মঙ্গলবার রাতে সুপ্রিম কোর্টের অবশিষ্ট তিন বিচারক এক বিবৃতিতে ‘প্রেসিডেন্টের উত্থাপিত উদ্বেগের আলোকে’ আগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের এ ঘোষণা দেন বলে খবর বিবিসির।
সপ্তাহখানেক আগে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারক সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহামেদ নাশিদ এবং বিরোধী দলের ১২ এমপিকে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে বিচার করে কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনাকে ‘অসাংবিধানিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত’ বর্ণনা করে তাদের মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে ওই এমপিদের সংসদ সদস্যপদও বহাল ঘোষণা করেন তারা।
আদালতের ওই রায়ের পর মালদিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি (এমডিপি) নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট মালদ্বীপের ৮৫ সদস্যের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যায়।
প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিন সুপ্রিম কোর্টের আদেশ মানবেন না বলে জানিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য পার্লামেন্টের কার্যক্রম স্থগিত করে দেন। কারাদণ্ড পাওয়া ১২ এমপির মধ্যে নয় জন কারাভোগ করছেন। এছাড়া, স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা আব্দুল্লাহ সিনান ও ইলহাম আহমেদ রোববার দেশে ফেরার পর বিমানবন্দর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ইয়ামিন মিত্রদের আশঙ্কা ছিল, সুপ্রিম কোর্ট প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তার বা অভিশংসনের আদেশ দিতে পারে।
এ অবস্থায় সোমবার প্রেসিডেন্ট ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা জারি করলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারক আব্দুল্লাহ সাঈদ এবং অন্য আরেক বিচারপতি আলী হামীদকে গ্রেপ্তার করে। প্রায়ই একসময়ে ইয়ামিনের সৎভাই ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গাইয়ুমকেও আটক করা হয়।
এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের বাকি বিচারপতিরা আগের আদেশ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
ইয়ামিন বলছেন, তার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের তদন্ত করতেই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
“বিচারকদের বিরুদ্ধে তদন্তের অন্য কোনো পথ না থাকায় আমাকে জরুরি অবস্থা জারি করতে হয়েছে,” মঙ্গলবার টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে এমনটাই বলেন প্রেসিডেন্ট।
জরুরি অবস্থা জারির ফলে দেশটির সংবিধানে বর্ণিত নাগরিক অধিকারের বেশ কিছু বিধান এখন কার্যকর থাকবে না। নিরাপত্তা বাহিনীও বাড়তি ক্ষমতা ভোগ করবে।
২৬টি প্রবাল প্রাচীর ও ১১৯২টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত ভারত মহাসাগরের এ রাষ্ট্রে ভরা পর্যটন মৌসুমে জরুরি অবস্থা জারি ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ঘটনায় বিভিন্ন দেশও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, যুক্তরাজ্য, বাংলাদেশসহ অনেক দেশই দেশটিতে থাকা তাদের নাগরিকদের সতর্ক হয়ে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছে।
যদিও প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও জনগণের চলাফেরা, চাকরি বা ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর জরুরি অবস্থার প্রভাব পড়বে না।
অন্যদিকে বিরোধীরা বলছে, জরুরি অবস্থা জারি প্রেসিডেন্টের ‘মরিয়া ভাবের কথাই বলছে’।
সংকট সমাধানে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন শ্রীলঙ্কায় স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা মালদ্বীপের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ।
২০১৩ সালের নির্বাচনে বিরোধীদল এমডিপি-র এ নেতা বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের কাছে অল্প ব্যবধানে হেরে যান।
এর দুই বছর পর সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে নাশিদ ও ১২ এমপিকে কারাদণ্ড দেয় মালদ্বীপের আদালত, যে রায় নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেরও তীব্র আপত্তি ছিল।