‘বর্ণবাদী মন্তব্য’: অভিযোগকারী সিনেটরকে দোষারোপ ট্রাম্পের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে আনা বর্ণবাদী মন্তব্যের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ওভাল অফিসে অভিবাসন নীতিমালা নিয়ে সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকে তার বক্তব্যকে ‘সম্পূর্ণ ভুলভাবে’ উপস্থাপন করা হচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2018, 06:47 AM
Updated : 16 Jan 2018, 06:51 AM

সোমবার করা টুইটে তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী ডেমোক্রেট সিনেটর ডিক ডারবিনের বিরুদ্ধেও একহাত নিয়েছেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।

ট্রাম্প বলেছেন, তার বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করে ডারবিন তরুণ অভিবাসীদের নিয়ে নতুন চুক্তির সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন, মার্কিন সামরিক বাহিনীকে আঘাত দিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান একদল সিনেটর অভিবাসন নীতিমালা নিয়ে কথা বলতে গেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বেশ কয়েকটি আফ্রিকান দেশকে ‘নোংরা জায়গা’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন বলে ডারবিনের অভিযোগের প্রত্যুত্তরে ট্রাম্প এসব বলেন। 

“ডাকা বৈঠকে যেসব কথা হয়েছে সিনেটর ডারবিন সেগুলো সম্পূর্ণ ভুলভাবে উপস্থাপন করছেন। যেখানো কোনো ধরণের বিশ্বাসই নেই, সেখানে চুক্তি হতে পারে না। ডারবিন ডাকার সম্ভাবনা নষ্ট করলেন এবং আমাদের সামরিক বাহিনীকে আঘাত দিলেন,” টুইটারে মন্তব্য মার্কিন প্রেসিডেন্টর।

 

বিবিসি বলছে, ওভাল অফিসের ওই বৈঠক ছিল তরুণ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে থাকার সুযোগ নিয়ে। ওবামা আমলে হওয়া ডেফার্ড অ্যাকশান ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস (ডাকা) নামের এ চুক্তি বাতিলের পথে হাঁটছে ট্রাম্প প্রশাসন, যার ফলে ড্রিমার নামে পরিচিত প্রায় ৮ লাখ তরুণ অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে থাকার সুযোগ হারাবে।

এ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান সাংসদদের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে অস্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ হারানো আফ্রিকান নাগরিকদের প্রসঙ্গও ওঠে। ওইসময় ট্রাম্প হাইতি, এল সালভাদর ও হন্ডুরাসকে ‘নোংরা দেশ’ বলেন, অভিযোগ ডারবিন ও রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামের।

“কেন আমরা নোংরা দেশগুলো থেকে সব মানুষকে এখানে নিয়ে আসছি?,” প্রেসিডেন্ট এমনটাই বলেন বলে সাংসদদের বরাত দিয়ে জানায় মার্কিন গণমাধ্যমগুলো।

ট্রাম্প ওইসব দেশের পরিবর্তে নরওয়ের মতো দেশগুলো থেকে অভিবাসী নেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছিলেন, অভিযোগ সাংসদদের।

ট্রাম্পের এ মন্তব্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তোলপাড় শুরু হয়।  ডেমোক্রেটদের পাশাপাশি রিপাবলিকান মহল থেকেও মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা আসে। 

জাতিসংঘের এক মুখপাত্র এ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “বর্ণবাদী ছাড়া অন্য কেউ এ ধরণের শব্দ উচ্চারণ করতে পারত না।”

ট্রাম্পকে তার মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে বলে আফ্রিকান ইউনিয়নও। 

শুক্রবার ডারবিন বলেন, “হোয়াইট হাউজের ইতিহাসে ওভাল অফিসে বসে কোনো প্রেসিডেন্ট এমনটা বলতে পারেন তা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যা বলেছেন, তা অত্যন্ত বিদ্বেষপূর্ণ, নিষ্ঠুর ও বর্ণবাদী। তিনি বারবার ওই শব্দগুলো উচ্চারণ করেছিলেন।”  

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প বলেছিলেন, তার বক্তব্য ‘বেশ কঠিন’ ছিল, কিন্তু গণমাধ্যমগুলোতে যে শব্দ এসেছে, তিনি তা বলেননি।  নিজের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগও অস্বীকার করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

কেবল ডারবিন নয়, বৈঠকে থাকা রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আফ্রিকান দেশগুলোকে ‘নোংরা জায়গা’ বলার অভিযোগ এনেছেন। অন্য এক রিপাবলিকান সিনেটরকে তিনি বলেছেন, গণমাধ্যমগুলোতে বৈঠক সম্পর্কে যা ছাপা হয়েছে, তা ‘নির্ভুল’।

তার এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন বৈঠকে থাকা রিপাবলিকান সিনেটর ডেভির পারডু।  গণমাধ্যমে ট্রাম্পের বক্তব্য ‘বিস্তৃত অর্থে ভুলভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। 

আর রিপাবলিকান সিনেটর টম কটন জানিয়েছেন, বৈঠকে থাকলেও ট্রাম্প এ ধরণের ‘বিধ্বংসী ভাষা’ ব্যবহার করেছিলেন কিনা তা শুনতে পাননি তিনি।

সোমবার দলের এই দুই সিনেটরকে একহাত নিয়েছেন গ্রাহাম। বলেছেন, তার স্মৃতিশক্তি বিলুপ্ত হয়ে যায়নি।

“আমি জানি কি বলা হয়েছিল,” বলেন তিনি।

বৈঠকে থাকা অন্য তিনজন এ বিষয়ে এখনো মুখ খোলেননি বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।