কাবুলে ইন্টারকন্টিনেন্টালে হামলায় বহু নিহত

সেনাবাহিনীর পোশাক পরা বন্দুকধারীরা কাবুলের ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে হামলা চালিয়ে ৩০ জনেরও বেশি লোককে হত্যা করেছে ও বহু মানুষকে আহত করেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2018, 06:09 PM
Updated : 20 Jan 2018, 06:09 PM

তারা শনিবার রাতে হোটেলটিতে হামলা চালানোর পর সারারাত ধরে আফগান বিশেষ বাহিনীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যায়; এ ঘটনায় মোট হতাহতের সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েল মুখপাত্র ওয়াহিদ মাজরহ জানিয়েছেন, নগরীর সিটি হাসপাতালে ১৯টি মৃতদেহ নিয়ে আসা হয়েছে, এদের মধ্যে ছয়জনকে বিদেশি হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।

তবে গণমাধ্যমে সঙ্গে কথা বলার অনুমিত না থাকায় পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে দেশটির এক জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিহতের সংখ্যা ৩০ জনেরও বেশি এবং সংখ্যাটি আরো বাড়তে পারে।

নিহতদের মধ্যে হোটেলটির কর্মী ও অতিথিরা ছাড়াও হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

পাঁচ হামলাকারীর সবাই নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাজিব দানেশ।

ইউক্রেইনের রাজধানী কিয়েভ থেকে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাভলো ক্লিমকিন টুইটারে জানিয়েছেন, হামলায় ছয় ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছেন।

হোটেল ভবনটির কয়েকটি অংশে আগুন ধরার পর ১৫০ জনেরও বেশি অতিথি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এদের কেউ কেউ বিছানার চাদর ও জানালার পর্দা বেঁধে, জানালা দিয়ে ঝুলিয়ে উপরের তলাগুলো থেকে নেমে আসতে সক্ষম হন। আফগান বাহিনীগুলো অন্যান্যদের উদ্ধার করে।

আফগানিস্তানের বেসরকারি এয়ারলাইন ‘ক্যামএয়ার’ জানিয়েছে, তাদের প্রায় ৪০ জন পাইলট ও ক্রু, যাদের অনেকেই বিদেশি, হোটেলটিতে ছিলেন এবং তাদের মধ্যে প্রায় ১০ জন নিহত হয়েছেন।

নিহতদের মধ্যে ভেনেজুয়েলা ও ইউক্রেইনের লোক আছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম।

মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদের পাঠানো এক বিবৃতিতে হামলার দায় স্বীকার করেছে তালেবান। গোষ্ঠীটি ২০১১ সালেও একই হোটেল হামলা চালিয়েছিল।

এক বিবৃতিতে আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হামলার জন্য হাক্কানি নেটওয়ার্ককে দায়ী করেছে। তালেবানের এই উপদলটি শহর এলাকার লক্ষ্যস্থলগুলোতে হামলার জন্য কুখ্যাতি অর্জন করেছে।

আব্দুল রহমান নাসেরি নামের হোটেলটির এক অতিথি জানিয়েছেন, হোটেলটির হল থেকে সেনাবাহিনীর পোশাক পরা চার বন্দুকধারীকে দেখেছেন তিনি।

“পশতু ভাষায় চিৎকার করে তারা বলছিল, ‘ভালমন্দ কাউকেই জীবিত ছাড়বে না’। ‘গুলি করে সবাইকে মেরে ফেল,’ চিৎকার করে বলে আরেকজন,” বলেন নাসেরি।

“আমি দৌঁড়ে দ্বিতীয় তলায় আমার ঘরে যাই। জানালা খুলে একটি গাছ বেয়ে নেমে আসার চেষ্টা করি, কিন্তু ডাল ভেঙে নিচে পড়ে যাই। এতে পিঠে ব্যথা পাই ও আমার একটি পা ভেঙে যায়,” বলেন তিনি।

হামলার ঘটনা শেষ হয়েছে, কর্মকর্তারা এমন দাবি করলেও ঘটনাস্থল থেকে গুলির ও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

রোববার দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই হোটেল ভবনটি থেকে ঘন কালো ধোঁয়ার মেঘ বের হতে দেখা যায়।

আফগান পুলিশ ইউনিটগুলোর পাশাপাশি মার্কিন সামরিক বাহিনী সাঁজোয়া যান নিয়ে অভিযানে অংশ নিয়েছে।

কাবুলের হোটেলগুলোতে হামলা হতে পারে, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে এ ধরনের একটি সতর্কবার্তা জানানোর কয়েকদিনের মধ্যে হামলাটি চালানো হল।

হোটেল ম্যানেজার আহমেদ হ্যারিস নায়াব অক্ষত অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, হামলাকারীরা রান্নাঘরের মধ্যদিয়ে হোটেলটির প্রধান অংশে প্রবেশ করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, হামলাকারীরা হোটেলটির কয়েকজন কর্মী ও অতিথিকে জিম্মি করেছিল।

কাবুলে অধিকাংশ সরকারি ভবনের মতো ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলেও ব্যাপক সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল। কাবুলে একটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত ছয়তলা হোটেলটি বিদেশিদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়।

রোববার আফগানিস্তানে আরো দুটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর একটিতে পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত প্রদেশে রাস্তার পাশে পেতে রাখা একটি বোমার বিস্ফোরণে আটজন নিহত ও অপরটিতে উত্তরাঞ্চলীয় বাল্খ প্রদেশে একটি তল্লাশি চৌকিতে চালানো হামলায় স্থানীয় বেসামরিক বাহিনীর ১৮ জন সদস্য নিহত হয়েছেন।