দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট জিনে আল-আবিদিন বেন আলীর পদত্যাগের সপ্তম বার্ষিকী রোববার, এই উপলক্ষকে সামনে রেখে এক সপ্তাহ আগে থেকেই তিউনিসিয়াজুড়ে সরকার বিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়।
এ সময় আটশরও বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয় বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় জরুরি বৈঠকে বসে সরকার। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারের নতুন সংস্কার বিষয়ক পরিকল্পনা সংসদে জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানে অনুমোদিত হলেই কার্যকর হওয়া শুরু হবে।
২০১৮ সালের বাজেটে সরকার নতুন কর ও মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়ার পর দেশটিজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) দেশটির বাজেট ঘাটতি রোধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল।
বেন আলীর পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া সরকারগুলো দেশটির বেকারত্ব এবং দারিদ্রতা কমিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৫ সালে বিদেশিদের লক্ষ্য করে চালানো ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় বহু হতাহতের পর তিউনিসিয়ার গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন শিল্প ক্ষতির মুখে পড়ে, ওই ক্ষতি আর কাটিয়ে ওঠা যায়নি।
যে কারণে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও অর্থনৈতিক সঙ্কটে জর্জরিত সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের। গত বছরের শেষদিকে প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ চাহেদ বলেছিলেন, ২০১৮-ই হবে দেশের পার করা শেষ ‘কঠিন বছর’।
শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খলিফা চিবানি জানান, সপ্তাহব্যাপী বিক্ষোভে সহিংসতা, চুরি ও লুটতরাজ চালানোর অভিযোগে মোট ৮০৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
বিক্ষোভে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৯৭ সদস্যের আহত হওয়ার কথা জানালেও আন্দোলনকারীদের মধ্যে কতজন জখম হয়েছে তা জানাননি তিনি।
শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর তিউনিসিয়াজুড়ে এত বিরাট সংখ্যক মানুষকে আটক করার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছিল।
যদিও তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট বেজি সাইদ এসেবসি বিদেশি গণমাধ্যমগুলো বিক্ষোভকে ‘বড় করে দেখিয়ে’ তার দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার দায়ে অভিযুক্ত করেছিলেন।
বিদ্যমান সঙ্কট নিয়ে শনিবার তিনি রাজনৈতিক দল, শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়ন ও পেশাজীবি সংগঠনগুলোর সঙ্গে দুই ঘন্টা ধরে বৈঠক করেন। উত্তেজনা কমাতে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে সেখানে আলোচনা হয় বলে বিবিসি জানিয়েছে।
পরে তিউনিসিয়ার সমাজ বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মেদ ত্রাবেলসি জানান, সরকার কল্যাণ তহবিলের পরিমাণ ৭ কোটি ডলার পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
“প্রায় আড়াই লাখ পরিবারের ওপর প্রভাব ফেলবে এ কর্মসূচি, সুবিধা দেবে গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জনগণকে,” বলেন তিনি।
সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকার স্বাস্থ্যসেবা ও গৃহায়ন সুবিধা বাড়ানোরও পরিকল্পনা করছে বলে জানান ত্রাবেলসি; তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু জানাননি তিনি।