উপহারের মধ্যে শ্যাম্পেন ও সিগার আছে বলে জেরুজালেম পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

মিলচানকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী এসব উপহার নিয়েছিলেন বলেও দাবি ইসরায়েলি এ গণমাধ্যমের।

একই অভিযোগে ফাইট ক্লাব, গন গার্ল ও দ্য রেভনেন্টের মতো নামকরা হলিউডি চলচ্চিত্রের প্রযোজক মিলচানকেও বিচারের মুখোমুখি করতে চায় ইসরায়েলি পুলিশ।

তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, উপহার নিয়ে নেতানিয়াহু হলিউডি প্রযোজককে আইনী সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। বিদেশফেরত কোনো ইসরায়েলি দেশে বসবাস শুরু করলে তাকে ১০ বছরের কর রেয়াত দেওয়ার যে সুযোগ আছে প্রধানমন্ত্রী তা মিলচানকে পাইয়ে দিতে সুপারিশ করেছিলেন।

যদিও অর্থ মন্ত্রণালয় পরে নেতানিয়াহুর এ প্রস্তাব আটকে দেয়।

অস্ট্রেলীয় ধনী জেমস প্যাকার জড়িত এমন এক ঘটনায় নেতানিয়াহুর জালিয়াতি ও বিশ্বাসভঙ্গেরও সন্দেহ করছে পুলিশ।

গত বছরের ডিসেম্বরে ইসরায়েলি সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল টেনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্যাকার তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে নেতানিয়াহু ও তার স্ত্রী সারাকে উপহার দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

এ নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে অন্তত ৭ বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলেও ভাষ্য দেশটির গণমাধ্যমের।

বিবিসি বলছে, পুলিশ চাইলেও দুর্নীতির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর বিচার শুরু হবে কিনা সে বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। কখনো কখনো এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে কয়েক মাসও লাগতে পারে।

এদিকে ইসরায়েলের বিচার মন্ত্রী আয়েলেত শেকেড বলেছেন, অভিযোগ দায়ের হলেই কোনো প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করতে বাধ্য নন।

ইসরায়েলি টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে নেতানিয়াহুও দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

আগামী বছরের নভেম্বরে দেশটিতে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। নেতানিয়াহু নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোটের অবস্থাও পলকা। যদিও টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতেই বলছিলেন, দুর্নীতির অভিযোগের কারণে জোটে ভাঙন কিংবা আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই।

“কয়েক বছর ধরে অন্তত ১৫ দফা অনুসন্ধান বা তদন্তের মুখোমুখি হয়েছি আমি। এর কোনো কোনোটি আজ (মঙ্গলবার) রাতের মত তীব্র পুলিশি সুপারিশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। যদিও এসব চেষ্টার ফল কিছুই হয়নি; এবারও তাদের এ চেষ্টা কোনো কিছু ছাড়াই শেষ হবে,” বলেন তিনি।

৬৮ বছর বয়সী নেতানিয়াহু এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আছেন; সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে তার অবস্থান ১২ বছরের। এ সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকদফা তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

দুই দশক আগে প্রথম দফা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে নেতানিয়াহু ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া উপহার রাষ্ট্রকে না দিয়ে নিজেদের কাছে রেখে দেওয়ার অভিযোগ এনেছিল পুলিশ।

২০১৫ সালের জুলাইয়ে এ দম্পতির বিরুদ্ধে তাদের ব্যক্তিগত কাজ করা এক ঠিকাদারের পরিষেবার বিল সরকারের নামে করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। দুটি অভিযোগই পরে তুলে নেওয়া হয়।