গোল্ডেন গ্লোবের লাল গালিচায় প্রতিবাদের কালো

নারীর প্রতি যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সবাইকে এক হওয়ার ডাক দিয়েছেন তারকা উপস্থাপক ও অভিনেত্রীরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2018, 08:36 AM
Updated : 8 Jan 2018, 09:00 AM

রোববার রাতে ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলসে মর্যাদাপূর্ণ গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডসের ৭৫তম আয়োজনে অনুপ্রেরণাদায়ী ও শক্তিশালী ভাষায় তাদের এ আহ্বান আসে।

মার্কিন চলচ্চিত্রাঙ্গনে ঝড় তোলা একের পর এক যৌন হয়রানি ও লাঞ্ছনার অভিযোগের মধ্যে এটাই ছিল হলিউডকেন্দ্রিক প্রথম কোনো পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।

যৌন হয়রানির শিকার নারীদের প্রতি সংহতি জানাতে তারকা অভিনেত্রীরা গোল্ডেন গ্লোবের লাল গালিচায় এসেছিলেন কালো রঙের পোশাক পরে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এবার সবচেয়ে বেশি চারটি পুরস্কার গেছে ‘থ্রি বিলবোর্ড আউটসাইড এবিং, মিসৌরি’ চলচ্চিত্রের ঘরে।  সেরা চলচ্চিত্র ও সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছে চলচ্চিত্রটি। যদিও অস্কারজেতা অভিনেত্রী ফ্রান্সিস ম্যাকডরমান্ডকে অনুষ্ঠানস্থলে দেখা যায়নি।

টেলিভিশন ক্যাটাগরিতে সবচেয়ে বেশি পুরস্কার পেয়েছে ‘বিগ লিটল লাইজ’। এই সিরিজে অভিনয়ের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন অভিনেত্রী নিকোল কিডম্যান, লরা ডের্ন ও আলেক্সান্দার স্কার্সগার্ড।

পারিবারিক সহিংসতার শিকার হওয়া এক নারীর ভূমিকায় অভিনয় করে রোববার রাতের প্রথম পুরস্কার জিতে নেন কিডম্যান। সহকর্মী, মেয়ে ও মাকে পুরস্কার উৎসর্গ করে কিডম্যান বলেন, “দারুণ, এটাই নারীর ক্ষমতা।”

প্রতিবছর মর্যাদাপূর্ণ এ পুরস্কারের সময় বিভিন্ন চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন সিরিজের প্রতি গণমাধ্যম ও সাধারণের আগ্রহ থাকলেও এবছরের মূল আকর্ষণ ছিল ‘মি টু’ ও ‘টাইমস আপ’ প্রচারাভিযান নিয়ে তারকাদের অভিমত।

হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার নারীদের প্রতি সংহতি জানাতে গত বছর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় ‘মি টু হ্যাশট্যাগ’ আন্দোলন।

পরে চলচ্চিত্র অঙ্গনসহ অন্যান্য পেশায় নারীর প্রতি হয়রানি ঠেকাতে তারকা অভিনেত্রীরা নেন নতুন উদ্যোগ- টাইমস আপ।

বেভারলি হিলসের গোল্ডেন গ্লোব আয়োজনে উপস্থাপক এবং পুরস্কারবিজয়ীদের মুখেও ছিল এ নিয়ে কথকতা।

উপস্থাপক সেথ মেয়ারস অনুষ্ঠানের শুরুতেই এ মুহূর্তে হলিউডের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে উপস্থিত সবাইকে সম্ভাষণ জানান।

“ভদ্রমহিলা এবং বাকি থাকা ভদ্রমহোদয়ণ- আপনাদের স্বাগতম। এটা ২০১৮। অবশেষে গাঁজা বৈধ হয়েছে, যৌন হয়রানি পারেনি। আজকের রাতে উপস্থিত প্রতিদ্বন্দ্বী পুরুষ অভিনেতারা, গত তিন মাসের মধ্যে এটাই প্রথমবার, এখন অন্তত আপনাদের নাম জোরে উচ্চারিত হলে আতঙ্কিত হবেন না।”

এ অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি আলোচনার সৃষ্টি করেছে অপরাহ উইনফ্রের ভাষণ। প্রথম কোনো কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ সেসিল বি ডেমিলে পুরস্কার নিতে এসে জনপ্রিয় এ টেলিভিশন উপস্থাপক বলেন, “আমাদের সবার কাছে থাকা সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হচ্ছে- সত্যি কথা বলা। পুরুষদের ক্ষমতার বিরুদ্ধে সত্য বলার সাহস করা নারীদের কথা শোনা কিংবা বিশ্বাস করা হত না বহুকাল। সে সময় পেরিয়ে গেছে। তাদের সময় পেরিয়ে গেছে। টাইমস আপ।”

দিগন্তে এখন নতুন দিন- অপরাহর এ কথায় দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে সমর্থন জানান উপস্থিত নারী-পুরষ সকলেই।

যৌন হয়রানি প্রতিরোধের ডাক ছিল ছিল লরা ডের্নের মুখেও। ‘বিগ লিটল লাইজ’ এর জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতার পর দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, আমাদের অনেককেই এসব সম্পর্কে কথা না বলতে শেখানো হয়েছিল।

“এটা ছিল নীরবতার সংস্কৃতি, সেটাই ছিল স্বাভাবিক। এখন হয়ত আমরা আমাদের সন্তানদের কথা বলতে শেখাব, যা ধূমকেতুর মত আমাদের সংস্কৃতির পুনর্জাগরণ ঘটাবে,” বলেন তিনি।