‘ভারত ও ইসরায়েল এত কাছাকাছি আগে কখনো আসেনি’

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এখন ভারত সফরে৷ দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠক হয়েছে৷ সই হয়েছে নয়টি সমঝোতা চুক্তি৷ বলা হচ্ছে, দুদেশের সম্পর্ক শুধু জেরুজালেম প্রশ্নে আটকে থাকতে পারে না৷

>> ডয়চে ভেলে বাংলাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2018, 04:40 AM
Updated : 18 Jan 2018, 12:18 PM

ভারত ও ইসরায়েলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ২৫ বছরের মধ্যে উভয় দেশ একে অপরের এত কাছাকাছি এর আগে আর কখনো হয়নি বলে মনে করা হচ্ছে৷

প্রচলিত কূটনৈতিক প্রোটোকলের সব বিধি ভেঙে নয়া দিল্লি বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে গিয়ে যেভাবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, সেটা যেন বন্ধুত্বের এক প্রতীক হয়ে দাঁড়ালো৷

একই ঘটনা ঘটেছিল গত বছর প্রধানমন্ত্রী মোদী যখন ইসরায়েল সফরে গিয়েছিলেন।  সেখানেও মোদী-নেতানিয়াহুর আলিঙ্গন৷

একে অপরকে নাম ধরে ডাকা, সস্ত্রীক নেতানিয়াহুকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে নৈশভোজে আমন্ত্রণ করা- এই আন্তরিকতা, এই শরীরী ভাষা শুধু দু’দেশের নয়, দুই নেতার ব্যক্তিগত সম্পর্কেও যোগ করেছে নতুন মাত্রা৷

গত সোমবার দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠকের পর সই হয় বাণিজ্য, কৃষি, প্রতিরক্ষা, সাইবার নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, তেল ও গ্যাস খাতে সহযোগিতা, হোমিওপ্যাথি, মহাকাশ বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক।

ভারতের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আবার আলোচনা শুরু করার কথা বলা হয়েছে ইসরায়েলের তরফ থেকে হয়৷ আর ভারতও বলেছে, ইসরায়েলের বাণিজ্যের পথ মসৃণ করতে বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করতে তারা রাজি। 

বৈঠক শেষে উভয় প্রধানমন্ত্রী এক যৌথ বিবৃতিতে দেন৷ তাতে সন্ত্রাস দমনে যে-কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়৷ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, তিনি একজন বিপ্লবী নেতা, যিনি ভারতে বিকাশের এক বিপ্লব ঘটিয়েছেন৷

নেতানিয়াহু আর তার স্ত্রী সারাকে চরকা বোঝাচ্ছেন মোদী। ছবি: রয়টার্স

জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী করার প্রশ্নে জাতিসংঘে ইসরায়েলের বিপক্ষে ভারতের ভোট দেওয়ার প্রসঙ্গও নেতানিয়াহু তোলেন। তিনি বলেন, জেরুজালেম নিয়ে একটা ভোটে দু'দেশের সম্পর্ক বদলে যাবে না৷ এর বাইরে অনেক সহযোগিতার সুযোগ আছে৷

ইসরায়েলের সঙ্গে বন্ধুত্বের কারণে ফিলিস্তিন প্রশ্নে ভারতের অবস্থান বদলায়নি। ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর বলে আসছে, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনা আবার শুরু করা দরকার৷ দরকার আলোচনার মাধ্যমে সবার গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান৷

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে জেরুজালেম প্রসঙ্গেও বিস্তারিত আলোচনা হয়৷ তেল আবিব জানে, মোদী শিগগিরই পশ্চিম এশিয়া সফরে যাচ্ছেন। ফিলিস্তিনের রামাল্লাতেও তিনি যাবেন৷ ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি ভারসাম্যের নীতি বজায় রেখে চলেছে দিল্লি৷

মঙ্গলবার সকালে নয়া দিল্লি এসে পৌঁছান ২০০৮ সালের ২৬শে নভেম্বরের মুম্বাই হামলার প্রত্যক্ষদর্শী মোশে হলসবার্গ৷ সেই ভয়ঙ্কর দিনে হলসবার্গের বয়স ছিল মাত্র দু'বছর৷ ছিল মা-বাবার কোলে৷ মুম্বাইয়ের নরিম্যান হাউসে৷

সন্ত্রাসী হামলায় তার মা-বাবা মারা যায়৷ নানী নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিশুটিচকে কোনোমতে বাঁচাতে পারেন৷ এখন সে ১১ বছরের কিশোর৷

প্রধানমন্ত্রী মোদী তার ইসরায়েল সফরে হলসবার্গকে ভারতে আসতে বলেছিলেন৷ মুম্বাইয়ের নরিম্যান হাউসে আগামী বৃহস্পতিবার সে ২৬-১১ এর সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের স্মরণে একটি স্মৃতি ফলক উন্মোচন করবে৷

নয়া দিল্লিতে পৌঁছে নেতানিয়াহু তিন মূর্তি মার্গের স্মারক বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন৷ ওই রাস্তার নতুন নামকরণ হয়েছে ‘তিন মূর্তি হাইফা মার্গ'৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইসরায়েলের হাইফা শহরকে মুক্ত করতে লড়াই করেছিল ভারতীয় সেনারা৷

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এসেছেন শ' খানেক ইসরায়েলি কোম্পানির ১৩০ সদস্যের একটি বাণিজ্য প্রতিনিধিদল৷ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী আগ্রার তাজমহল দেখে যাবেন মুম্বাই এবং মোদীর রাজ্য গুজরাটে৷

ভারত ও ইসরায়েলের এই গলাগলির কি বিশেষ কোনো তাৎপর্য আছে?

উত্তরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানি প্রতীপ চট্টোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ট সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে ভারতের সৌহার্দের প্রতিফলন৷

দ্বিতীয়ত,  ভারত একটি শক্তিধর রাষ্ট্র হয়ে ওঠার দিকে ক্রমশ এগোচ্ছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে ভারত এককালে যেসব সামরিক সহায়তা পেত, এখন সেটা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের মতো দেশ থেকে পেতে চাইছে দিল্লি৷ ফলে ভারতের পররাষ্ট্র নীতির দিক থেকে এটাকে একটি বড় পদক্ষেপ বলে মনে করা যেতে পারে৷

তবে ভারতের নেহেরুপন্থি এবং বামপন্থি দলগুলো হয়ত আপত্তি তুলতে পারে, বলতে পারে ভারত তার পররাষ্ট্র নীতির স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলছে এবং সাম্রাজ্যবাদীদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে৷ কিন্তু তাত্ত্বিক দিক থেকে ভারত-ইসরায়েল বন্ধুত্বকে বাস্তববাদী চিন্তার ফসল বলেই মনে করছেন অধ্যাপক প্রতীপ চট্টোপাধ্যায়৷