তাইওয়ানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত ৭, নিখোঁজ ৬৭

তাইওয়ানের জনপ্রিয় পর্যটন শহর হুয়ালিয়েনের কাছে ৬ দশমিক ৪ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত সাতজন নিহত ও ২৬০ জন আহত হয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2018, 07:09 PM
Updated : 7 Feb 2018, 07:06 PM

মঙ্গলবার রাত ১১টা ৫০ মিনিটে উপকূলীয় ওই শহরটি থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে তাইওয়ানের পূর্ব উপকূলে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি ছিল বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা, খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।

অন্তত ৬৭ জন নিখোঁজ রয়েছে। এদের অনেকে ধসে পড়া ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে জীবিতদের খোঁজ করছেন উদ্ধারকারীরা। কেউ কেউ খালি হাতেই ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর মধ্যে একটি বহুতল আবাসিক ভবনও রয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা ভবনটির চারদিক ঘিরে রয়েছেন। ভবনটির জানালাগুলো ভেঙে পড়েছে এবং ভবনটি ৪০ ডিগ্রি কোণ করে ভূমিতে ঢুকে গেছে।

ভয়াবহ একটি ক্ষতিগ্রস্ত হোটেলের ভেতরও অন্তত দুজন আটকা পড়ে আছেন। আহতদের মধ্যে চীনের মূল ভূখণ্ডের বাসিন্দা, চেক প্রজাতন্ত্র, জাপান, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকও আছেন বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ভূমিকম্পের কারণে আগামী দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ৫ মাত্রার পরাঘাত হতে পারে বলে সরকার দ্বীপটির বাসিন্দাদের সতর্ক করেছে। বুধবার সকাল থেকেই ছোট ছোট পরাঘাত বাসিন্দাদের আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে।

হুয়ালিয়েনে প্রায় এক লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পের প্রবল ঝাঁকুনিতে শহরটির রাস্তাগুলো ভেঙে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শহরটির প্রায় ৪০ হাজার বাড়ি পানিবিহীন ও ছয় শতাধিক বাড়ি বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে।

এর মধ্য দিয়েই উদ্ধারকর্মীরা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বন্ধ করে দেওয়া রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্বিগ্নভাবে উদ্ধারকর্মীদের তৎপরতা লক্ষ করছেন।

সামরিক হাসপাতালের কাছে একটি রেস্তোরাঁ পরিচালনা করা লিন চিং ওয়েন বলেন, “ভূমিকম্পটি যখন হয় তখনও আমাদের রেস্তোরাঁ খোলা। আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানদের জাপটে ধরে দৌঁড়ে বাইরে বের হয়ে আসি, তারপর অন্যান্যদের উদ্ধারের চেষ্টা করি।”

রয়টার্সের ভিডিওতে ভূমিকম্পের পর তাইওয়ানের রাস্তায় বড় বড় ফাটল দেখা গেছে। ওই সময় পুলিশ ও জরুরি বিভাগের কর্মীরা সড়কে উদ্বিগ্ন মুখে ঘোরাঘুরি করা লোকজনকে সাহায্যের চেষ্টা করছিলেন। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে নিমজ্জিত একটি গাড়ির পাশে উদ্ধারকর্মীদের কাছাকাছি একটি ভবনের জঞ্জাল সরাতেও দেখা যাচ্ছিল।

বুধবার ভোররাতে দেশটির প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েন ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

“মন্ত্রিসভা এবং সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা চালু এবং দ্রুতগতিতে উদ্ধার কার্যক্রম শুরুর তাগিদ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট,” এক বিবৃতিতে বলেছে প্রেসিডেন্ট দপ্তর।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় চিপ নির্মাতা ও অ্যাপলের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর মেনুফ্যাকচারিং কোম্পানি প্রাথমিকভাবে ভূমিকস্পের কারণে তাদের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে।

তাইওয়ান একটি স্বশাসিত দ্বীপ, যেটিকে তার ভূখণ্ডের অংশ মনে করে চীন। দ্বীপটি দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলের কাছে হওয়ায় এখানে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। রোববারও কাছাকাছি এলাকায় ৬.১ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয়েছিল।

২০১৬ সালে তাইওয়ানের দক্ষিণাঞ্চলে শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে শতাধিক লোক নিহত হয়েছিল।