অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে ট্রাম্পের মুখে নোংরা কথা

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনপ্রত্যাশী কয়েকটি দেশের নাগরিকদের নিয়ে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2018, 05:09 AM
Updated : 12 Jan 2018, 05:16 AM

ওভাল অফিসে একদল সাংসদের সঙ্গে অভিবাসন নীতিমালা নিয়ে আলোচনায় বৃহস্পতিবার তিনি বলেন,“কেন আমরা নোংরা দেশগুলো থেকে এসব লোককে এখানে নিয়ে আসছি?”

হাইতি, এল সালভাদর ও আফ্রিকার দেশগুলো নিয়ে ট্রাম্পের এই অশ্লীল মন্তব্য ছিল বলে ওয়াশিংটন পোস্টের বরাত দিয়ে জানায় বিবিসি।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্য নিয়ে ডেমোক্রেট-রিপাবলিকান দুই শিবিরেই তীব্র সমালোচনার মধ্যে হোয়াইট হাউজ এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের পক্ষে সাফাই গেয়েছে।

“ওয়াশিংটনের কিছু রাজনীতিক বিদেশি দেশগুলোর হয়ে লড়াইয়ের পথ বেছে নিয়েছে; অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইচ্ছা সবসময়ই আমেরিকার জনগণের পক্ষে লড়াই করার,” বিবৃতিতে বলেন হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র রাজ শাহ।

মার্কিন বর্তমান প্রশাসন অন্য অনেক দেশের মতো মেধা-ভিত্তিক অভিবাসনে আগ্রহী বলেও মন্তব্য মুখপাত্রের।

“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমাদের দেশকে শক্তিশালী করতে স্থায়ী সমাধানের পথে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, যেন তাদেরই স্বাগত জানানো যায়, যারা আমাদের সমাজে অবদান রাখতে পারবেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে ও আমাদের মহান জাতির সঙ্গে একীভূত হয়ে যেতে পারবেন।”

অস্থায়ী, দুর্বল ও বিপজ্জনক পন্থায় নেওয়া অভিবাসী যারা পরিশ্রমী মার্কিনিদের ও বৈধভাবে অভিবাসী হওয়া নাগরিকদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে ট্রাম্প তাদের প্রত্যাখ্যান করতে চান বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট পার্টির একদল সাংসদ দ্বিপাক্ষিক একটি অভিবাসন নীতিমালা নিয়ে কথা বলতে গেলে ট্রাম্প অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে বিদ্বেষপূর্ণ এ মন্তব্য করেন। 

বৈঠকে ডেমোক্রেট সিনেটর রিচার্ড ডারবিন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ ও মহামারি আক্রান্ত দেশগুলোর নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে অস্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব প্রেসিডেন্টকে দেন বলে খবর মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর।

প্রত্যুত্তরে ট্রাম্প সাংসদদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ওইসব দেশ থেকে অভিবাসী না নিয়ে নরওয়ের মতো দেশগুলো থেকে নেওয়া।

সাউথ ক্যারোলাইনার রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, যদিও প্রেসিডেন্টের মন্তব্য নিয়ে পরে তাকে কিছু বলতে শোনা যায়নি।

বিবিসি বলছে, আফ্রিকান অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে ট্রাম্পের অশ্লীল মন্তব্য এবারই প্রথম নয়।

গত বছরের জুনে অভিবাসন নিয়ে এক বৈঠকে ট্রাম্প হাইতির নাগরিকদের ‘সবারই এইডস আছে’ মন্তব্য করেছিলেন বলে তিন সপ্তাহ আগে নিউ ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল।

ওভাল অফিসে বসে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে করা ট্রাম্পের মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। 

মেরিল্যান্ডের ডেমোক্রেট সাংসদ এলিজাহ কামিংস টুইটে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “ক্ষমার অযোগ্য এ মন্তব্যের নিন্দা জানাচ্ছি, যা প্রেসিডেন্টের অফিসের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে।”

একইদলের কৃষ্ণাঙ্গ সাংসদ সেডরিক রিচমন্ড এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ট্রাম্পের মন্তব্য ফের প্রমাণ করলো, তার মেইক আমেরিকা গ্রেইট অ্যাগেইন স্লোগান আদতে মেইক আমেরিকা হোয়াইট আ্যাগেইন এজেন্ডা।

সমালোচনা করছে রিপাবলিকানরাও। হাইতিয়ান-আমেরিকান একমাত্র সিনেটর উটাহ’র মিয়া লাভ ‘নির্দয়, বিভাজিত ও এলিটিস্ট’ মন্তব্যের জন্য ট্রাম্পকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে জানতে চাইলেও ওয়াশিংটনের সালভাদোরিয়ান দূতাবাসের মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

চলতি সপ্তাহে এক ঘোষণায় ট্রাম্প প্রশাসন আগামী বছরের মধ্যে তিন দশক ধরে অস্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করা সালভাদরের দুই লাখ লোককে দেশে ফিরে যেতে সময় দিয়েছে।

১৯৯১ সালে দেশটিতে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের প্রতিক্রিয়ায় সেখানকার নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের এই সুযোগ মিলেছিল।

সোমবার এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তিন দশক আগে সালভাদরের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বেশিরভাগ অবকাঠামোর মেরামত সম্পন্ন হয়েছে, তাই দেশটির নাগরিকদের আর যুক্তরাষ্ট্রে অস্থায়ীভাবে বসবাসের প্রয়োজনীয়তা নেই।

এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে অস্থায়ীভাবে বসবাস করা হাইতি ও নিকারাগুয়ার নাগরিকদের টেম্পোরারি প্রটেক্টেট স্ট্যাটাসও (টিপিএস) প্রত্যাহার করে নিয়েছে।