মালদ্বীপের সঙ্কট সমাধানে ভারতের হস্তক্ষেপ চান নাশিদ

মালদ্বীপে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধান এবং কারাবন্দি নেতাদের মুক্ত করতে ‘ভারতের হস্তক্ষেপ’ কামনা করেছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহামেদ নাশিদ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2018, 01:16 PM
Updated : 6 Feb 2018, 02:00 PM

আদালত-সরকার দ্বন্দ্বের জেরে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিন সোমবার রাতে জরুরি অবস্থা জারির মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দেশটির প্রধান বিচারপতি আবদুল্লাহ সাঈদ এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গাইয়ুমসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মালদ্বীপের প্রধান বিরোধী দল মালদিভিয়ান ডেমক্রেটিক পার্টির (এমডিপি) নেতা নাশিদ বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় স্বেচ্ছা নির্বাসনে আছেন।

টুইটারে এক বিবৃতিতে নাশিদ বলেন, “বিচারক, রাজনৈতিক বন্দি, সেইসঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গাইয়ুমকে মুক্ত করতে আমরা ভারত সরকারকে তাদের সেনাবাহিনী সমর্থিত প্রতিনিধি দলকে মালদ্বীপে পাঠানোর আহ্বান জানাচ্ছি। তাদের মালদ্বীপের মাটিতে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি।”

 

২০১৫ সালে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে কারাদণ্ড পাওয়া নাশিদ ও বিরোধী দলের আরও ১২ এমপিকে গত বৃহস্পতিবার মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেয় মালদ্বীপ সুপ্রিম কোর্ট। রায়ে তাদের বিচারকে ‘অসাংবিধানিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত’ বলা হয়।

কিন্তু মালদ্বীপ সরকার বিরোধীদলের নেতাদের মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানালে চলমান সঙ্কটের সূত্রপাত হয়।

কারাদণ্ড পাওয়ায় বিরোধী দলের ওই ১২ এমপির আসন শূন্য হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন তারা খালাস পাওয়ায় মালদ্বীপের ৮৫ সদস্যের পার্লামেন্টে এমডিপি নেতৃত্বাধীন বিরোধীদল সংখ্যাগরিষ্ঠ দলে পরিণত হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন মিত্রদের আশঙ্কা, সুপ্রিম কোর্ট তাকে গ্রেপ্তার বা অভিশংসনের আদেশ দিতে পারে।

যে কারণে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন শনিবার দেশটির পার্লামেন্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন।

তার এক দিন পরই দেশজুড়ে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।

নাশিদ বলেন, “আমরা অবশ্যই তাকে (প্রেসিডেন্টকে) ক্ষমতাচ্যুত করব। মালদ্বীপের জনগণ আন্তর্জাতিক অঙ্গন বিশেষ করে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এ বিষয়ে সাহায্যের অনুরোধ করছে।”

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ‘দ্য প্রিন্ট’ এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত সরকার মালদ্বীপের পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে, বিশেষ করে সেখানে অবস্থান করা ভারতীয়দের নিরাপত্তার বিষয়টি তারা নিশ্চিত করতে চাইছে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গাইয়ুমকে রাজধানী মালেতে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

সেইসঙ্গে ভারত তাদের স্ট্যান্ডিং অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সক্রিয় করেছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তারা।

এসওপির অর্থ ভারতের বিমান ও নৌসেনাদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যদিও সামরিক অভিযানের নির্দেশ এখনও আসেনি, কিন্তু আসলে কয়েকঘণ্টার মধ্যেই ভারতীয় বিমান ও যুদ্ধ জাহাজ মালদ্বীপে রওয়ানা হবে।

মালদ্বীপে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট নাশিদ। ২০১৩ সালের নির্বাচনে তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের কাছে অল্প ব্যবধানে হেরে যান।

অন্যদিকে, মামুন আব্দুল গাইয়ুম ৩০ বছর মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের সৎভাই।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও দেশটির নাগরিকদের মালদ্বীপ ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সেইসঙ্গে মালদ্বীপের সব পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কটের সমাধান করে জাতীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সেখানে চীনের প্রচুর বিনিয়োগ আছে।